দেশে প্রতিবছর তামাকের কারণে ১ লাখ ৬১ হাজার লোক মারা যায়। আর তামাক কোম্পানিগুলো সিগারেটের প্যাকেটে লেখা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করে প্রতিবছর ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ২০২৩-২৪ সালের বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর করারোপ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তামাকবিরোধী জোটের নেতারা। সংগঠনটি জানায়, তামাক কোম্পানিগুলো সিগারেটের প্যাকেটে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য না লিখে শুধু খুচরা মূল্য উল্লেখ করে। এই লেখনির ফাঁকে তারা প্যাকেটে লেখা খুচরামূল্যের চেয়ে ৮ শতাংশ থেকে ২৪ শতাংশ পর্যন্ত বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করছে। কিন্তু তারা কর পরিশোধ করছে প্যাকেটে লেখা মূল্যের ওপর। এভাবে তামাক কোম্পানিগুলো বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়।
বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসির প্রজেক্ট ম্যানেজার হামিদুল ইসলাম হিল্লোল লিখিত বক্তব্যে বলেন, প্রতিবছর তামাকের কারণে বিশ্বে ৮০ লাখ মানুষ মারা যায়। এর মধ্যে প্রতিবছর বাংলাদেশেই মারা যায় ১ লাখ ৬১ হাজার। তাই তামাকের নিয়ন্ত্রণ জরুরি। তামাক নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলো দাম বাড়িয়ে ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা বলছে, তামাকের দাম ১০ শতাংশ বাড়ালে এর ব্যবহার ৪ থেকে ৮ শতাংশ কমে আসে। এ সময় লিখিত বক্তব্যে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য ৫ দফা সুপারিশ করেন তিনি।
এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- বাজেট প্রস্তাব সংশোধন করে বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাব অনুসারে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ ও করারোপ করা, এমআরপিতে বিক্রির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা, যে কোনো ধরনের মূল্য কারসাজির ক্ষেত্রে তামাক কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা, ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যে রাজস্ব ফাঁকি বন্ধে স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং ও বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা চালু করা, তামাকজাত দ্রব্যের ওপর করারোপ একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে আনতে শক্তিশালী জাতীয় তামাক করনীতি প্রণয়ন করা।
বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি সভাপতি ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, তামাক কোম্পানিগুলোর অবৈধ লবিংয়ের বিরুদ্ধে ৩০টি তামাকবিরোধী সংগঠন যৌথ এবং আলাদাভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। এরই মধ্যে ১৫৩ জন সদস্য তামাকের বিরুদ্ধে তাদের সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। ভবিষ্যতে আমাদের অনুষ্ঠান ও কর্মসূচিতে সরকারের নীতিনির্ধারকদের নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট (বাটা), বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্টের উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান সভাপতিত্ব করেন।
মন্তব্য করুন