চিকিৎসকরা নিজের জীবন বাজি রেখে অন্যের জীবন বাঁচায় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। শুক্রবার (২৮ জুলাই) ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সিরডাপে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
চিকিৎসকদের প্রশংসা করে প্রধান বিচারপতি বলেন, আল্লাহ তায়ালা আপনাদের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ নিরাময় করে থাকেন। আপনারা চিকিৎসকরা মানবজাতির জন্য সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আপনারা মানুষের পাশে থাকেন। সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। পেশা ও সেবা হিসেবে চিকিৎসার চেয়ে আত্মতৃপ্তির আর কোনো পেশা নেই। মহান আল্লাহ তায়ালা জীবন দান করেন, আর আপনারা চিকিৎসকরা সেই জীবন সুস্থ ও সুন্দর রাখতে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন।
আরও পড়ুন: মামলাজটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হব : প্রধান বিচারপতি
চিকিৎসকদের উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, কোভিডকালেও লাখ লাখ মানুষের জীবন বাঁচাতে সাহায়তা করেছেন। যে মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করে সে নিশ্চয় সবচেয়ে সেরা মানুষ। নিঃসন্দেহে আপনারা মানবজাতির সবচেয়ে আপন মানুষ। চিকিৎসকদের অন্য পেশার মতো সকাল ৯টা থেকে ৫ পর্যন্ত নয়। সবসময় মুমূর্ষু রোগীর সেবার প্রস্তুতি রাখতে হয়। হেপাটাইটিস চিকিৎসায় সাধারণ মানুষের ভ্যাকসিন গ্রহণের বিষয়ে ও রোগটি সম্পর্কে সবাই মিলে সচেতনতা গড়ে তুলি। আমরা প্রত্যেকে যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের জন্য কাজ করি তাহলে দেশ ও জাতি বিশ্বের দরবারে এগিয়ে যাবে।
ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হেপাটাইটিস বি ও সি রোগ প্রতিরোধে মানুষকে সচেতন করছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে সেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এটা নিশ্চয়ই একটা বড় কাজ। তাদের প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। তারা নিজেদের ফান্ড থেকে রোগীদের বিনামূল্যে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আসুন আমরা সবাই তাদের পাশে দাঁড়াই। এ সময় হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত রোগী ও রোগ প্রতিরোধে ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমকে তিনি সাধুবাদ জানান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর সিডিসি (কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল) অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, দেশের মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য হেপাটাইটিস নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগের কোনো ঘাটতি নেই। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে ৫ শতাংশের বেশি হেপাটাইটিস রোগী ছিল। ২০২২ সালে সেটা ৪ শতাংশে এসেছে। এই অগ্রগতি ধরে রাখতে পারলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা হেপাটাইটিস নির্মূল করতে পারব।
তিনি বলেন, আমরা বিনামূল্যে হেপাটাইটিসের রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছি। ১৬ কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশে আমাদের চিকিৎসা প্রদানের সংখ্যাটা হয়তো কম। আগামী ২০২৪ সালে সেক্টর প্রোগামে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা হবে। এই কাজগুলোতে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার সমন্বয়ে বাস্তবায়ন করে আমরা ২০৩০ এর যে লক্ষ্যমাত্রা হেপাটাইটিস নির্মূল করা সেটা অর্জন করতে পারব। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের পথচলা থেমে যাবে না। আমরা কোনো দিবসকে কেন্দ্র করে নয়, সারা বছর ধরেই হেপাটাইটিসসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছি। আপনারাও আমাদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, হেপাটাইটিস রোগ প্রতিরোধে শুধু সরকার নয়, সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে কাজ করতে হবে। সচেতনতা তৈরি করতে হবে। হেপাটাইটিস রোগীর প্রতি বৈষম্য করা যাবে না। তাদের সমান সুযোগ দিতে হবে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথ ও ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।
মন্তব্য করুন