টানা আন্দোলনের পরে এই প্রথম কর্মসূচি ঘোষণা থেকে বিরত থাকছে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তবে এরই মধ্যে সরকার শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবি পুরোপুরি মেনে নিয়েছে। নবম থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত কোটা থাকছে মাত্র ৭ শতাংশ। ফলে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের সঙ্গে সঙ্গে জোরালো হচ্ছে ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার দাবিও। সরকারের কোটা সংস্কার মেনে নিয়ে আন্দোলন থেকে বিরত থাকছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও। তারা বলছেন, এখন ফের নতুন কোনো আন্দোলন কর্মসূচি নয়। ডাক দেওয়া হবে ক্লাসে ফেরার।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম কালবেলাকে বলেন, আপিল বিভাগের রায়ের প্রতি আমরা ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছি। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষর করেছেন, আশা করছি আজকের মধ্যেই পরিপত্র জারি হবে। সেক্ষেত্রে আমরা পরবর্তীতে কী করতে পারি, সেটি নিয়ে আলোচনা করব। আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেব।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত একাধিক সমন্বয়কের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, কোটা সংস্কারের যে দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছিল, সেটা পূরণে তারা শতভাগ সফল হয়েছেন। যদিও এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে নানা ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি স্থাপনার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে। তবে আন্দোলনের সমন্বয়কদের দাবি, এসব সহিংস ঘটনার সঙ্গে শিক্ষার্থীরা জড়িত নন। এই আন্দোলনকে পুঁজি করে একটি গোষ্ঠী ফায়দা লুটতে চেয়েছিল। শিক্ষার্থীরা এসব রাজনৈতিক খেলার হাতিয়ার হতে চান না।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুনির হোসেন কালবেলাকে বলেন, আমাদের প্রাণের দাবি ছিল কোটা সংস্কার। সরকার কথা রেখেছে। আজকের মধ্যে পরিপত্র জারি হয়ে যাবে। এরপর এই কেন্দ্রিক আন্দোলন বা কর্মসূচি থাকলে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে। সেক্ষেত্রে আমাদের দাবি স্পষ্ট—ক্যাম্পাস খুলে দিয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, আন্দোলন করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ওই শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো দেখা। তাহলে শিক্ষকদের ওপরও আস্থা বাড়বে শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই সপ্তাহ ধরে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ। এ ছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ। সবকিছু মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা অনেকটা ঘরবন্দি জীবনযাপন করছেন। অনেক শিক্ষার্থী নানা ছোটখাটো কাজ, টিউশনি কিংবা অনলাইনের মাধ্যমে আয় করে পড়াশোনার খরচ চালান। এভাবে দিনের পর দিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় তাদের সেই আয়ে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই আর্থিক টানাপড়েনের কারণে দুশ্চিন্তা করছেন। তারা বলছেন, যত দ্রুত সম্ভব ক্যাম্পাসসহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া উচিত।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত আরেফিন শাকিল নামের একজন শিক্ষার্থী বলেন, আমরা যৌক্তিক আন্দোলনে ছিলাম। সরকার দাবি মেনে নিয়েছে। এখন আমাদের উচিত ক্লাসে ফেরা। কারণ এভাবে দিনের পর দিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকতে পারে না।
একই কথা বলেন বেসরকারি আইইউবির শিক্ষার্থী সাহেরা তমা। তিনি বলেন, আমরা যেমন সরকারের অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছি। দাবি মেনে নেওয়ায় এখন আমাদের উচিত ক্লাসে ফিরে যাওয়া। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন।
তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা কোটা সংস্কারে সামনের সারিতে থাকা সমন্বয়করাও বিষয়টি অনুধাবন করবেন। ফের নতুন কোনো কর্মসূচি নয়, ক্লাসে ফেরার ডাক দেবেন তারা।
মন্তব্য করুন