বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও আশাবাদ ব্যক্ত করে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব লর্ডসে এক উচ্চপর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বক্তারা এই সংকটকালে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে মনোযোগী হতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার (২০ অক্টোবর) ব্রিটেনের বাংলা গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার আয়োজন করা হয়।
হাউস অব লর্ডসের সদস্য ব্যারোনেস পলা মঞ্জিলা উদ্দীনের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই বৈঠকে মূল ফোকাস ছিল, ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ—কীভাবে একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছে মসৃণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায়?’ বক্তারা একমত হন যে, অভ্যুত্থানের পর যে নৈতিক শক্তি নিয়ে ক্ষমতা এসেছিল, তার প্রথম কাজ হলো একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা।
আলোচনায় উঠে আসে, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া বা গণতান্ত্রিক প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকলে জনগণের মধ্যে তৈরি হওয়া হতাশা আরও বড় রাজনৈতিক সংকটের জন্ম দিতে পারে।
সভাপতির বক্তব্যে ব্যারোনেস পলা মঞ্জিলা উদ্দীন বলেন, বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণে সেই আকাঙ্ক্ষার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে সরকারকে একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে, যাতে দ্রুতই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু হয়।
সভায় লেবার পার্টির জ্যেষ্ঠ এমপি রোশনারা আলী, রূপা হক এমপি তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সুশাসনের ওপর জোর দেন।
সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম ইয়াজউদ্দিন সাহেবের উপদেষ্টা বাংলাদেশের প্রবীণ লেখক সাংবাদিক ও গবেষক মোখলেসুর রহমান চৌধুরী বলেন রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বচ্ছতাও আওতায় নিয়ে আসতে হবে। পতিত স্বৈরাচারের খুন গুমের বিচার করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলার মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে বৃহত্তর স্বার্থে ঘনঘন ডায়লগের পরামর্শ দেন জনাব চৌধুরী।
বিখ্যত চিকিৎসক প্রপেসার ডাক্তার শফি আহমদ বলেন বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এবং চিকিৎসা ব্যবস্হায় আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। তিনি রাউন্ড টেবিল ডিসকাশনে তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাবকে ধন্যবাদ জানান।
প্রেস ক্লাব সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন এবং বলেন, ‘গণমাধ্যম হিসেবে আমরা জনগণের কণ্ঠস্বর। বর্তমানে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যর্থতা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তা দ্রুত নিরসনের একমাত্র উপায় হলো সুষ্ঠু নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে জাতিকে একটি আশার আলো দেখানো।
কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক এমপি ও মেয়র প্রার্থী ডা. আনেওয়ারা আলী বলেন, গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা হলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে।
লেবার পার্টির পলিটিক্যাল অ্যাডভাইজার জাহিন আহমদ বলেন, যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি গণতন্ত্র এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের জনগণের পাশে আছে।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আকবর হোসেন বলেন, সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে কাজ করছে।
সভায় ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি মুনজের আহমদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে স্বৈরাচারের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতনের পর এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ নোবেল লরিয়েট ড. ইউনূস দেশের অর্থবহ ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য কিছু করতে পারবেন সেই আশা করেছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, কিছু কাগজে স্বাক্ষর করা ছাড়া সেই কাঙ্ক্ষিত অর্থবহ ইতিবাচক পরিবর্তনের কোনো লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। ড. ইউনূসকে নিয়ে জনমানুষের যে প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হয়নি। তিনি নিজের জন্য ক্রেস্ট পুরস্কার সংগ্রহের জন্য দেশে দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। প্রায় দু-দশক পর একটি সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের যে ধরনের প্রস্তুতি দরকার, তার খুব ভালো প্রস্তুতি আমরা দেখছি না। মাঠে থাকা দলগুলো শুধু যে কোনোভাবে হোক ক্ষমতায় যাওয়ার লড়াই করছে। সরকার ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করতে চাইছে।
সভায় আরও বক্তব্য দেন প্রবীণ কমিউনিটি নেতা শাহগীর বখত ফারুক, লেবার পার্টির পলিটিক্যাল অ্যাডভাইজার জাহিন আহমদ, ব্যারিস্টার রেজা চৌধুরী, বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আকবর হোসেন, ইউকে বাংলা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি মুনজের আহমদ চৌধুরী, সহসভাপতি ফখরুল ইসলাম, সেক্রেটারি আরিফ আল মাহফুজ, সাবেক সেক্রেটারি সাইদুল ইসলাম, ট্রেজারার মাহবুবুল করীম সুয়েদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম সামসুর রহমান সুমেল,সাংবাদিক আনোয়ারুল ইসলাম অভি, প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ, জাহেদ আহমদ, আব্দুল বাসিত চৌধুরী, ব্যবসায়ী নিশাদ দস্তগীর, আক্তার হোসেন টুটুল, ব্যারিস্টার মিজানুর রহমান,সাংবাদিক এমদাদুল হক প্রমুখ।
আলোচনাটি শেষ হয় এই ঐকমত্যের মধ্য দিয়ে যে, বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হলে দ্রুত, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
মন্তব্য করুন