

হলুদ শুধু রান্নার স্বাদ এবং রঙের জন্যই নয়, এটি স্বাস্থ্যরক্ষায়ও অসাধারণ কার্যকর। বিশেষ করে পুরুষদের জন্য হলুদ এবং এর সক্রিয় উপাদান কুরকুমিন নানা উপায়ে শরীরের সুস্থতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এটি একটি প্রাচীন ঔষধি মসলা, যা হাজার বছর ধরে ভারতীয় এবং এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে।
আপনার ডায়েটে হলুদ যোগ করা বা সাপ্লিমেন্ট আকারে নেওয়া হৃদরোগ, প্রদাহজনিত সমস্যা, প্রস্টেট সমস্যা, মানসিক চাপ এবং এমনকি যৌন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অনেক সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, কুরকুমিন অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের কারণে শরীরের কোষকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
আরও পড়ুন : ব্যস্ততার মাঝেও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার ৩ সহজ কৌশল
আরও পড়ুন : মনোযোগ ধরে রাখতে মেনে চলুন এই ৫ টিপস
আজকে আমরা জানব কীভাবে হলুদ পুরুষদের শরীর ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি এবং এটি কীভাবে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করা যেতে পারে।
হলুদের অনেক উপকারিতা এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের কারণে। দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা এবং ক্যান্সারের মতো রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত।
গবেষণায় দেখা গেছে, কুরকুমিন অ্যাজমা, আর্থ্রাইটিস এবং ক্রোনস ডিজিজের মতো প্রদাহজনিত রোগের কিছু উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে।
হলুদ এবং কুরকুমিন শরীরে প্রদাহের কিছু চিহ্ন যেমন:
- সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন (CRP)
- ইন্টারলিউকিন-৬ (IL-6)
- টিউমার নেক্রোসিস ফ্যাক্টর α (TNF-α) কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও কুরকুমিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লেভেল বাড়িয়ে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের ঝুঁকি কমায়।
হলুদ হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। ছোট কিছু গবেষণায় দেখা গেছে কুরকুমিন শরীরের কিছু ঝুঁকির ফ্যাক্টর, যেমন- বডি মাস ইনডেক্স (BMI), কোলেস্টেরল লেভেল ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সাহায্য করে। তবে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে।
কুরকুমিন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে এবং পুরুষদের প্রস্টেট রক্ষা করতে সাহায্য করে। প্রস্টেট মূত্রথলির নিচে থাকে এবং বীজস্রাবের সঙ্গে সম্পর্কিত।
প্রায়োগিক গবেষণায় দেখা গেছে, কুরকুমিন প্রস্টেট ক্যান্সার কোষ ধীর বা ধ্বংস করতে পারে। কিছু মানব গবেষণায় দেখা গেছে, এটি প্রস্টেট-স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন (PSA) লেভেল স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।
প্রস্টেট (BPH) চিকিৎসার সঙ্গে কুরকুমিন যোগ করলে - জীবনমান উন্নত হয়, উপসর্গ কমে, প্রস্রাব সহজ হয় ও ইউরিনারি ট্র্যাক্ট সংক্রমণ কমে।
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে কুরকুমিনের অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট প্রভাব আছে।
সীমিত গবেষণা বলছে, এটি পুরুষদের মধ্যে মেজাজ উন্নত করার ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর হতে পারে। ১০৮ জন পুরুষের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কুরকুমিন এবং অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট একসাথে নিলে বিষণ্নতা কমাতে আরও সাহায্য করে।
হলুদ পুরুষ প্রজনন ক্ষমতা এবং ইরেকশন উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। ১০ সপ্তাহ ধরে কুরকুমিন নেওয়ায় শুক্রাণুর সংখ্যা এবং গতিশীলতা বাড়তে পারে।
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে BPH ওষুধের সঙ্গে ২,২৫০ মিলিগ্রাম কুরকুমিন যুক্ত করলে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন উন্নত হয়।
হলুদ ব্যায়ামের পর মাংসপেশি পুনরুদ্ধারকে সাহায্য করে। প্রতিদিন ১৫০-১,৫০০ মিলিগ্রাম কুরকুমিন নেওয়ায় ব্যথা, পেশি ক্ষয় এবং প্রদাহ কমে।
পুরুষদের ত্বকের জন্য বিশেষ গবেষণা নেই। তবে ত্বকে কুরকুমিন ব্যবহার করলে সোরিয়াসিস, একজিমা, সংক্রমণ এবং ক্ষতের নিরাময়ে সাহায্য করতে পারে।
কুরকুমিন ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতে পারে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। সীমিত গবেষণায় দেখা গেছে, ফুটবল খেলোয়াড়দের মধ্যে ভিটামিন C ও D এর সঙ্গে কুরকুমিন নিলে সর্দি ও পাচনতন্ত্রের সমস্যা কমেছে।
হলুদ প্রাণীদের ওপর কিছু পরীক্ষায় ঘুম উন্নত করেছে। তবে মানুষের ক্ষেত্রে প্রমাণ অপ্রতুল।
আরও পড়ুন : যেসব ভুলে আপনার ফ্রিজ বিস্ফোরিত হতে পারে
আরও পড়ুন : গোসলের সময় কোথায় পানি ঢালবেন আগে
হলুদ পাওয়া যায় তাজা বা শুকনো রুট, গুঁড়া, জুস এবং ক্যাপসুল আকারে। আরও শক্তিশালী কুরকুমিন ক্যাপসুল, ট্যাবলেট, অয়েন্টমেন্ট, এক্সট্র্যাক্ট বা এনার্জি ড্রিঙ্কে পাওয়া যায়।
প্রস্টেট ক্যানসার: দৈনিক ২,২৮ মিলিগ্রাম হলুদ তেল + ২ গ্রাম কুরকুমিন
পেশির পুনরুদ্ধার: দৈনিক ৩৫ গ্রাম হলুদ রুট, দিনে দুইবার
হাঁটু অস্টিওআর্থ্রাইটিস: ৫০০ মিলিগ্রাম হলুদ এক্সট্র্যাক্ট, দিনে দুইবার
৮ গ্রাম পর্যন্ত হলুদ সাধারণত নিরাপদ। তবে:
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: মাথা ব্যথা, র্যাশ, গ্যাস, ডায়রিয়া
ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া: রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে, কিছু অ্যান্টিবায়োটিক বা ক্যানসার ওষুধের কার্যকারিতা পরিবর্তিত হতে পারে।
সূত্র: Very Well Health
মন্তব্য করুন