বেরোবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৩৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

১৫ বছরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যত অর্জন

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : সংগৃহীত
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : সংগৃহীত

উত্তরের শিক্ষার বাতিঘর শিক্ষার্থীদের স্বপ্নে ভরা সবুজ আচ্ছাদনে আবৃত রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)। প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টি নানা ঘাত-প্রতিঘাত উপেক্ষা করে সুনাম কুড়িয়েছে বিশ্ব দরবারে।

বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ২০০৮ সালের এইদিনে বিশ্ববিদ্যালয়টির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। তবে ২০০৯ সালের ৪ এপ্রিল সব অনিশ্চয়তা কাটিয়ে ৩০০ শিক্ষার্থী ও ১২ জন শিক্ষক নিয়ে রংপুর শহরের ধাপ লালকুঠি এলাকায় শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে একাডেমিক কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম দিনে যারা যোগদান করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম দুজন শিক্ষক হলেন অধ্যাপক তাজুল ইসলাম ও তুহিন ওয়াদুদ।

প্রথম উপাচার্য লুৎফর রহমান অফিস শুরু করেন দুই ফুট বাই দুই ফুটের দুটি টেবিল জোড়া দিয়ে। তখন জনতা ব্যাংক লালবাগ শাখার ম্যানেজার এ অবস্থা দেখে ব্যাংকের পক্ষ থেকে ভালো মানের টেবিল-চেয়ারের ব্যবস্থা করেন। প্রথম উপাচার্য শুরুতে রিকশায় এসে অফিস করতেন। এ খবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পৌঁছালে তাকে একটি গাড়ি ভাড়া করে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ে চলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম।

২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুর শহরের লালবাগ ও মডার্ণ মোড় এর মাঝামাঝি এলাকায় ৭৫ একরের নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদের অধীনে ২২টি বিভাগে শিক্ষাদান কার্যক্রম চলছে।

শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ের সেই পরিত্যক্ত ভবন এখন শুধুই স্মৃতি। এখন স্থায়ী ক্যাম্পাসে চারটি একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, তিনটি হল, লাইব্রেরি, ক্যাফেটেরিয়া ও মসজিদ হয়েছে।

এখন আর উপাচার্যের ভাড়া করা গাড়ির প্রয়োজন হয় না। উপাচার্য নিজের গাড়ি ব্যবহার করেন। এখন পনের ব্যাচে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। ছয়টি অনুষদে ২২টি বিভাগে চলছে পাঠদান। ৩০০ শিক্ষার্থী ও ১২ জন শিক্ষক নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও এখন শিক্ষার্থী প্রায় আট হাজার এবং শিক্ষক ১৯৬ জন। অনেক বিভাগের শিক্ষার্থীরা পাস করে বিদেশে গেছে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করছে। অনেকেই চাকরির বাজারে নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দিচ্ছে।

গবেষণা ক্ষেত্রেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অদম্য অবদান রেখে চলেছে। ২০২৩ সালের সিমাগো রেংকিংয়ে সেরাদের মধ্যে তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৪ হাজার ৫৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। সব সূচকে দেশের সেরা ৩৯ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) অবস্থান ১১তম। আর গবেষণায় দেশ সেরা ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তৃতীয় স্থান ধরে রেখেছে।

২০১৩ সাল পর্যন্ত ক্যাম্পাসে কয়েকটি দেবদারু, কৃষ্ণচূড়া, বকুলগাছ ছাড়া আর কোনো গাছই ছিল না। বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান-সংস্থার কাছ থেকে প্রায় ৩৭ হাজার গাছের চারা নিয়ে কয়েকজন বৃক্ষপ্রেমী শিক্ষার্থী ও কর্মচারীর সহায়তায় সেগুলো রোপণ করা হয়। এখন বৃক্ষে শোভিত পুরো ক্যাম্পাস। এখন শুধু শিক্ষার্থীর নয় বাইরে থেকে অনেক পর্যটকও ঘুরতে আসে সবুজে মোড়ানো এই ক্যাম্পাসে।

এতসব অর্জনের মাঝে কিছু অসংগতিও আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের। এর মধ্যে অন্যতম হলো চরম শ্রেণিকক্ষ ও আবাসিক সংকট। সাবেক উপাচার্যের দুর্নীতির কারণে চার বছরের অধিক সময় ধরে থমকে আছে দশ তলা বিশিষ্ট একটি ছাত্রী হল, ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং স্বাধীনতা স্মারকের নির্মাণ কাজ। প্রতিষ্ঠার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোনো অডিটোরিয়াম ও জিমনেশিয়াম।

এছাড়াও নিজ নামের বিশ্ববিদ্যালয়ে অবহেলিত বেগম রোকেয়া। ক্যাম্পাসে নেই তার কোনো প্রতিকৃতি। সিন্ডিকেট সভায় রোকেয়া স্টাডিজ নামে কোর্স চালুর কথা বলা হলেও বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি।

এ পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ জন উপাচার্য এসেছেন। প্রথম উপাচার্য এক বছরও পূর্ণ করতে পারেননি। দ্বিতীয় উপাচার্য হিসেবে যিনি এসেছিলেন তাকে সীমাহীন দুর্নীতির দায়ে মেয়াদ পূর্তির আগে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। তার চলে যাওয়ার সময় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ছিল মাত্র ১৩০ টাকা।

তৃতীয় উপাচার্য মেয়াদ পূর্ণ করেন। চতুর্থ উপাচার্য হিসেবে নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ মেয়াদ পূর্ণ করলেও তার চলে যাওয়াটা কোনোভাবেই সম্মানজনক ছিল না।

তবে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদ যোগদানের পর বিশ্ববিদ্যালয়কে ইতিবাচকভাবে এগিয়ে নিতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। তার সুদক্ষ পরিচালনায় বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজটমুক্ত হয়েছে।শিক্ষার্থীদের বহুল প্রত্যাশিত মূল ফটকের নির্মাণ কাজ চলতেছে। তিনি কোনো রকম বিতর্কে না জড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, এটাই সবার প্রত্যাশা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিয়ের প্রলোভনে ‘ধর্ষণ’, পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার

পরীক্ষায় নকল সরবরাহ করতে যান ছাত্রদল নেতা, অতঃপর...

ছাত্রীদের হলে পুরুষ স্টাফ দিয়ে তল্লাশি

দাম কমলো ইন্টারনেটের

ইসরায়েলে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা কতটা উপযোগী, ভাবার অনুরোধ তারেক রহমানের

বৈষম্যবিরোধী নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ

জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

শাহজালালে বোয়িং বিমানে লাগেজ ট্রলির আঘাত

আখতারকে রংপুর-৪ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

১০

মধ্যরাতে বরখাস্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার

১১

‘একসঙ্গে সমুদ্রে নেমে তো গোসল করতে পারব না’

১২

জুলাই যোদ্ধার তালিকায় এক ব্যক্তির নাম ২ জায়গায়

১৩

বিএনপির অনুষ্ঠানে অপ্রীতিকর ঘটনায় মির্জা ফখরুলের প্রতিবাদ

১৪

রাজধানীতে শ্রমজীবী মানুষের মাঝে লায়ন্স ক্লাবের খাবার বিতরণ

১৫

জামায়াত-গণঅধিকার পরিষদের মতবিনিময় / নির্বাচনী জোট গঠনে একমত

১৬

উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, মাদ্রাসার সুপার কারাগারে

১৭

তারেক রহমান নেতৃত্ব না দিলে জুলাই আন্দোলন সফল হতো না : মুরাদ

১৮

চট্টগ্রাম নগরীতে ইউপিডিএফ সদস্য গ্রেপ্তার

১৯

‘প্রেমে ব্যর্থ হলে বাথরুম পরিষ্কার করি’

২০
X