

তানজানিয়ায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশটিতে নির্বাচনের পর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি। দেশজুড়ে পালিত হয়েছে বিক্ষোভ। এ ঘটনায় বিরোধী দল চাদেমার শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়েছে। শনিবার সকালে পুলিশ দলটির উপমহাসচিব আমানি গোলুগওয়াকে গ্রেপ্তার করেছে। এর আগে দলের নেতা তুন্ডু লিসু এবং উপনেতা জন হেচেকেও নির্বাচনের আগেই আটক করা হয়েছে।
শনিবার (০৮ নভেম্বর) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে এই গ্রেপ্তারের একদিন আগে দুই শতাধিক বেশি মানুষকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আইনজীবী পিটার কিবাতালা এএফপিকে জানান, মোট ২৫০ জনকে তিনটি পৃথক মামলায় হাজির করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে দুই ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এগুলো হলো রাষ্ট্রদ্রোহের ষড়যন্ত্র এবং রাষ্ট্রদ্রোহ।”
সরকারি নির্বাচনী কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসান ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। তবে চাদেমা দল এই নির্বাচনকে ‘ভুয়া ও প্রহসনমূলক’ বলে অভিহিত করেছে।
দলটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সরকার দলের নেতৃত্বকে পঙ্গু করে দেওয় এবং কার্যক্রম স্থবির করার পরিকল্পনা নিয়েছে। তারা আরও দাবি করেছে, পুলিশ এখন নিম্নস্তরের কর্মীদেরও টার্গেট করছে এবং অনেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
পুলিশ গোলুগওয়াসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা বিক্ষোভে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালাচ্ছে এবং চাদেমার মহাসচিব জন মনিয়িকা ও যোগাযোগ প্রধান ব্রেন্ডা রুপিয়া এখন পুলিশের ওয়ান্টেড তালিকায় রয়েছেন।
আলজাজিরা জানিয়েছে, গত ২৯ অক্টোবর থেকে দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। রাজধানী দার এস সালাম, পাশাপাশি আরুশা, মওয়াঞ্জা, মবেয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তবে সরকার এখনো পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশ করেনি।
তানজানিয়ার ক্যাথলিক চার্চ দাবি করেছে, বিক্ষোভে শত শত মানুষ নিহত হয়েছে। চাদেমার বক্তব্য অনুযায়ী, ১,০০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। তবে নিরাপত্তা বাহিনী লাশ গোপন করেছে যাতে প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ না পায়।
এদিকে প্রতিবেশী কেনিয়া মানবাধিকার কমিশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। সংস্থাটি তাদের সংগৃহীত ছবিসহ প্রমাণ প্রকাশ করেছে, যেখানে অনেক মৃতদেহে মাথা ও বুকে গুলির চিহ্ন দেখা গেছে। এগুলো স্পষ্টভাবে ‘টার্গেটেড কিলিংস, ভিড় নিয়ন্ত্রণ নয়’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা জানিয়েছে, তানজানিয়ার নির্বাচন গণতান্ত্রিক মানদণ্ড বা আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পূরণ করেনি। তাদের পর্যবেক্ষক দল ভোটকেন্দ্রে ভোট বাক্স ভর্তি ও একাধিক ব্যালট দেওয়ার ঘটনাও তুলে ধরেছে।
১৯৯২ সালে বহুদলীয় রাজনীতি চালুর পর থেকে তানজানিয়ায় কার্যত একদলীয় প্রভাবই বজায় রয়েছে। প্রেসিডেন্ট সামিয়া হাসানের বিরুদ্ধ একহাতে দেশ দেশ শাসনের অভিযোগ উঠেছে। তিনি বিরোধীদের কোনো রকম মতপ্রকাশের সুযোগ দিচ্ছেন না বলেও দাবি করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন