বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেছেন, খুনি জিয়াউর রহমান চীনে যাওয়ার পরে চীনকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন বাংলাদেশকে বাঁচানোর জন্য। এতে বোঝা যায়, বঙ্গবন্ধুর খুনের সঙ্গে জিয়া জড়িত ছিলেন। চীন যেখানেই পয়সা খাটায়, সেই দেশকে দখল করার জন্য পাগল হয়ে যায়। বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক রচিত ‘চীনের উত্থান : উদ্বিগ্ন প্রতিবেশী’ শিরোনামের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বইটির লেখক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, করোনার টিকা দেওয়ার সময় চীন বলেছিল, কত টাকা দিয়ে টিকা কেনা হয়েছে সেটি বলা যাবে না। একজন আমলা সেটা প্রকাশ করায় চীন ক্ষেপেছিল। তারা যদি বাংলাদেশে অবস্থান পায়, ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মওলানা আকরাম খাঁ মিলনায়তনে বইটির মোড়ক উন্মোচন ও অভিমত প্রকাশ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রকাশনা সংস্থা চারদিক পাবলিকেশন্স।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বইটির সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর। উদ্বোধনী বক্তৃতা করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার, আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত। সভাপতিত্ব করেন ইতিহাসবিদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। শাহরিয়ার কবীর বলেন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক কারণে এই বইটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় চীনের ভূমিকাও বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে।
চীন অন্ধভাবে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে এই বিষয়টি বইটিতে উঠে এসেছে। কিন্তু সেই সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা আমাদের ঋণী করেছে। বহু লেখক বহুভাবে চীনকে জানার ও বোঝার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এই বইটিতে যেভাবে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে অন্য বইগুলোতে সেভাবে তুলে ধরা হয়নি ৷ চীন মঙ্গোলিয়া দখল করেছে। উইঘুরের জাতিগোষ্ঠীর ওপর চীন গণহত্যা চালাচ্ছে। ’৭১ সালে বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানিরা যে ধরনের গণহত্যা চালিয়েছিল, চীন এর চেয়ে বেশি গণহত্যা চালাচ্ছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক কোনো শক্তি এ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে না।
অন্যান্য দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে চীন সহযোগিতা করলেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে চীন কোনো সমর্থন করেনি। ভারত বৈরিতার কারণে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে চীন পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছে। নিজস্ব স্বার্থ ছাড়া চীন কাউকে সাহায্য করে না। চীন যার বন্ধু, তার আলাদা শত্রুর দরকার হয় না। আমেরিকার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেন নি বঙ্গবন্ধু। চীন বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে থাকার পরেও বঙ্গবন্ধু চীনের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেছিলেন। চীন ও ভারতের সাথে সমান সম্পর্ক রাখলে সেটা বাংলাদেশের জন্য বিপজ্জনক হবে। চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা খাল কেটে কুমির আনছি কিনা সেই বিষয়টির দিকে আমাদের নজর দিতে হবে।
অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, সারা বিশ্বের মানুষকে চীন অন্যভাবে দেখে। চীন সভ্যতাকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছে সেটা আমাদের জানা উচিত। চীনকে আমরা কখনো শত্রু ভাবিনি, কিন্তু তারা কী কারণে আমাদের শত্রু ভেবেছে সেটা আমাদের জানি না। আমেরিকা ও সৌদি আরবও আমাদের বিপক্ষে ছিল, তারপরও আমরা শুধু চীনকেই শত্রু ভাবছি। মডেল মসজিদের জন্য টাকা দেওয়ার কথা বলেও সৌদি আরব আমাদের টাকা দেয়নি। সৌদি আরবের সাথে তারপরও আমাদের সম্পর্ক ভালো রয়েছে কেন? মূল সমস্যা হলো, চীন মনঃস্তাত্বিক কারণে সব জায়গায় একটা আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। চীনের লোন আগ্রাসী। অন্যরা সেভাবে আগ্রাসী না। চীন ঋণের ক্ষেত্রে আগ্রাসী হওয়ার পরেও আমরা কেন ঋণ নিচ্ছি এটা একটা প্রশ্ন? বাধ্য হয়েই আমরা নিচ্ছি। কারণ অন্যরা সেভাবে দিচ্ছে না। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এমন একটি জায়গায় নিয়ে গেছে যার কারণে সবাই এখন আমাদের বিষয়ে নাক গলাচ্ছে৷ গবিবের বউ যেমন সবার ভাবি, আমাদের অবস্থাও তেমন হয়েছে। বিচারপতিরা নিরপেক্ষ হবে স্বাভাবিক, তবে বিচারপতিরা যদি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে হয় তাহলে সেই পক্ষ নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এই বইটি লিখে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। বিচারক হিসেবে তিনি যেমন সাহসী ছিলেন লেখক হিসেবেও তিনি সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আজকের পরে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আমেরিকা নিয়ে একটি বই লিখবেন বলে আশা করছি। শ্যামল দত্ত বলেন, চীনকে কোনো দৃষ্টিতে দেখার দরকার ’৭১-এর দৃষ্টিতে, ’৭৫ সালের পরের দৃষ্টিতে নাকি বর্তমানের বাস্তবতায় দেখার সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বিপদে চীন কারো পাশে দাঁড়িয়েছে এমন কোনো রেকর্ড নেই। পদ্মা সেতু নির্মাণে চীনের সাথে জয়েন্ট ভেনচার হিসেবে কাজ করা তমা কনস্ট্রাকশনের দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। চীনের থেকে সাবধানে থাকা উচিত। মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, চীনের আধিপত্যের কারণে উদ্বিগ্ন তার প্রতিবেশীরা। চীনের উত্থানে বর্তমান পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য পরাশক্তিরাও উদ্বিগ্ন। চীন যদি তাদের শক্তি নিয়ে, আধিপত্য নিয়ে এগুতে থাকে তাহলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে যুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে পরাশক্তি দেশগুলোর সাথেও যুদ্ধের সম্ভাবনা থাকতে পারে। এই বইটিতে সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। এটি একটি সময়োপযোগী বই।
মন্তব্য করুন