শিশুর জন্ম মানেই এক নতুন আশার আলো। কিন্তু জন্মের পর অনেক সময়ই কিছু সমস্যা চুপিসারে লুকিয়ে থাকে, যেগুলো সময়মতো ধরা না পড়লে হতে পারে মারাত্মক বিপদ। তার মধ্যে অন্যতম হলো শিশুর জন্মগত হার্টের সমস্যা।
বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রায় ১৩ লাখ শিশু হার্টের ত্রুটি নিয়ে জন্ম নেয়। অনেক ক্ষেত্রেই এর লক্ষণগুলো শুরুতে স্পষ্ট না হওয়ায়, বাবা-মা বুঝতেই পারেন না কী ভয়াবহ জটিলতা তাদের শিশুর শরীরে তৈরি হচ্ছে।
আরও পড়ুন : শিশুর রক্তশূন্যতা নিয়ে সচেতন হোন
আরও পড়ুন : আপনার শিশুর এই লক্ষণগুলো কিডনির ঝুঁকির ইঙ্গিত দিতে পারে
শিশু হার্ট বিশেষজ্ঞ ডা. স্মিতা মিশ্রার মতে, ‘শিশুর জন্মের পর থেকেই হার্টের স্বাস্থ্যের দিকটি খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি।’ নিয়মিত চেকআপ ও লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকলে অনেক শিশুর জীবন বাঁচানো সম্ভব।
- হার্টের দেয়ালে ছিদ্র
- হার্টের ভালভ ঠিকমতো কাজ না করা
- রক্তনালির গঠনে জটিলতা
কিছু সমস্যা নিজে থেকেই সেরে যেতে পারে, আবার অনেক সময় অস্ত্রোপচার জরুরি হয়ে পড়ে। চিকিৎসা না করালে দেখা দিতে পারে:
- হার্ট ফেইলিওর
- কিডনি ও লিভারের সমস্যা
- রক্ত জমাট বাঁধা
- অনিয়মিত হার্টবিট
এই ৭টি লক্ষণ দেখলেই সাবধান হোন।
ডা. মিশ্রা বলছেন, নিচের লক্ষণগুলোর একটিও যদি আপনার শিশুর মধ্যে দেখা যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ঠোঁট বা নখে নীলচে রঙ (সায়ানোসিস) : শিশু কান্না করলে বা খাওয়ার সময় যদি ঠোঁট, ত্বক বা নখে নীলচে আভা দেখা যায়, তাহলে অবহেলা করা ঠিক নয়।
খাবার খেতে অনেক সময় নেয় : শিশু যদি স্তন্যপান বা বোতল থেকে খাওয়াতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি (২০ মিনিটের বেশি) সময় নেয়, সেটাও একটা লক্ষণ।
খাওয়ানোর সময় অতিরিক্ত ঘাম : শুধু গরমে নয়, হার্টের ত্রুটির কারণেও শিশুর ঘাম বেশি হতে পারে—বিশেষ করে খাওয়ানোর সময়।
শ্বাস নিতে কষ্ট হয় বা খুব দ্রুত শ্বাস নেয় : বুক অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করা বা শ্বাসকষ্ট—এসব লক্ষণ হার্টের সমস্যা নির্দেশ করতে পারে।
অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা ঘুম ঘুম ভাব : শিশু যদি অনেক ঘুমানোর পরও অলস থাকে বা খেলায় মন না দেয়, সেটাও সতর্ক হওয়ার মতো বিষয়।
ওজন বা উচ্চতা ঠিকভাবে না বাড়া : সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যদি শিশুর ওজন বা উচ্চতা বাড়ছে না, তাহলে সেটার পেছনে হার্টের ত্রুটি থাকতে পারে।
হার্টে অস্বাভাবিক শব্দ (হার্ট মার্মার) : চেকআপে যদি ডাক্তার হার্টে কোনো অস্বাভাবিক শব্দ পান, তাহলে সেটা নিয়ে আর দেরি না করে বিস্তারিত পরীক্ষা করিয়ে নিন।
ডা. স্মিতা মিশ্রা বলেন, ‘অনেক শিশু জন্মের পরপরই অস্ত্রোপচারের দরকার পড়ে। তাই কোনো লক্ষণ দেখলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের কাছে যান।’
আরও পড়ুন : শিশুর চোখ দিয়ে পানি পড়ার কারণ জেনে নিন
আরও পড়ুন : শিশুর ৫ বদভ্যাস দূর করার সহজ কৌশল
বাবা-মায়ের একটু সচেতনতাই পারে একটি ছোট শিশুর জীবন রক্ষা করতে।
মনে রাখুন, হার্টের সমস্যা থাকলেও সময়মতো ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে শিশুকে সুস্থ রাখা সম্ভব। নিয়মিত চেকআপ ও সচেতনতা শিশুর সুস্থ জীবনের মূল চাবিকাঠি।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
মন্তব্য করুন