সরকারি সাত কলেজের চিরচেনা প্রাঙ্গণগুলো এখন খানিকটা নির্জন। শ্রেণিকক্ষ বন্ধ, করিডোরে নেই ভিড়, আর লাইব্রেরি ঘরেও নেই পাঠকের আনাগোনা। কারণ পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সাত কলেজে ঘোষণা করা হয়েছে টানা ১২ দিনের ছুটি। ব্যস্ত একাডেমিক ক্যালেন্ডারের ফাঁকে এই দীর্ঘ বিরতি যেন শিক্ষার্থীদের কাছে বহু কাঙ্ক্ষিত একটি নিশ্বাস ফেলার সুযোগ হয়ে এসেছে।
মঙ্গলবার (০৩ জুন) থেকে শনিবার (১৪ জুন) পর্যন্ত এই ছুটি চলবে বলে জানানো হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে ঈদের ছুটি, সরকারি ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা ১২ দিন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক ছুটির তালিকা অনুযায়ী ছুটির সময় নির্ধারণ করেছে সংশ্লিষ্ট কলেজ প্রশাসন। এরই মধ্যে সাতটি কলেজই পৃথকভাবে ছুটির নোটিশ প্রকাশ করেছে।
ছুটির ঘোষণা শোনার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে স্বস্তির ছাপ। ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন আর টার্ম ফাইনাল—এই চাপের মাঝে অনেকেই ঈদে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পেয়ে আপ্লুত।
সরকারি বাঙলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শিহাব আল নাসিম বলেন, সারা বছর ক্লাস আর অ্যাসাইনমেন্টের চাপে জীবন হয়ে উঠে যান্ত্রিক। এত দিনের ছুটি আমাদের মানসিকভাবে রিফ্রেশ হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। পরিবারকে সময় দেওয়ার সুযোগ খুবই দরকার ছিল।
শুধু সরকারি বাঙলা কলেজ নয়, একই চিত্র দেখা যাচ্ছে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, তিতুমীর কলেজ কিংবা সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝেও। কেউ বাড়ি ফিরছেন ট্রেনে, কেউবা লঞ্চে বা বাসে। কেউ আবার বন্ধুদের সঙ্গে শহরের বাইরে ঈদ কাটানোর পরিকল্পনা করছেন।
ছুটির সময়ে কলেজগুলোর একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। শিক্ষকরা এই সময়টাতে গবেষণা, আত্মউন্নয়ন বা পারিবারিক সময় কাটাতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন অনেকে। তবে ছুটির শেষ দিন পার হওয়ার পরই আবার মুখর হয়ে উঠবে সাত কলেজের ক্যাম্পাস।
কলেজ প্রশাসন জানিয়েছে, ছুটি শেষে আগামী ১৫ জুন (রোববার) থেকে যথারীতি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। তখন আবারও শুরু হবে শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের ক্লাস রুটিন, পরীক্ষার প্রস্তুতি আর নতুন পাঠ্যসূচির চাপ।
ঈদ শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং তা ঘরে ফেরার, পরিবারে ফেরার একটি আবেগের নাম। যারা বছরজুড়ে মেসে, হোস্টেলে কিংবা রুমমেটের সঙ্গে থাকেন, তাদের কাছে এই ছুটি যেন প্রিয়জনের সঙ্গে কিছু নিঃশর্ত সময় কাটানোর সুযোগ।
ইডেন মহিলা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি চট্টগ্রাম থেকে এসে ঢাকায় পড়ছি। ছুটি মানেই মা-বাবার মুখ দেখতে পারা। ঈদের সময়টুকু তাদের সান্নিধ্যে কাটাতে পারব ভেবে খুব ভালো লাগছে।
ছুটি ঘোষণার মধ্যে সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে স্বস্তি পেয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই সাতটি কলেজ হলো—ঢাকা কলেজ,ইডেন মহিলা কলেজ,সরকারি তিতুমীর কলেজ,বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ,শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ,কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি বাঙলা কলেজ
১২ দিনের এই ছুটি শুধু ঈদের জন্যই নয়, বরং শিক্ষার্থীদের ক্লান্ত মন ও শরীরকে একটু হালকা করে নেওয়ার সময়। প্রতিদিনের দৌড়ঝাঁপের মাঝখানে এই বিরতি যেন নতুন করে পথচলার অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে। আবার ১৫ জুন, ক্যাম্পাস জেগে উঠবে বই আর আলোচনার কোলাহলে। তবে আপাতত, ঈদের খুশিতে, পরিবার আর বন্ধুবান্ধবের হাসিতে মুখর হোক সাত কলেজের প্রতিটি হৃদয়।
মন্তব্য করুন