শীতকালে পা ফাটার সমস্যাটা অনেকের কাছেই খুবই পরিচিত। ঠান্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে ত্বক রুক্ষ হয়ে গোড়ালি ফেটে যায়। কিন্তু যখন গরমকালেও পা ফাটে, তখন সেটি অনেকের কাছেই বিস্ময়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, গরমকালে সাধারণত বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে, ফলে ত্বক বেশি শুষ্ক হওয়ার কথা নয়। অথচ বাস্তবে দেখা যায়, অনেকেই এই সময়েও পায়ের গোড়ালি ফাটার সমস্যায় ভোগেন এবং তা শুধু সৌন্দর্যহানিকরই নয়; বরং ব্যথা, অস্বস্তি এবং সংক্রমণের ঝুঁকিও তৈরি করতে পারে।
তবে আপনি কি জানেন, গরমে পা ফাটা হতে পারে আপনার শরীরের ভেতরের কোনো অসামঞ্জস্য বা সুপ্ত রোগের লক্ষণ? এই সমস্যা কখনো শুধু বাহ্যিক পরিচর্যার অভাব থেকে নয়; বরং অভ্যন্তরীণ পুষ্টিহীনতা, হরমোনজনিত সমস্যা, এমনকি দীর্ঘস্থায়ী রোগেরও সংকেত হতে পারে। তাই এই সমস্যাকে হালকাভাবে না দেখে, আসুন জেনে নিই—গরমকালে পা ফাটা আসলে কিসের লক্ষণ হতে পারে, এর পেছনে সম্ভাব্য কারণগুলো কী এবং প্রতিকারের উপায়ই বা কী হতে পারে।
গরমেও পা ফাটার কারণসমূহ
ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা: গরমকালে শরীর ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পানি হারায়। যদি পর্যাপ্ত পানি না পান করা হয়, তাহলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে এবং পায়ের গোড়ালি ফেটে যেতে পারে।
ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি: বিশেষ করে ভিটামিন এ, ই, ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাব ত্বকের নমনীয়তা কমিয়ে দেয়। এতে পা ফাটতে পারে।
হরমোনজনিত সমস্যা: থাইরয়েডের সমস্যা, ডায়াবেটিস বা হরমোনের ভারসাম্যহীনতা গরমে পা ফাটার কারণ হতে পারে। এ ধরনের সমস্যায় ত্বক দ্রুত শুকিয়ে যায় ও মসৃণতা হারায়।
অতিরিক্ত দাঁড়িয়ে থাকা বা খোলা পায়ে হাঁটা: গরমে অনেক সময় খালি পায়ে হাঁটার ফলে ধুলাবালু ও গরম রোদের সংস্পর্শে এসে পায়ের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে পা ফাটে।
অ্যালার্জি বা ফাঙ্গাল ইনফেকশন: পায়ে ঘাম বেশি হলে ফাঙ্গাস জন্ম নিতে পারে, যা পায়ের ত্বকে সংক্রমণ ঘটিয়ে ফাটার কারণ হতে পারে।
সমাধান ও প্রতিকার
প্রচুর পানি পান করুন: দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করলে শরীর ও ত্বক আর্দ্র থাকবে।
ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহার করুন: প্রতিদিন ঘুমানোর আগে পায়ে ভালো কোনো হাইড্রেটিং ফুট ক্রিম বা নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।
পায়ের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন: প্রতিদিন পা ধুয়ে শুকিয়ে নিন। মাঝে মধ্যে হালকা গরম পানিতে পা সোক করুন।
সঠিক খাদ্য গ্রহণ করুন: ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ও ওমেগা-৩ যুক্ত খাবার যেমন বাদাম, মাছ, সবুজ শাকসবজি খাদ্যতালিকায় রাখুন।
পায়ে সানস্ক্রিন ও মোজা ব্যবহার করুন: ধুলোবালু ও সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা পেতে মোজা বা হালকা জুতা পরুন।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত?
- পা ফাটা যদি খুব বেশি গভীর হয়
- রক্তপাত বা ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা যায়
- দীর্ঘদিন কোনো ওষুধ বা ক্রিমেও উপকার না পাওয়া গেলে
গরমে পা ফাটাকে অবহেলা না করে শরীরের অভ্যন্তরীণ বার্তা হিসেবে দেখুন। যদি নিয়মিত পরিচর্যা ও পর্যাপ্ত পানীয় গ্রহণ করেও পা ফাটে, তাহলে এটি অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। তাই সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।
তথ্যসূত্র: ওয়েস্টফিল্ড
মন্তব্য করুন