কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৩, ০৪:২৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে নেপথ্যের নায়ক জিয়াউর রহমান : ড. হারুন-অর-রশিদ

‘১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড: খুনি কারা’ শীর্ষক আলোচনা সভা। ছবি : সৌজন্য
‘১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড: খুনি কারা’ শীর্ষক আলোচনা সভা। ছবি : সৌজন্য

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ বলেছেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের নজির মানব জাতির ইতিহাসে আর নেই। এই হত্যাকাণ্ড সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সেনা সদস্যের অংশগ্রহণে নিছক একটি হত্যাকাণ্ড ছিল না। এই হত্যাকাণ্ড ছিল দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের গভীর নীলনকশার অংশ। এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের মূল নায়ক ছিলেন জিয়াউর রহমান।’

মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস ২০২৩ উপলক্ষে জাতীয় বিশবিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি আয়োজিত ‘১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড : খুনি কারা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ড. হারুন-অর-রশিদ।

জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু প্রফেসরিয়াল ফেলো ড. হারুন-অর-রশিদ আরও বলেন, ‘১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল, যে আদর্শের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল সেই আদর্শ থেকে সরে গিয়ে পাকিস্তানের আদলে সেনা-আমলানির্ভর সাম্প্রদায়িক দেশে পরিণত করা। খুনি ডালিমের লেখা বই ও অপর খুনি ফারুকের আদালতে দেওয়া জবানবন্দি থেকে এটা সুস্পষ্ট এই হত্যাকাণ্ডের প্রধান নেপথ্য নায়ক ছিলেন জিয়াউর রহমান। খুনিরা তার সঙ্গে অনেক আগে থেকেই যোগাযোগ রক্ষা করত। জিয়াউর রহমান ছিলেন উচ্চাভিলাষী এবং অত্যন্ত নিষ্ঠুর প্রকৃতির। তিনি শুরু থেকেই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।’

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘রশিদ-ফারুকরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিষয়ে যখন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করল তখন তিনি তাদের এ বিষয়ে সম্মতি জানান এবং এগিয়ে যেতে বললেন। কিন্তু সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিপ অব স্টাফ হিসেবে এবং সেনাবাহিনীর একজন অফিসার হিসেবে তার দায়িত্ব ছিল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তথা সেনাপ্রধান এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এই ষড়যন্ত্রের কথা জানানো। সেটা না করে তিনি বরং তাদের গো অ্যাহেড বলেছেন। এটার মাধ্যমে তিনি যে ক্রাইম করেছেন সে জন্য তার সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়া থেকে পরিত্রাণের অবকাশ নেই। তিনি যদি ওইদিন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তাদের ষড়যন্ত্রের কথা জানাতেন, তাহলে হয়তো ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হতো না।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য আরও বলেন, ‘সেনাবাহিনীর ভেতরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ এনে একজন পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল তাহেরকে যদি ফাঁসি দেওয়া হয় তাহলে জিয়াউর রহমান যে কাজ করেছেন তার শাস্তি কী হওয়া উচিত? তিনি শুরু থেকেই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। জাতির পিতাকে হত্যার ষড়যন্ত্র তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন না তা শুধু অমার্জনীয় অপরাধই নয়, তিনি সর্বোচ্চ শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য-প্রমাণ রয়েছে তাতে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের যে বিচার হয়েছে সেটির আসামির তালিকায় তার নাম আসা স্বাভাবিক ছিল। সে কারণে ১৫ আগস্টের নেপথ্যের নায়ক ও কুশীলবদের চিহ্নিত করতে সরকার একটি তদন্ত কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে। সেখানে আমি মনে করি, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা সরাসরি যুক্ত ছিল এবং ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে মানবতার স্বার্থে, আইনের শাসনের স্বার্থে তাদের মরণোত্তর বিচার হওয়া উচিত।’ ড. হারুন-অর-রশিদ আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন জিয়াউর রহমান। তিনি দল গঠন করেছেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পরিপন্থি। আজকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে সংকট বিরাজ করছে তার মূলে রয়েছে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা এবং পাকিস্তানের ভাবাদর্শে একটি রাজনৈতিক দল সৃষ্টি। পাকিস্তানের পক্ষের শক্তিকে রাজনীতিতে আবার পুনর্বাসন করা। বর্তমানে রাজনীতিতে যে দুটি মতাদর্শিক ধারা সৃষ্টি হয়েছে এর মূলে রয়েছে জিয়াউর রহমান এবং ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড।’

আলোচনা সভায় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মো. নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের ডিস্টিংগুইশড্ প্রফেসর ড. মো. আখতার হোসাইন ও ড. মো. মাহবুবর রহমান, স্নাতকোত্তর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বিন কাশেম, কারিকুলাম উন্নয়ন ও মূল্যায়ন কেন্দ্রের ডিন ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. মনিরুজ্জামান শাহীন, রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের বিভাগীয় প্রধান, অ্যাকাডেমিক কমিটির চেয়ারম্যান, বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষক, গবেষক, কর্মকর্তা ও সুধীজন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৪ দিনের সফরে ঢাকায় পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাড়ল বাস ভাড়া

পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গড়ে তোলা হবে ক্লিন সিটি : চসিক মেয়র

জুলাই সনদে মিত্রদের ‘কাছাকাছি মতামত’ দেওয়ার পরামর্শ বিএনপির

সন্তানকে বাঁচিয়ে প্রাণ দিলেন বাবা

সৈকতে ফের ভেসে এলো মৃত ইরাবতী ডলফিন

ইঞ্জিন সংকটে ‘নাজুক’ রেল অপারেশন

স্পেনে রিয়ালের আর্জেন্টাইন তারকাকে নিয়ে অদ্ভুত বিতর্ক

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হলেন আবু তাহের

মানবিক ড্রাইভার গড়তে নারায়ণগঞ্জে ডিসির যুগান্তকারী উদ্যোগ

১০

গৃহকর্মীদের অধিকার সুরক্ষায় জাতীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত

১১

পিএসসি সদস্য হলেন অধ্যাপক শাহীন চৌধুরী

১২

রিয়ালের হয়ে ইতিহাস গড়লেন আর্জেন্টিনার ‘মাস্তান’

১৩

দাম্পত্য কলহ এড়ানোর সহজ ৫ উপায়

১৪

‘গণতন্ত্রের জন্য আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হতে পারে’

১৫

আর্থিক খাত নিয়ে খারাপ খবর দিলেন গভর্নর

১৬

পৌরসভার ফাইল নিয়ে দুই কর্মকর্তার হাতাহাতি

১৭

কর্মস্থলে ‘অনুপস্থিত’, এবার পুলিশের ২ এসপি বরখাস্ত

১৮

এশিয়া কাপ দল নিয়ে তোপের মুখে বিসিসিআই

১৯

নারী-শিশুসহ ছয় ভারতীয় নাগরিক আটক

২০
X