বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি বলেছেন, আন্তর্জাতিক মঞ্চে রাশিয়া বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকে রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশে নির্মিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি অনুসন্ধান এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সহায়তা বাড়ানোসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদিও আলোচনা হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত এবং পাকিস্তান হাইকমিশনারও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাইন অপসারণের কথা স্মরণ করেন। তিনি রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি বাংলাদেশের অন্যান্য পণ্যও আমদানি বাড়ানোর আহ্বান জানান। বর্তমানে রাশিয়ায় বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৯০ শতাংশ তৈরি পোশাক। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা অর্থনৈতিক ও শিক্ষা সহযোগিতা এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন।
বাংলাদেশের খাদ্যশস্য এবং সারের বড় একটি অংশ রাশিয়া থেকে আমদানি করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার। গত বছর রাশিয়া থেকে বাংলাদেশ ২ দশমিক ৩ মিলিয়ন টনেরও বেশি গম আমদানি করেছে এবং চলতি বছর আমদানির পরিমাণ ইতোমধ্যে ২ মিলিয়ন টন অতিক্রম করেছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত জানান, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জ্বালানি কোম্পানি গ্যাজপ্রম ভোলা দ্বীপে এবং দেশের অভ্যন্তরে আরও ৫টি গ্যাস কূপ অনুসন্ধান করতে আগ্রহী। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে নির্মাণকাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং এটি আগামী বছর চালু হতে পারে। তিনি বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশে এলএনজি রপ্তানিতেও আগ্রহী।
এদিকে বাংলাদেশে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসুফ ইসা আল দুহাইলান রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, তিনি দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে সক্ষম।
রাষ্ট্রদূত জানান, প্রায় ৩.২ মিলিয়ন বাংলাদেশি বর্তমানে সৌদি আরবে কাজ করছে এবং তাদের দেশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকরা বার্ষিক ৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স অফিসিয়াল চ্যানেলের মাধ্যমে এবং আরও ৫ বিলিয়ন ডলার আনঅফিসিয়াল চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠায়।
রাষ্ট্রদূত বলেন, সরকারি মাধ্যমে অর্থ পাঠানো হলে তা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্যভাবে সহায়তা করতে পারে। তারা কঠোর পরিশ্রমী মানুষ এবং অত্যন্ত ধার্মিক। তিনি দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির আহ্বান জানান এবং বলেন, সৌদি আরবের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী, যার মধ্যে রয়েছে লজিস্টিক বিনিয়োগ, পরিষেবা খাত এবং আরএসজিটি ইন্টারন্যাশনাল এবং আকওয়া পাওয়ার দ্বারা নবায়নযোগ্য জ্বালানি।
রাষ্ট্রদূত প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, তার দেশ হজ এবং ওমরাহ যাত্রীদের জন্য ইমিগ্রেশন পদ্ধতি সহজ করার জন্য মক্কা রোড ইনিশিয়েটিভ চালু করেছে। গত বছর প্রায় অর্ধ মিলিয়ন বাংলাদেশি ওমরাহ পালন করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে সৌদি নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, তার সরকার সৌদি আরব থেকে অব্যাহত সহযোগিতার জন্য উন্মুখ। প্রধান উপদেষ্টা সৌদি আরবকে ‘বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু’ বলে অভিহিত করেন।
এ ছাড়াও ঢাকাস্থ পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে তিনি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মে সহযোগিতার গুরুত্বারোপ করেন।
ড. ইউনূস দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়াসে বর্ধিত আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য সার্কের পুনরুজ্জীবনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সার্ক হতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো সম্পর্কের মডেল। আমাদের অবশ্যই পারস্পরিক সুবিধার জন্য একসাথে কাজ করতে হবে।
বৈঠকে পাকিস্তান হাইকমিশনার জানান, বাংলাদেশে চলমান বন্যার কারণে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ এবং দেশের জনগণ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। পাকিস্তান বাংলাদেশকে সহায়তা করতে প্রস্তুত।
পাকিস্তানের হাইকমিশনার বাংলাদেশে পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা পদ্ধতি সহজ এবং দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু করার অনুরোধ করেছেন। তিনি দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি তিনি রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পুরুষ ক্রিকেট দলের প্রথম টেস্ট জয়ের জন্য বাংলাদেশকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
মন্তব্য করুন