নেকাব খুলতে না চাওয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থীর মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা) নেওয়া হয়নি। গত ১৩ ডিসেম্বর বিভাগটির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ভাইভায় এ ঘটনা ঘটেছে। পরে নেকাব খোলার শর্তে ভাইভা নিতে চাইলেও সে তা করতে অসম্মতি জানালে এখনো ওই শিক্ষার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নেননি বিভাগের শিক্ষকরা।
এ দিকে সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশিত হলে ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ। রোববার (২১ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের নিকট স্মারকলিপিও প্রদান করেন।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ ডিসেম্বর ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষের ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়। ভাইভা বোর্ডে হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি শিমুল রায়, পরীক্ষা কমিটির সভাপতি উম্মে সালমা লুনা ও বিভাগের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
বিভাগ সূত্রে আরও জানা যায়, ভাইভাতে নেকাব পরে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থীর পরিচয় নিশ্চিতের জন্য তাকে তা খুলতে বলেন বোর্ডে উপস্থিত শিক্ষকরা। এ সময় ওই ছাত্রী নেকাব খুলতে অসম্মতি জানান এবং প্রয়োজনে নারী শিক্ষকদের মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাকে ভাইভা বোর্ডের সব সদস্যের সামনে নেকাব খুলতে বলেন শিক্ষকরা। পরে তা না খুললে ভাইভা নেওয়া হবে না বলে জানান শিক্ষকরা।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, নেকাব না খোলায় সেদিন অন্য সবার ভাইভা নেওয়া হলেও আমাকে বাদ দেওয়া হয়। পরে নেকাব খুলে ভাইভায় অংশ নিলে আবারও তার তা গ্রহণ করা হবে বলে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। তবে ওই ছাত্রী পুরুষ শিক্ষকদের সামনে নেকাব খুলতে অসম্মতি জানালে এখনো পর্যন্ত তার ভাইভা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বিভাগীয় শিক্ষক ও ভাইভা বোর্ডের সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা তাকে নেকাব খোলার জন্য অনুরোধ করেছি। তাকে বুঝিয়েছি যে, ‘দেখো, আমরা তোমার ভাইভা নিচ্ছি তোমাকে আপডেট করার জন্য। চার বছর পর তুমি এভাবে চাকরির মৌখিক পরীক্ষায় গেলে লিখিত পরীক্ষায় ভালো করলেও তোমার চাকরি হবে না।’ এতেও সে রাজি না হওয়ায় পরীক্ষা কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে ভাইভা থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে আমরা কয়েক দফায় তার সঙ্গে কথা বলেছি কিন্তু সে তার অবস্থান থেকে ফিরে আসেনি।
পরীক্ষা কমিটির সভাপতি উম্মে সালমা লুনা বলেন, ভাইভা বোর্ডে আমরা তাকে বলেছিলাম সে আমাদের ছাত্রী তা প্রমাণ করার জন্য। কিন্তু সে প্রমাণ করতে পারেননি। নারী শিক্ষক দ্বারা পরিচয় নিশ্চিতের ব্যাপারে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বোর্ডের অন্য শিক্ষকরা আপত্তি জানিয়েছিলেন। তারা বলেছেন, ‘এভাবে করলে আমরা নাম্বার দেব না।’
হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি শিমুল রায় বলেন, এর আগে লিখিত পরীক্ষায় আমরা তাকে মহিলা শিক্ষক দ্বারা রিকগনাইজ করেছিলাম। ভাইভাতেও ফিমেল টিচার ছিলেন, কিন্তু সবসময় তো থাকে না, সেক্ষেত্রে আমরা কী করব? সে জায়গা থেকে আমরা তাকে অনুরোধ করছিলাম। কিন্তু সে তার অবস্থানে অনড় থাকায় তার পরীক্ষা নেওয়া হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ব ম সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ইসলামে নেকাব পরা ফরজ নয়। কিন্তু যেহেতু চেহারাটা গুরুত্বপূর্ণ সেক্ষেত্রে নেকাব করা উত্তম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহজাহান মন্ডল বলেন, কেউ তার ধর্মীয় জায়গা থেকে নেকাব ব্যবহার করতে চাইলে তাকে সে স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। বিভাগের পরীক্ষা ও ভাইভাতে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া মুখ্য বিষয়। সেক্ষেত্রে নারী শিক্ষকদের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করে ছাত্রীদের পরীক্ষা ও ভাইভাতে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া উচিত।
ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন বলেন, কেউ ধর্মীয় বিশ্বাসের জায়গা থেকে নেকাব করলে শিক্ষিকাদের দ্বারা তার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পরীক্ষা ও ভাইভাতে সুযোগ দেওয়া যায়। তবে ভাইভাতে যেহেতু আই কন্টাক্ট গুরুত্বপূর্ণ সেক্ষেত্রে মুখ খুলে অংশ নেওয়া ভালো কিন্তু জোর করা যাবে না। হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিষয়টি আমি জানি না। এ বিষয়ে জেনে তারপর বলতে পারব।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, শিক্ষকদের এ কাজটি করা উচিত হয়নি। আমাদের সামনেও অনেক সময় এ রকম শিক্ষার্থী থাকে, তবে আমরা সবসময়ই নারী শিক্ষকদের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের (শিক্ষকদের) শাস্তি হতে পারে।
মন্তব্য করুন