আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি বলেছেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও আমরা নাগরিকদের জন্য নিরাপদ ও সুপেয় পানির নিশ্চয়তা দিতে পারছি না, সেটি আমাদের একটি রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা। অথচ নিরাপদ সুপেয় পানি নাগরিকদের মৌলিক অধিকার।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের আমলে মানুষকে নিরাপদ পানি দেওয়ার বদলে ওয়াসাকে লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করা হয়েছিল। ৫ আগস্টের পরও সরকার নাগরিকদের এই মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারেনি। নাগরিকদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা আজ ওয়াসার এমডির কাছে স্মারকলিপি ও আমাদের পার্টির পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবনা জমা দিয়েছি।
সোমবার (৫ মে) দুপুরে এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলির নেতৃত্বে পার্টির একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ওয়াসার পানিতে পোকা ও জীবাণু সংক্রমণজনিত চরম জনস্বাস্থ্য সংকট এবং তা নিরসনে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
পরে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ব্যারিস্টার মিলি। প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির শ্যাডো অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি ব্যারিস্টার আব্বাস ইসলাম খান নোমান, সহকারী প্রচার সম্পাদক রিপন মাহমুদ, নারী উন্নয়নবিষয়ক সহসম্পাদক শাহিনুর আক্তার শিলা, সড়ক ও যোগাযোগবিষয়ক সহসম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নুর মোহাম্মদ সুমন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য হাজরা মাহজাবিন ও নারী নেত্রী রাশিদা আক্তার মিতু।
ব্যারিস্টার মিলি বলেন, আমরা পার্টির পক্ষ থেকে কিছু দাবি ও প্রস্তাবনা ওয়াসার এমডিকে জানিয়েছি।
প্রস্তাব ও দাবিগুলো -
স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা :
১. সব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে ওয়াসার পানির নমুনা পরীক্ষা করা এবং প্রতিটি অঞ্চলের বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশুদ্ধ পানির বিকল্প উৎস চালু করা।
২. ওয়াসার হেল্পলাইনের মাধ্যমে দায়সারা জবাব না দিয়ে অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ এবং তার যথাযথ তদারকি নিশ্চিত করা।
৩. সমন্বিত একটি টাস্কফোর্স গঠন করে সমস্যার উৎস দ্রুত চিহ্নিত ও নিরসনের ব্যবস্থা গ্রহণ। বিশেষ করে, যেসব এলাকায় সুয়ারেজ লাইন পানির লাইনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে গেছে, সেগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সংস্কার করতে হবে। পানির পাইপলাইনগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করে পুনঃব্যবহারযোগ্য করে তুলতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ
১. সব পানি শোধনাগার ও সরবরাহ লাইন স্বাধীন বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ অডিট ও কারিগরি পর্যালোচনা সম্পন্ন করতে হবে, যাতে দীর্ঘস্থায়ী দুর্বলতা ও ত্রুটি শনাক্ত করে কার্যকর সংস্কার নিশ্চিত করা যায়।
২. আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পানি বিশুদ্ধকরণ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ওয়াসার কারিগরি কর্মীদের আধুনিক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।
৩. প্রতিটি এলাকায় নির্দিষ্ট সময় অন্তর পানির গুণগত মান পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে হবে এবং পরীক্ষার ফলাফল জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।
৪. ওয়াসার প্রশাসনিক সংস্কার এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গণপরীক্ষা ও নাগরিক অংশগ্রহণভিত্তিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালু করতে হবে দায়বদ্ধতা এবং জবাবদিহিতা তৈরি করার জন্য।
৫. পুরোনো এবং ক্ষয়প্রাপ্ত পাইপলাইন প্রতিস্থাপন, অবৈধ সংযোগ চিহ্নিত করে বন্ধ করা, এবং পুরো সাপ্লাই চেইনকে আধুনিকায়ন করতে হবে। পানির লাইন ও সুয়ারেজ লাইনের সুনির্দিষ্ট মানচিত্র তৈরি করে তা মেইনটেইন করতে হবে।
৬. ঢাকা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে রাস্তা খনন ও উন্নয়নকাজ পরিচালনার জন্য একটি যৌথ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা জরুরি, যাতে প্রতি বছর বৃষ্টির মৌসুমের আগে সড়ক ও পানি লাইন সংক্রান্ত অপরিকল্পিত খুড়োখুড়ির পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
৭. ব্যবহৃত পানিকে ডাবল ফিল্টার করে রান্না ও পানির কাজ ব্যতীত অন্যান্য কাজে পুনঃব্যবহারের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যাতে পানির অপচয় কমানো যায় এবং ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা হ্রাস পায়।
৮. বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ড বা এলাকায় প্রযুক্তিনির্ভর ‘রেইনওয়াটার হারভেস্টিং’ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এই কাজে বুয়েট ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের কারিগরি সহায়তা গ্রহণ করা যেতে পারে।
৯. পানির যথাযথ ব্যবহার ও অপচয়রোধে জনসচেতনতা বাড়াতে শিক্ষা, প্রচারাভিযান এবং স্থানীয় পর্যায়ে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম গঠন করতে হবে। এটার মাধ্যমে সম্মিলিত সচেতনতা ও দায়িত্ববোধের ভিত্তিতে পানি সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
মন্তব্য করুন