ঢালিউডের ইতিহাসে প্রথম সুপারস্টার, স্বপ্নের নায়ক— সালমান শাহ। ক্ষণজন্মা এই অভিনেতার রহস্যজনক মৃত্যু পুরো জাতিকেই স্তব্ধ করে দিয়েছিল। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আজকের দিনে তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। মৃত্যুর এত বছর পরও দর্শকের হৃদয়ে বেঁচে আছেন ঢালিউডের হার্টথ্রব এই নায়ক।
টেলিভিশন নাটক দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু হলেও ১৯৯০-এর দশকে চলচ্চিত্রে অভিষেকের পর থেকেই জীবন-সংলগ্ন গল্প, অনবদ্য অভিনয় দক্ষতা এবং অসাধারণ ফ্যাশন সেন্স দিয়ে তিনি দর্শকের অন্তরে নিজের একক রাজত্ব গড়ে তোলেন। বাংলা সিনেমায় নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল তার হাত ধরেই।
মাত্র চার বছরের চলচ্চিত্রজীবনে তিনি প্রায় ২৭টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। সোহানুর রহমান সোহানের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ (১৯৯২) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্রজগতে পদার্পণ সালমান শাহের। প্রথম ছবিতেই জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। এরপর ‘তোমাকে চাই’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘এই ঘর এই সংসার’সহ একের পর এক হিট সিনেমা দর্শকদের উপহার দেন।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সকালে রাজধানীর ইস্কাটনের নিজ বাসায় সালমান শাহকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রথমে মৃত্যুকে আত্মহত্যা হিসেবে ধারণা করা হলেও শুরু থেকেই নানা গুঞ্জন চলতে থাকে। মৃত্যুর ২৯ বছর পরও সেই বিতর্ক থামেনি; তদন্ত এবং আইনি লড়াই এখনো চলছে।
সালমান শাহের জীবদ্দশায় ২১টি সিনেমা মুক্তি পায়, আর বাকি ৬টি সিনেমা মুক্তি পায় মৃত্যুর পর। তার সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ছিল ‘বুকের ভেতর আগুন’। তবে এই সিনেমার পুরো কাজও তিনি শেষ করতে পারেননি। পরবর্তীতে গল্পের কিছু অংশ পরিবর্তন করে সালমানের চরিত্রে শেষ অংশে অভিনয় করেন ফেরদৌস আহমেদ। পরিচালক ছটকু আহমেদ পরিচালিত সিনেমাটি সালমানের মৃত্যুর এক বছর পর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূর।
গণমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে পরিচালক ছটকু আহমেদ বলেন, “সালমান শাহ-এর অসম্পন্ন ছবিগুলোতে অনেকেই ডামি ব্যবহার করেছে। আমি সেটা করতে চাইনি। একসময় প্লাস্টিক সার্জারির আইডিয়া মাথায় এলো। একটি দৃশ্য লিখলাম— সালমানের মুখ আগুনে পুড়ে যাবে। ডাক্তার প্লাস্টিক সার্জারি করার পর চেহারা পাল্টে গেলে অন্য একজন হিরো আসলেও গল্প নষ্ট হবে না। সালমানই গল্প শেষ করবেন।”
ছটকু আরও বলেন, “সালমান শাহ-এর তখনকার ক্রেজ ও জনপ্রিয়তা অতিক্রম করতে হলে তার চেয়ে বড় তারকা দরকার ছিল। আমি তখন বলিউডের সালমান খানকে চিঠি লিখেছিলাম। জানি না চিঠি পৌঁছেছিল কি না, তবে কোনো সাড়া পাইনি। অবশেষে এফডিসির একটি সেটে সোহানুর রহমান সোহান ফেরদৌসকে আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তাকে নিয়েই ছবিটা শেষ করলাম। বাজেট পুরো খরচ হয়েছে, তবে ছবিটি ভালো ব্যবসা করতে পারেনি।”
‘বুকের ভেতর আগুন’ ছাড়াও মৃত্যুর আগে সালমান ‘মন মানে না’ ছবির কাজ ৫০ শতাংশ অসম্পন্ন রেখেছিলেন। পরবর্তীতে ছবিটি চিত্রনায়ক রিয়াজকে দিয়ে শেষ করা হয়। এছাড়া ‘কে অপরাধী’, ‘তুমি শুধু তুমি’ এবং ‘প্রেমের বাজি’সহ আরও কয়েকটি সিনেমার শুটিং শেষ করার আগেই তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। পরবর্তীতে ‘প্রেমের বাজি’ ব্যতীত বাকি সিনেমাগুলো অন্য নায়কদের দিয়ে নতুন করে শুটিং করা হয়। ‘প্রেমের বাজি’ অসম্পন্ন অবস্থায় থেকেই সিনেমার কাজ শেষ হয়নি। এই সিনেমার মধ্য দিয়েই শেষ হয় সালমান শাহের সেলুলয়েড সফর।
মন্তব্য করুন