যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান শেষে নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বিতরণ ও নিবন্ধন কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। এ যুগান্তকারী পদক্ষেপের ফলে এখন থেকে প্রবাসীরা কনস্যুলেট থেকেই সরাসরি এনআইডি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণ করতে পারবেন, যা তাদের দেশে বিভিন্ন সরকারি সুবিধা ও কার্যক্রম সহজে সম্পাদনে সহায়তা করবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল মো. মোজাম্মেল হক।
এ সময় প্রবাসী কমিউনিটির সিনিয়র নেতারা, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা—যেমন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারি (পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি) কমিটির সদস্য গোলাম ফারুক শাহীন, ব্যবসায়ী মো. কামরুল ইসলাম সনি এবং প্রবাসী মোহাম্মদ বরকত মাহমুদ বাবুলসহ অনেকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান।
বক্তারা বলেন, প্রবাসীদের জন্য এনআইডি সেবা একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী দেশে নিজেদের সম্পদ সংক্রান্ত আইনি প্রক্রিয়া সহজ হবে। এছাড়াও প্রবাসীরা ভবিষ্যতে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রেও এই পরিচয়পত্র সহায়ক হবে।
অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, এ কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি সরকারের অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেস, ওয়াশিংটন ডিসি এবং মায়ামিসহ অন্যান্য বাংলাদেশি অফিসগুলোতেও পর্যায়ক্রমে এ সেবা চালু করার প্রস্তুতি চলছে।’
কনসাল জেনারেল মোজাম্মেল হক তার বক্তব্যে এই সেবা প্রদানে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তাছাড়া কমিউনিটির নেতাদের প্রতি নতুন সেবা সম্পর্কে প্রবাসীদের অবহিত করার আহ্বান জানান তিনি।
প্রবাসীরা এখন অনলাইন পোর্টালের (https://services.nidw.gov.bd) মাধ্যমে আবেদন করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন।
এদিকে এনআইডি কার্যক্রম শুরুর ফলে নিউইয়র্কের প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ ও সন্তুষ্টি দেখা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারি উপদেষ্টা কমিটির সদস্য গোলাম ফারুক শাহীন বলেন, ‘আমরা যারা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি করি বিদেশে অবস্থান করে কখনোই ভোট দিতে পারিনি। সরকার আমাদের ভোট গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমরা সরকারকে সাধুবাদ জানাই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রথম প্রবাসীদের ভোট দানের ক্ষেত্রে দাবিটি উত্থাপন করেছিলেন। দাবিটি প্রবাসীদের প্রতি তার আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ। ওনার দাবিটি আজকে পরিপূর্ণ হলো।’
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল লতিফ সম্রাট বলেন, ‘সরকারের পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাই। প্রবাসীরা ভোট দিতে পারবে এটা আমাদের অনেক দিনের চাওয়া। প্রবাসীদের ভোটাধিকার তারেক রহমানের প্রস্তাব। ওনার চিন্তা ছিল সবাই ভোট দিতে পারলে প্রবাসীরা কেন নয়। আমরা আশা করি সরকার দক্ষতার সঙ্গে প্রবাসীদের ভোটদান সম্পন্ন করবে।’
নিউইয়র্কের ব্যবসায়ী মো. কামরুল ইসলাম সনি বলেন, আমরা বিদেশে থেকে ভোট দিতে পারব এটাই অত্যন্ত আনন্দের খবর। তবে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়াটি সহজতর হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী সব ব্যবসায়ীর পক্ষ থেকে আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী মোহাম্মদ বরকত মাহমুদ বাবুল বলেন, আমি যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ বছর অবস্থান করছি কিন্তু কখনোই বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অবস্থায় ভোট দিতে পারেনি। বর্তমান সরকার আমাদের জন্য এটি একটি বিরাট সুযোগ করে দিয়েছেন, যাতে আমরা আমাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারি। আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ, সন্দ্বীপ সোসাইটির সভাপতি ও ফোবানা সেক্রেটারি ফিরোজ আহমেদ, সাবেক চট্টগ্রাম সমিতির সভাপতি কাজী আজমসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে আব্দুল লতিফ সম্রাট, জিল্লুর রহমান জিল্লু, আনওয়ারুল ইসলাম আনোয়ার প্রমুখ অংশ নেন।
মন্তব্য করুন