

প্রতিদিনের ক্লান্তি দূর করতে এক কাপ গরম চা—এ যেন বাঙালির জীবনের অঙ্গ। সকালে ঘুম ভাঙানো থেকে অফিসের ফাঁকে বা বিকেলের আড্ডায়, চা ছাড়া যেন কিছুই চলে না। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই প্রিয় পানীয়টিই যদি মাত্রাতিরিক্ত পান করেন, তাহলে তা আপনার কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিমিত পরিমাণে চা পান শরীরের ক্ষতি করে না, বরং কিছু উপকারও করে। তবে অতিরিক্ত বা ঘন চা পান কিডনির কার্যকারিতা ব্যাহত করে এবং দীর্ঘমেয়াদে কিডনিতে পাথর জমার ঝুঁকি বাড়ায়।
অতিরিক্ত চা ও কিডনির ওপর প্রভাব
১. অক্সালেট জমে পাথর তৈরি
চায়ের মধ্যে থাকে অক্সালেট নামক প্রাকৃতিক যৌগ। ঘন ঘন বা অতিরিক্ত চা পান করলে শরীরে অক্সালেটের মাত্রা বেড়ে যায়। এটি ক্যালসিয়ামের সঙ্গে মিশে ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টাল তৈরি করে, যা কিডনিতে পাথর গঠনের প্রধান কারণগুলোর একটি।
২. ক্যাফেইনের কারণে ডিহাইড্রেশন
চায়ে থাকা ক্যাফেইন একটি মূত্রবর্ধক উপাদান। এটি শরীরে ঘন ঘন প্রস্রাব তৈরি করে পানি বের করে দেয়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না পান করেন, তাহলে শরীরে ডিহাইড্রেশন হয়, যা কিডনির ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে।
৩. কিডনির ওপর চাপ বৃদ্ধি
অতিরিক্ত চা নিয়মিত পান করলে কিডনি সবসময় অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য হয়। ফলে এর ফিল্টারিং ক্ষমতা কমে যেতে পারে। বিশেষ করে যাদের আগেই কিডনির সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরও বেশি।
কখন সতর্ক হবেন
যদি আপনি নিয়মিত ঘন ঘন চা পান করেন এবং নিচের যে কোনো লক্ষণগুলো লক্ষ্য করেন, তাহলে অবিলম্বে সতর্ক হয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি—
১. অস্বাভাবিক প্রস্রাব : ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া বা হঠাৎ প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া।
২. প্রস্রাবের রং পরিবর্তন : প্রস্রাবের রং গাঢ় হলুদ বা লালচে হয়ে যাওয়া (রক্তের উপস্থিতি)।
৩. ফোলাভাব : চোখ, মুখ, পা বা গোড়ালিতে অস্বাভাবিক ফোলাভাব দেখা দিলে।
৪. পিঠ বা কোমরের ব্যথা : কোমরের নিচে বা পাশে একটানা ব্যথা অনুভব করা।
৫. অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা : ক্রমাগত অবসাদ, দুর্বলতা বা মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যা হওয়া।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, চা পানের অভ্যাস একেবারে ত্যাগ নয়, বরং পরিমিত রাখুন। দিনে দুই থেকে তিন কাপের বেশি চা না খাওয়াই উত্তম। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং শরীরের পানির ভারসাম্য ঠিক রাখুন।
কারণ, চা যতই প্রিয় হোক, সুস্থ কিডনি ছাড়া শরীরের কোনো প্রিয় জিনিসই দীর্ঘদিন উপভোগ করা সম্ভব নয়।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস
মন্তব্য করুন