গ্রিসের ক্রিট দ্বীপের উপকূলে বৃহস্পতিবার ভোররাতে ৬.১ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার প্রভাব কেবল গ্রিস নয়—কম্পনে কেঁপে ওঠে গোটা ইজিয়ান সাগর এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইসরায়েল পর্যন্ত। সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ভূমিকম্পে হাইফা, জেরুজালেম, হোলন এবং বারসেবা শহরে বড় ধরনের কম্পন অনুভূত হয়।
গ্রিসের রাজধানী অ্যাথেন্সে অবস্থিত জিওডাইনামিক ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উপকেন্দ্র ছিল ক্রিট দ্বীপের উত্তর দিকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরে এবং এটি ভূগর্ভের ৩৭ কিলোমিটার গভীরে ঘটেছে। গভীর উৎপত্তিস্থল হওয়ায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হলেও, কম্পন ছিল তীব্র।
ইসরায়েলের একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কম্পন অনুভূত হয় সেদেশের একাধিক শহরে। ভোররাতে অনুভূত হওয়া ভূমিকম্পের জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়। হাইফা, জেরুজালেম, হোলন ও বেইরশেভার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তারা ভোররাতে বিছানায় ঘুমন্ত অবস্থায় কাঁপুনি অনুভব করেন।
খবরে বলা হয়, মাত্র এক সপ্তাহ আগেই একই অঞ্চলে ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল, যেটির কম্পনও ইসরায়েলে অনুভূত হয়েছিল। ফলে জনমনে ভূমিকম্পের আতঙ্ক আরও বাড়ছে।
ইসরায়েলি ভূকম্প বিশেষজ্ঞরা অনেক দিন ধরেই সতর্ক করে আসছেন যে, ওই অঞ্চল একটি বড় ধরনের ভূমিকম্প যে কোনো সময় আঘাত হানতে পারে। তারা বলছেন, ভূত্বকের গভীরে থাকা ট্যাকটিক্যাল প্লেটগুলো স্থান পরিবর্তন করে দীর্ঘদিন ধরে শক্তি জমছে। যে কোনো সময় তা বড় ধরণের ভূমিকম্প ঘটাতে পারে।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে মরক্কোয় ভূমিকম্পে দুই হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানির পর, রাষ্ট্রীয় মহা-নিরীক্ষক মাতানইয়াহু ইংলম্যান সরাসরি সতর্ক করেন যে, ইসরায়েল এখনো বড় কোনো ভূমিকম্প মোকাবিলায় প্রস্তুত নয়।
তার মতে, ইসরায়েলের উত্তরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর ৯৩ শতাংশই বড় ভূমিকম্পে ধসে পড়তে পারে এবং ভূমিকম্প প্রতিরোধে যেসব স্কুল সংস্কারের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে, তার ৩০ শতাংশ এখনও অরক্ষিত।
প্রসঙ্গত, এ অঞ্চলে শেষ বড় ভূমিকম্প হয়েছিল ১৯২৭ সালে, যার মাত্রা ছিল ৬.২ এবং প্রাণ হারিয়েছিলেন ৫০০ জনের বেশি মানুষ। গবেষকদের মতে, প্রায় প্রতি ১০০ বছর অন্তর এই অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা থাকে।
তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০ সালের এক গবেষণায় সতর্ক করে বলা হয়, ইসরায়েলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই বড় একটি ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে, যা শত শত প্রাণহানি ঘটাতে সক্ষম।
মন্তব্য করুন