রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধি ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। মনোনয়ন, প্রচারণা, ভোটগ্রহণ এবং নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা ও বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে নীতিমালায়।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ আচরণবিধি প্রকাশ করা হয়।
বিধি অনুযায়ী, প্রার্থী নিজে অথবা তার মনোনীত প্রতিনিধি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে এ সময় কোনো ধরনের মিছিল, শোভাযাত্রা বা জনসমাগম নিষিদ্ধ থাকবে। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার সময় প্রার্থী সর্বোচ্চ পাঁচজন সমর্থক সঙ্গে রাখতে পারবেন। মনোনয়ন প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে প্রার্থীকে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে।
মনোনয়নপত্র দাখিল কিংবা প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা, প্রতিবন্ধকতা বা প্রভাব বিস্তারমূলক আচরণ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। অন্য কোনো প্রার্থী, সংগঠন বা গোষ্ঠী এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করলে তা নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে। কোনো প্রার্থীর ডোপ টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ না হলে তার প্রার্থিতা বাতিল হবে।
মনোনয়ন জমা, প্রত্যাহার বা প্রচারণায় কোনো ধরনের যানবাহন ব্যবহার, শোভাযাত্রা, শোডাউন বা মিছিল করা যাবে না। নির্বাচনের দিন ভোটার পরিবহনে যানবাহন নিষিদ্ধ, তবে প্রধান রিটার্নিং অফিসার বা প্রক্টরের অনুমোদিত স্টিকারযুক্ত যানবাহন ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের গাড়ি চলাচল করতে পারবে। প্রার্থী ও ভোটাররা নিজ উদ্যোগে ব্যক্তিগতভাবে বাইসাইকেল বা রিকশা ব্যবহার করতে পারবেন।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, সকল প্রার্থী সমানভাবে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে প্রচার চালাতে পারবেন। ভোটের ২৪ ঘণ্টা আগে প্রচার বন্ধ করতে হবে। শুধু প্রার্থী ও ভোটাররা প্রচারে অংশ নিতে পারবেন। ছাত্ররা ছাত্রীদের হলে এবং ছাত্রীরা ছাত্রদের হলে প্রচারের জন্য সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি সাপেক্ষে পরিচিতি সভায় প্রবেশ করতে পারবেন।
এ ছাড়া, কোনো ভবনের দেয়ালে পোস্টার লাগানো বা লেখালিখি করা যাবে না। ক্লাস, পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি করা যাবে না। মিছিল বা সমাবেশ করার আগে প্রক্টরের অনুমতি নিতে হবে। একাডেমিক ভবন ও শ্রেণিকক্ষে মিছিল বা প্রচার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। নির্বাচন চলাকালে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে নিজ নিজ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে এবং আবাসিক হলে কোনো বহিরাগত অবস্থান করতে পারবে না।
এতে বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী বা তার সমর্থকগণ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রচারে বাধা দিতে পারবেন না। কাউকে ভয়-ভীতি দেখানো, বলপ্রয়োগ করা বা ভোটদানে বাধা দেওয়া যাবে না। প্রচারপত্র বা সামাজিক মাধ্যমে এমন কোনো মানহানিকর, উসকানিমূলক ও অশালীন বক্তব্য দেওয়া যাবে না, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে। আবাসিক হলের ভেতরে কোনো মিছিল করা যাবে না এবং শুধুমাত্র প্রার্থী পরিচিতি সভাতেই মাইক ব্যবহার করা যাবে। কেউ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘ্নিত করলে বা আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে, তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভোটকেন্দ্রের আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, ভোটাররা নিজ নিজ আবাসিক হলের বৈধ পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করবেন। নির্বাচনী কর্মকর্তা, প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট এবং প্রধান রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক অনুমোদিত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না। সংশ্লিষ্ট সবাইকে পূর্বনির্ধারিত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, গণমাধ্যমকর্মীরা প্রধান রিটার্নিং অফিসারের পরিচয়পত্র প্রদর্শন এবং হল রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন, তবে বুথে প্রবেশ নিষিদ্ধ। ভোটকেন্দ্রে কোনো লাইভ সম্প্রচার, ভিডিও ধারণ বা ভোট কার্যক্রম বিঘ্নিত হতে পারে এমন কোনো কাজ করা যাবে না। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর মোবাইল ফোন ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ রাখতে হবে। বুথের অভ্যন্তরে এসব ডিভাইস ব্যবহার করে ছবি তোলা কিংবা ভিডিও করা যাবে না।
নির্বাচনের দিনে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলাসংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটার, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না। ভোটার স্লিপ প্রার্থী বা তার পক্ষের অন্য কোনো ভোটার বিতরণ করতে পারবে, তবে তা ভোটকেন্দ্রের ৫০ মিটারের বাইরে হতে হবে। এ ছাড়া, নির্বাচনী প্রচার ও ভোটগ্রহণ চলাকালে বিস্ফোরক, আগ্নেয়াস্ত্র এবং লাঠিসোটা, রড, হকিস্টিক, ছুরি-কাঁচি ইত্যাদি বহন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বা অনুমোদিত ব্যক্তিরা এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবেন।
এ ছাড়া, আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে প্রার্থিতা বাতিল ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার কিংবা প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে বলেও নির্বাচনী আচরণবিধিতে উল্লেখ রয়েছে।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর। বুধবার (২৮ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের তাজউদ্দীন আহমেদ সিনেট ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে রাকসুর তপশিল ঘোষণা করা হয়।
মন্তব্য করুন