নারী দল এশিয়ান কাপ বাছাই পরীক্ষায় পাস করার পর আবেগাপ্লুত ফুটবলার, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) কর্মকর্তা এবং সমর্থকদের মধ্যে বিশ্বকাপ সংক্রান্ত উত্তেজনা লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা কি আদৌ বিশ্বকাপ সংক্রান্ত স্বপ্ন দেখার মতো অবস্থায় আছে!
২০২৬ সালের ১ থেকে ২১ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার তিন শহরের পাঁচ ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে এএফসি নারী এশিয়ান কাপ। ১২ জাতির আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে ১১ দেশ। বাছাইয়ে ‘এ’ গ্রুপের খেলা আজ শুরু হয়েছে। ১৯ জুলাই গ্রুপের ম্যাচ শেষে চূড়ান্ত হবে নারীদের এশিয়ান কাপের লাইনআপ।
যে ১১ দেশ মূলপর্বে খেলা নিশ্চিত করেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে অনভিজ্ঞ, র্যাঙ্কিংয়ের ভিত্তিতে পিছিয়ে থাকা দেশও। ‘এ’ গ্রুপে থাকা পাঁচ দেশের মধ্যে লেবানন (১৩০), সিঙ্গাপুর (১৩৯) ও ভুটান (১৭১) ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের ভিত্তিতে বাংলাদেশের (১২৪) চেয়ে পিছিয়ে আছে। বাকি দুই দেশ ইরান (৬৮) ও জর্ডানের (৭৫) মধ্যে মূলপর্বে যাওয়ার দৌড় সীমাবদ্ধ থাকার কথা। ‘এ’ গ্রুপের লড়াইয়ে অলৌকিক কিছু না ঘটলে এএফসি এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ হতে যাচ্ছে সবচেয়ে অনভিজ্ঞ এবং র্যাঙ্কিংয়ের ভিত্তিতে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশ।
এবার দেখে নেওয়া যাক বাংলাদেশের বিশ্বকাপ সম্ভাবনা কতটুকু। এএফসি নারী এশিয়ান কাপ থেকে বিশ্বকাপের টিকিট পেতে হলে প্রথমত, গ্রুপের পর্বের বাধা টপকাতে হবে। তিন গ্রুপের শীর্ষ দুটি করে দলের সঙ্গী হয়ে পরের রাউন্ডে যাবে তৃতীয় স্থানে থাকা তিন দলের মধ্য থেকে সেরা দুটি। তাতে চূড়ান্ত হবে কোয়ার্টার ফাইনালের লাইনআপ। কোয়ার্টার ফাইনালে বিজয়ী চার দেশ সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার টিকিট পাবে। হেরে যাওয়া দলগুলো খেলবে প্লে-অফ। সেখানে বিজয়ী দুই দলও বিশ্বকাপের টিকিট পাবে, হেরে যাওয়া দল দুটি আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফ লড়াইয়ে যাবে। সে লড়াইয়ে জিতলে মিলতে পারে বিশ্বকাপের টিকিট।
নারী এশিয়ান কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা ১১ দেশের মধ্যে আটটি ১০ কিংবা তার বেশিবার এশিয়া সেরা আসরে খেলার অভিজ্ঞতাপুষ্ট। স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া আট এশিয়ান কাপ খেলার অভিজ্ঞতাপুষ্ট, উজবেকিস্তান খেলতে যাচ্ছে সপ্তম নারী এশিয়ান কাপ। এ অবস্থায় অনভিজ্ঞ বাংলাদেশের পরের রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। অলৌকিক কিছু ঘটলে বাংলাদেশ হয়তো এশিয়ান কাপের পরের রাউন্ডে যেতে পারে।
সেখানে গেলেই কিন্তু বিশ্বকাপের টিকিট মিলবে না। এ জন্য হয়তো কোয়ার্টার ফাইনাল জিততে হবে, নইলে প্লে-অফ লড়াই। প্লে-অফ লড়াইয়ে হেরে গেলেও সম্ভাবনা থাকবে আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফ জয়ের মাধ্যমে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়ার মঞ্চে পা রাখা দলটিকে ঘিরে এমন প্রত্যাশা কি আদৌ বাস্তবসম্মত!
এশিয়ান কাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করা অবশ্যই কৃতিত্বের, তা বাংলাদেশের ক্রমোন্নতির প্রমাণ। কিন্তু সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানী সরকার, সানজিদা আক্তার, মাসুরা পারভিনের মতো অভিজ্ঞ ফুটবলারদের ছাড়া বাছাই পরীক্ষায় পাস করেছে বাংলাদেশ। দেশের নারী ফুটবলের পালাবদলের সময়ে বিশ্বকাপ সংক্রান্ত আলোচনা নারী ফুটবলারদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে, যা এশিয়ান কাপের মতো বড় মঞ্চে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে—বলছেন ফুটবল বোদ্ধারা।
মন্তব্য করুন