জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৪, ০৭:৩০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বাস আটকে জাবি ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি

গ্রাফিক্স : কালবেলা।
গ্রাফিক্স : কালবেলা।

বাস ভাড়া বেশি চাওয়ায় বাস আটকে ৩৫ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের কয়েক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। সোমবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি গেটে এ ঘটনা ঘটে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে বাসের টিকিট কাটতে নবীনগর গিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী সজীব মন্ডল। গাইবান্ধা রুটে চলাচলকারী আলহামরা পরিবহন সাধারণ সময়ের তুলনায় ভাড়া বেশি চাইলে প্রতিবাদ করেন তিনি। এ সময় বিষয়টি নিয়ে সেখানে বাগবিতণ্ডা হয়।

এ ঘটনা সজীব বিষয়টি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের বন্ধুদের জানালে হলের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে আলহামরা পরিবহনের একটি বাস আটক করে। পরে অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়ার বিষয়টি পাশ কাটিয়ে মারধরের অভিযোগ তুলে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা বাস কোম্পানির কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা চাঁদা নিয়ে বাস ছেড়ে দেন।

ঘটনাস্থলে থাকা ছাত্রলীগের একটি অংশ জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মাজেদুল ইসলাম সজীব, মাহমুদ আল গাজ্জালী, মো. হাসান মাহমুদ ফরিদ ও উপ কর্মসংস্থান সম্পাদক নাহিদ ফয়সালকে মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে দেখেছেন। টাকা নেওয়ার ঘটনা ঘটলে তারাই সেটি নিয়েছেন।

ইংরেজি বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী সজীব মন্ডল বলেন, গাইবান্ধায় গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য ৩ এপ্রিলের বাসের টিকিট কাটতে তিনি নবীনগরের আলহামরা পরিবহনের কাউন্টারে যান। ওই কোম্পানির ৮০০, এক হাজার এবং ১২শ টাকা মানের তিন ধরনের এসি বাস ঢাকা-গাইবান্ধা রুটে চলাচল করে। এরমধ্যে সজীব এক হাজার টাকার ইকোনমি ক্লাসের বাসের টিকিট চাইলে কাউন্টার মাস্টার জানান ওই টিকিটের দাম বেড়ে দুই হাজার টাকা হয়েছে। এ সময় তিনি ভাড়ার তালিকা দেখতে চান। একপর্যায়ে তার সঙ্গে থাকা মোবাইল ক্যামেরায় ঘটনা ভিডিও করতে শুরু করেন।

সজীব জানান, ভিডিও শুরুর পর কাউন্টার মাস্টার ভিডিও বন্ধ করতে বলেন এবং তাকে ভেতরে গিয়ে সব দেখতে বলেন যে কোম্পানির দেওয়া টিকিটের দুই হাজার টাকা। এ নিয়ে তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে আমাকে মারধর করা হয়। ঘটনাটি জানালে হল থেকে শিক্ষার্থীরা যেয়ে বাস আটক করে। কিন্তু চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি আমি জানি না।

আলহামরা পরিবহনের নবীনগর কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা জানান, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ঢাকা-গাইবান্ধা রুটের এসি বাসের টিকিট কাটতে আসেন। ওই রুটের ইকোনমি ক্লাস বাসের টিকিটের দাম স্বাভাবিক সময়ে এক হাজার টাকা থাকলেও ঈদে কোম্পানির পক্ষ থেকে তা বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা করা হয়। বেশি ভাড়ার কথা শুনে ওই শিক্ষার্থী টিকিটের দাম কমাতে বলে। কিন্তু কোম্পানি থেকে টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া তাই দাম কমানোর সাধ্য নেই বলে জানাই। কোম্পানি যে রেট দেয় আমাকে ওই রেটে বিক্রি করতে হয়।’

পরে ওই শিক্ষার্থী চলে যান বলে জানান আলহামরা পরিবহনের নবীনগর কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা। সেখানে কোনো মারামারি বা হেনস্তার ঘটনা ঘটেনি। টিকিটের দাম কমানো নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়েছে বলে জানান তিনি।

সাভার কাউন্টারের পরিবহন কর্মকর্তা মামুন বলেন, ‘আমাদের নবীনগর কাউন্টারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে টিকিটের দাম দিয়ে তর্কাতর্কি হয়। পরে সে সেখান থেকে চলে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস আটকায়। সন্ধ্যায় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলে আমার থেকে এক লাখ টাকা দাবি করা হয়, না হলে বাসে আগুন দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয়। পরে ৩৫ হাজার টাকায় সমাধান হয়। আমি টাকা পকেট থেকে বের করার পরই তা নিয়ে নেন ছাত্রলীগের নেতা নাহিদ।’

ওই নেতাকে আগে থেকে চিনতেন কি না জানতে চাইল মামুন বলেন, শুরু থেকেই তিনি আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, টাকা দাবি করেছেন। তখন তার নাম শুনেছি। যে হলের ছাত্রের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে তিনিও ওই হলের ছাত্র।’

তবে ছাত্রলীগের উপ কর্মসংস্থান সম্পাদক নাহিদ ফয়সাল টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘ইফতারের পর সোহেল ভাইসহ আমরা ডেইরি গেটে চা খাচ্ছিলাম। তখন একজন বাস আটকানো সম্পর্কে জানালে সোহেল ভাই আমার সিনিয়রদের বাস ছাড়ার বিষয়টি বললে তারা বাস ছেড়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। যদি কেউ চাঁদাবাজ প্রমাণ করতে পারে তাহলে আর রাজনীতি করব না।’

যদিও ঘটনার সময় ডেইরি গেটে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল উপস্থিত ছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, বাসের মালিক পক্ষ প্রথমে সভাপতির কাছে আসলে তিনি ঘটনার কোনো সুরাহা করতে পারবেন না বলে জানান এবং যারা বাস আটক করেছে তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। পরে টাকার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আক্তারুজ্জামান সোহেল বলেন, এখানে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেছিল কি না জানি না। তবুও যদি কেউ টাকা নিয়ে থাকে তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার বিষয়টির প্রতিবাদ করা অবশ্যই যৌক্তিক। সেক্ষেত্রে বাস আটকে মালিকপক্ষকে ডেকে ভাড়া কমানোর জন্য আলোচনা বা চাপ দেওয়া যেত। কিন্তু তা না করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে বাস আটকে টাকা নেওয়া উল্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন করে। এতে ভাড়া কমবে না, বরং সব শিক্ষার্থীকে এর খেসারত দিতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিসিবি নির্বাচনকে ‘জালিয়াতি’ বললেন ইশরাক, দিলেন কঠোর হুঁশিয়ারি

কয়েকজন উপদেষ্টা নির্বাচনের মাধ্যমে ‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে ভাবছেন : সারজিস

২ লাখ টাকা ছাড়াল স্বর্ণের দাম

সাবেক সংসদ সদস্য বিএম মোজাম্মেল কারাগারে 

প্রকৃতির গহিনে হারিয়ে যাওয়া আমাদের কয়েকটা দিন

আ.লীগ নেতা চন্দনের পাসপোর্ট জব্দ, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বিসিবির সহসভাপতি পদে নির্বাচিত হলেন যারা

ভয়ঙ্কর রূপে তিস্তা, ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা সোহেল রানা গ্রেপ্তার

পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নিজেদের অবস্থান সাফ জানিয়ে দিল ইরান

১০

দুশ্চিন্তা ঘুচিয়ে সোহেল-লামিয়ার ঘরে এলো পাঁচ সন্তান

১১

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিসিবির সভাপতি বুলবুল

১২

মরিয়া প্রমাণ করা লাগবে আমরা অসুস্থ, আদালতে দীপু মনির প্রশ্ন 

১৩

জনমুক্তির ধারাবাহিক আলোচনা / ‘বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া’র প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত

১৪

বিএনপির সেই নেতার ইচ্ছা পূরণে ভার্চুয়ালি সাক্ষাৎ করলেন তারেক রহমান

১৫

নতুন কৌশলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করছে প্রতারকরা

১৬

বিবিসি সাক্ষাৎকারে অন্যরকম তারেক রহমান

১৭

অন্তর্বাস থেকে কি আসলেই ক্যানসার হয়

১৮

বিসিবি নির্বাচনে কোন ক্যাটাগরিতে কত ভোট পড়ল?

১৯

সড়ক অবরোধ করে ভাঙচুরের পর বাসে আগুন

২০
X