

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ ও রাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মারের বাগ্বিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে।
রোববার (৯ নভেম্বর) দুপুর ২টার দিকে রেজিস্ট্রারের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
ওই সময় রেজিস্ট্রারের কক্ষে রাজশাহী মহানগর এনসিপির নেতাকর্মীরা ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করছিলেন বলে জানা গেছে। সালাহউদ্দিন আম্মার রেজিস্ট্রার কক্ষে প্রবেশ করলে উভয়ের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, সালাহউদ্দিন আম্মার রেজিস্ট্রারকে বলেন, স্যার আমি ভেতরে আসব না? তখন রেজিস্ট্রার বলেন, তোমাকে আমি বাইরে ১০ মিনিট ওয়েট করতে বলেছি। তারপর আম্মার বলেন, স্যার আপনি চিঠি (ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সভাপতি অপসারণের চিঠি) আটকায় রাখছেন। তখন রেজিস্ট্রার বলেন, কীসের চিঠি আটকায় রাখছি আমি? তুমি কে ওই ডিপার্টমেন্টের? আম্মার বলেন, আমি কে মানে? আমি রাকসুর নির্বাচিত জিএস।
সালাউদ্দিন আম্মারের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে অধ্যাপক ইফতিখারুল বলেন, তোমরা কারা?, তারা উত্তরে বলেন, আমরা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তখন তিনি বলেন, তোমরা আসো। জিএস বলেন, ওরা কথা বলবে! আমিও তো শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি।
সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রার বলেন, তোমাদের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাকে প্রতিটা দিনের জন্য জবাবদিহি করতে হবে নাকি।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ফিসারিজ বিভাগের ডিন অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান মণ্ডলকে দেখিয়ে রেজিস্ট্রার বলেন, ডিন স্যার বাইরে ওয়েট করতেছিল। তুমি এর ভেতরে ঢুকেছ কেন? আম্মার বলেন, আমি ঢুকব না? আমি নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমি কেন ঢুকতে পারব না। রেজিস্ট্রার আম্মারকে বলেন, গেট আউট, আমার অফিসে আমার পারমিশন নিয়ে ঢুকতে হবে। যারা এখন অফিসে আছে ওনারা ১৫ দিন আগে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখছে।
জিএস আম্মার বলেন, আমার শিক্ষার্থীর অধিকার আগে, এটা ইমার্জেন্সি। আমাকে এখানে আসতে হবে। অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, অবশ্যই ইমার্জেন্সি। তোমাকে ওখানে বসতে (ওয়েট) বলেছি। তখন এনসিপির এক নেতা এসে আম্মারকে বলেন, আমরা এনসিপির নেতাকর্মী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগে টানা ২৩ দিন ধরে চেয়ারম্যান অপসারণের দাবিতে আন্দোলন চলছিল। গত বৃহস্পতিবার উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব ওই বিভাগের চেয়ারম্যানকে অপসারণের আদেশে স্বাক্ষর করে তা রেজিস্ট্রার দপ্তরে পাঠান। কাগজটি রোববার পর্যন্ত রেজিস্ট্রার দপ্তরে আটকে রাখা হয়। বিষয়টি জানতে আমি রেজিস্ট্রার অফিসে গেলে বাগ্বিতণ্ডা হয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজশাহী মহানগরের আহ্বায়ক মোবাশ্বের রাজ বলেন, কাকতালীয়ভাবে, খুবই অপ্রত্যাশিত ও বিব্রতকর পরিস্থিতির মাঝে পড়ে গেছি। সালাহউদ্দিন আম্মার ও রেজিস্ট্রার স্যারের সঙ্গে উত্তপ্ত বাগ্বিতণ্ডার সময় ওখানে অন্য দলের কেউ ছিল না। আমার উপস্থিতিতে রাজশাহী মহানগর এনসিপির নেতারা ছিল। আমরা ওখানে সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু রেজিস্ট্রার স্যারের পিএস সম্ভবত আমাদের অন্যদলের নেতাকর্মী ভেবে তাদের ইনফর্ম করে। এখান থেকে ভুল বোঝাবুঝির সূত্রপাত হয়।
রাবির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল ইসলাম মাসউদ বলেন, আমার দপ্তরে এলে সবাই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েই আসেন। তারাও (এনসিপি নেতাকর্মীরা) এক সপ্তাহ আগে থেকেই দেখা করার কথা বলে রেখেছিলেন এবং আজ সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন। এরই মধ্যে আরও কয়েকজন শিক্ষকও দেখা করতে এসেছিলেন। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ মিনিটের মতো ছিলেন তারা। ঠিক তখনই আম্মার আসে, আমি তাকে অপেক্ষা করতে বলি। দুই মিনিটও হয়নি, সে বিনা অনুমতিতে আমার রুমে ঢুকে পড়ে। আমি তখন তাকে বলি, তুমি বিনা অনুমতিতে আমার রুমে কেন ঢুকেছ? ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির বিষয়টিতে এখন আর শিক্ষার্থীদের কিছু করার নেই, যা করার সব প্রশাসনেরই সিদ্ধান্ত। আমি তাদের বলেছি রেডি হলে আজ পাবে; আর তা না হলে আগামীকাল পাবে। এর সঙ্গে আম্মারের যাওয়া না যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি আরও বলেন, সে ভালোভাবেই জানে সেখানে কারা ছিল। এসব বিষয়ে আম্মার আমাকে উত্তেজিত করতে থাকলে একপর্যায়ে আমি তাকে বের হয়ে যেতে বলি।
মন্তব্য করুন