পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) সিনিয়রদের দ্বারা এক ছাত্রী র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম শিমু রাণী তালুকদার। তিনি ইতিহাস বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী, তবে পুনঃভর্তি হয়ে বর্তমানে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সঙ্গে ক্লাস করছেন বলে জানা গেছে। শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী ক্যালিকো কটন মিলের পাশের সব্বেজ টাওয়ার নামক একটি মেসে এই ঘটনা ঘটে ।
ওই শিক্ষার্থীর কয়েকজন বন্ধু জানান, গত শনিবার রাত ৮টার সময় পরিসংখ্যান বিভাগের রুকাইয়া, সাদিয়া পারভিন সোমা, তাসলিমা, গুলনাহার, সুমাইয়া, সাকিলা, সুমাইয়া, লোকপ্রশাসন বিভাগের সায়েদা সুলতানা শাওন, ইংরেজি বিভাগের ইসরাত জাহান ইমুসহ মেসের কয়েকজন ইমিডিয়েট সিনিয়র আপু তাকে মেসের ছাদে ডেকে নিয়ে যান। তখন ওই সিনিয়র আপুরা তাকে আদব-কায়দা শেখানোর নামে মানসিকভাবে হেনস্তা করেন। রাত ১১টা পর্যন্ত চলে এ নির্যাতন। একপর্যায়ে শিমু অসুস্থ হয়ে যায়। এরপর ওই সিনিয়র আপুরা অ্যাম্বুলেন্স ডেকে তাকে পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য পাঠিয়ে দেয়। রোববার দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর ওই ছাত্রীকে তার বন্ধুরা মেসে নিয়ে আসেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শিমু রাণী তালুকদার বলেন, আমি অনেকদিন থেকে অসুস্থ। কিন্তু বেশ কয়েকদিন ধরে সিনিয়র আপুরা বিভিন্নভাবে আমার দোষ ধরে যাচ্ছেন। আমার ব্যবহার ভালো না, সালাম দেই না, সম্মান করি না এভাবে নানা বিষয়ে দোষ ধরতে থাকেন। গতকাল রাতে আমাকে ওনারা মেসের ছাদে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে আমাকে আদব-কায়দা শেখানোর নামে বকাঝকা করতে থাকেন। এরপর আমার শরীর খারাপ লাগলে আমি ওয়াশরুমে যাই কিন্তু ওনারা আমাকে ওয়াশরুম থেকে আবার ছাদে নিয়ে যায়। তখন আমি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
তিনি বলেন, আমি ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। রি-অ্যাডমিশন দেওয়ার কারণে আমি পুনরায় ১৫তম ব্যাচের সাথে ক্লাস করছি। সেক্ষেত্রে যারা আমাকে র্যাগ দিয়েছে তারা আমাকে আদব-কায়দা শেখানোর নামে কোনো দুর্ব্যবহার করতে পারে না। এ বিষয়টি জানার পরও তারা আমার সাথে কয়েকদিন ধরে দুর্ব্যবহার করছেন।
তবে ওই শিক্ষার্থীকে হেনস্তার বিষয়টি অস্বীকার করেন সিনিয়ররা। পরিসংখ্যান বিভাগের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রুকাইয়া ইসলাম বলেন, তাকে কোনোরকম মানসিকভাবে হেনস্তা করা হয়নি। আমরা শুধু মেসের নিয়মকানুন জানানোর জন্য সব জুনিয়রকে ডেকেছিলাম। শিমুর অসুস্থতার ব্যাপারে আমরা জানতাম না।
এ বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাবিবুল্লাহর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ওই শিক্ষার্থীর অসুস্থতার বিষয়ে জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু র্যাগিংয়ের বিষয়ে আমাকে ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।
শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর ড. কামাল হোসেন বলেন, আমি এ ব্যাপারে অবগত নই। আর কোনো অভিযোগও পাইনি। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আমাদের কাছে অভিযোগ করলে এ্যান্টি র্যাগিং কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হবে।
মন্তব্য করুন