কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৫৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

জাকসুর ভিপি, জিএস ও এজিএসের কার বাড়ি কোথায়

বাঁ থেকে নবনির্বাচিত ভিপি আব্দুর রশিদ জিতু, জিএস মাজহারুল ইসলাম, এজিএস (ছাত্রী) আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা ও এজিএস (পুরুষ) ফেরদৌস আল হাসান। ছবি : কালবেলা
বাঁ থেকে নবনির্বাচিত ভিপি আব্দুর রশিদ জিতু, জিএস মাজহারুল ইসলাম, এজিএস (ছাত্রী) আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা ও এজিএস (পুরুষ) ফেরদৌস আল হাসান। ছবি : কালবেলা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে স্বতন্ত্র প্যানেলের আব্দুর রশিদ জিতু ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের মাজহারুল ইসলাম নির্বাচিত হয়েছেন।

এ ছাড়া সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন (এজিএস-পুরুষ) ফেরদৌস আল হাসান ও (এজিএস-ছাত্রী) আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে সিনেট ভবনে এ ফল ঘোষণা করা হয়।

ঘোষিত ফলে দেখা গেছে, ভিপি পদে আব্দুর রশিদ জিতু পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৩৪ ভোট, জিএস পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের মো. মাজহারুল ইসলাম পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৩০ ভোট, এজিএস (পুরুষ) পদে ফেরদৌস আল হাসান পেয়েছেন ২ হাজার ৩৫৮ ভোট ও এজিএস (নারী) পদে আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা পেয়েছেন ৩ হাজার ৪০২ ভোট।

ভিপি আব্দুর রশিদ জিতু : আব্দুর রশিদ জিতু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৭তম ব্যাচ (মাস্টার্সের) শিক্ষার্থী। তার বাড়ি শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর গ্রামে। জিতু বিশ্ববিদ্যালয়ের গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক। জুলাই আন্দোলনের প্রথম থেকে সোচ্চার ছিলেন তিনি। এমনকি গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী শিক্ষার্থীদের স্বার্থে যৌক্তিক সব আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিলেন। মূলত জুলাই আন্দোলন থেকে তার জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের আগে জিতু ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও আন্দোলনের সময় সর্বপ্রথম ছাত্রলীগের হাতে মার খেয়ে আহত হন। পরবর্তী সময়ে আরিফ সোহেল আটক হলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে ‘ফার্স্ট ম্যান’ হিসেবে গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগরের আন্দোলন পরিচালনা করেন।

গতবছর আগস্টে সরকার পতনের দুমাস পর সমন্বয়কদের অপারগতা, ক্ষমতা কেন্দ্রীভূতকরণ, জনসম্পৃক্ততার অভাব, দোষী ও স্বৈরাচারের দোসরদের বিচারের আওতায় আনার ক্ষেত্রে অনীহা ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল স্পিরিটকে ধারণ করতে অক্ষমতার অভিযোগ এনে ১৭ জন সমন্বয়ককে নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যানার থেকে পদত্যাগ করেন আব্দুর রশিদ জিতু।

পরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক পদ থেকে পদত্যাগ করে ‘গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন’ নামে প্ল্যাটফর্মের সূচনা করেন। এ প্ল্যাটফর্ম থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিতেন তিনি।

জিএস মাজহারুল ইসলাম :

মাজহারুল ইসলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের (৪৮তম ব্যাচ) মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তিনি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার এলাকার বাসিন্দা এবং ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম মঞ্জুর বড় ছেলে।

মাজহারুল ২০১৬ সালে নোয়াখালী জেলা স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি, ঢাকার সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করে। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়। পড়ালেখার পাশাপাশি সে অনেক ধরনের সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া মাজহারুল ইসলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের অফিস ও প্রচার সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

এ ছাড়া আলোচিত জুলাইযোদ্ধা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের বড় ভাই জিএস মাজহারুল ইসলাম।

এজিএস (ছাত্রী) আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা :

আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের (৪৮ ব্যাচ) মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তিনি রাজধানী ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা। ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে এজিএস নির্বাচিত হয়েছেন মেঘলা।

মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে স্কুল জীবন শুরু তার। পরে হলিক্রস কলেজে ভর্তি হয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে ভর্তি হন।

আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সহসভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের সদস্য। নবনির্বাচিত এজিএস মেঘলা যুগান্তর স্বজন সমাবেশের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

এজিএস (পুরুষ) ফেরদৌস আল হাসান :

ফেরদৌস আল হাসান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের (৪৯ ব্যাচ) মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি পিরোজপুর সদর উপজেলায়। ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে এজিএস নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

ফেরদৌস শিক্ষাজীবন শুরু করেন গ্রামের কিন্ডারগার্টেন স্কুলে। স্কুল শেষ করে পিরোজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হাইস্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাস করেন। তারপর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে তিনি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের স্নাতকোত্তর পর্বের ছাত্র।

গ্রামে থাকাকালীন সাধারণ ছাত্রদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার ও বিভিন্ন সমাজসেবামূলক ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ফেরদৌস। পিরোজপুর জেলার রক্তদাতাদের নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ‘রক্তকণা’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া রেড ক্রিসেন্টের সদস্য, কলেজ জীবনে স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ও বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ এবং গরিবের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণসহ নানা সেবামূলক কাজ করেছেন।

‎বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই তিনি বিভিন্ন অন্যায়, অপশাসন ও অপরাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন। ছিলেন জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির একজন যোদ্ধা। একাডেমিক ফলাফলে সিজিপিএ ৩ দশমিক ৭০ পেয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করছেন প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা সংস্থা ‘ঐতিহ্য অন্বেষণ’-এ। অংশগ্রহণ করেছেন লিডারশিপ ও স্কিল ডেভলপমেন্ট বিষয়ক অনেকগুলো দেশি-বিদেশি সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে দীর্ঘদিন কাজ করেছে বাঁধনে। নিজে রক্ত দিয়ে ও সংগ্রহ করে কয়েকবার হয়েছে বাঁধনের বছর সেরা রক্ত দাতা ও সংগ্রহক। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক সেবামূলক সামাজিক সংগঠন রোভার স্কাউটের সঙ্গেও জড়িত। ২০২৪-২৫ সেশনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দায়িত্ব পালন করেছে সভাপতি ও সিনিয়র রোভার মেট হিসেবে।

২০২২-২৩ সেশনে ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (জাবি) এর কোষাধ্যক্ষ ও আইটি সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালব করছে এক্সপ্লোরার, জাবিতে।

প্রথম বর্ষ থেকেই যুক্ত ছিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর ইয়েস গ্রুপের সঙ্গে। এ ছাড়াও ক্যাম্পাসের লিও ক্লাবসহ নানা সামাজিক সংগঠনে দায়িত্ব পালন করছে। সদস্য পদ লাভ করেছেন আইসিওএম-আন্তর্জাতিক জাদুঘর পরিষদ, বাংলাদেশের।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ওইদিন রাত সোয়া ১০টা থেকে ভোট গণনা শুরু হয়, শেষ হয় শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে। পরে এদিন রাতে ফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

জাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৪৩ জন। এবার প্রায় ৬৭-৬৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। কেন্দ্রীয় সংসদে মোট ২৫টি পদে লড়েছেন ১৭৭ জন প্রার্থী। ভিপি পদে ৯ ও জিএস পদে ৮ জন প্রার্থী ছিলেন। ছাত্রীদের ১০টি আবাসিক হলে ১৫০টি পদের মধ্যে ৫৯টিতে কোনো প্রার্থী ছিলেন না। একজন করে প্রার্থী ছিলেন ৬৭টি পদে। সে হিসাবে মাত্র ২৪টি পদে ভোট নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলের মধ্য ২টি হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডাকসু-জাকসুতে নির্দিষ্ট সংগঠনকে জালিয়াতি করে জয়ী করেছে কর্তৃপক্ষ : রিজভী

রাজধানীতে হাফেজ্জী চ্যারিটেবলের দাওয়াহ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশের সুপার ফোরে যাওয়ার পথ দেখালেন হার্শা ভোগলে

বাবা-মা আমার সব কাজ দেখে : তৃপ্তি দিমরি

আল্লুর জন্য মুখে তুলা ঢুকিয়ে কণ্ঠ দিয়েছিলেন শ্রেয়াস

পাকিস্তানের বিপক্ষে যে একাদশ নিয়ে মাঠে নামতে পারে ভারত

এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসে নিয়োগ, আজই আবেদন করুন

বাবাকে হত্যার দায়ে ছেলের মৃত্যুদণ্ড

খেলাফত মজলিসের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

সাপ্তাহিক দুদিন ছুটিসহ এসিআইতে চাকরি

১০

আসছে জয়ার দুই সিনেমা

১১

রূপায়ণ গ্রুপে ম্যানেজার পদে চাকরির সুযোগ, দ্রুত আবেদন করুন

১২

চাকসু নির্বাচনে প্রথম মনোনয়নপত্র তুললেন তায়েফুল 

১৩

ভারত-পাকিস্তানে উত্তপ্ত মরু, পরিসংখ্যান কাদের পক্ষে

১৪

ট্রেন আটকে দিলেন অবরোধকারীরা

১৫

উপদেষ্টার সামনেই সরকারি গাড়িতে মিলল মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, অতঃপর...

১৬

চূড়ান্ত হলো বিসিবির নির্বাচনের তারিখ

১৭

মানুষের জন্ম হয়েছে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য : প্রধান উপদেষ্টা

১৮

জাকসুর ভিপি, জিএস ও এজিএসের কার বাড়ি কোথায়

১৯

এই ৪ ধরনের মানুষের জন্য রসুন ক্ষতিকর

২০
X