ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের মৃত্যু ঘিরে তীব্র ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত অভিযোগ তুলেছে, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মদতেই হামলাটি সংগঠিত হয়েছে।
যদিও এ নিয়ে ভারতের হাতে কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই। তবে এরই মাঝে পাকিস্তানের বিভিন্ন দায়িত্বশীল নেতার তরফ থেকে উসকানিমূলক মন্তব্য করা হচ্ছে, যা ভারতজুড়ে সমালোচনার ঝড় তুলেছে।
প্রেক্ষাপট যখন এই তখন ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রভাবশালী কণ্ঠস্বর এবং অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম)-এর প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি রোববার (৪ মে) একটি বিবৃতিতে পাকিস্তানকে একহাত নেন।
প্রখ্যাত ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, ওয়াইসি পাকিস্তানকে আখ্যা দেন ‘একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র’ হিসেবে এবং বলেন, ‘পাকিস্তানিরা এতটাই গরিব যে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত, আর যারা আজেবাজে কথা বলছে, তারা ইসলাম জানেই না।’
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের যুদ্ধোন্মাদ বক্তব্যের জবাবে ওয়াইসি বলেন, ১৯৪৭ সালে আমরা ভারতীয় মুসলিমরা ঠিক করেছিলাম, এই দেশই আমাদের। আমরা জিন্নাহর ডাক প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। ভারত ছিল, আছে আর ইনশাআল্লাহ থাকবে আমাদের দেশ। পাকিস্তানে যারা ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ ছড়াচ্ছে, তারা ইসলাম সম্পর্কে কিছুই জানে না। তারা প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুত।
ওয়াইসি বলেন, পাকিস্তানে আজও ১৯৪৭ সালে ভারত থেকে যাওয়া মানুষদের ‘মুহাজির’ বলে উপেক্ষা করা হয়। পাঠান, বেলুচ, সিন্ধিদের সঙ্গেও হয় বৈষম্য। এই রাষ্ট্রে সাম্য ও ন্যায়ের কোনো স্থান নেই। পাকিস্তান এতটাই দারিদ্র্যপীড়িত ও অস্থিতিশীল যে সাধারণ মানুষও দিশাহারা।
তিনি আরও বলেন, তাদের আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা, ইরানের সঙ্গে বিরোধ এবং ভারতের সঙ্গে জন্মলগ্ন থেকেই শত্রুতা—এসব মিলে পাকিস্তান আজ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
কাশ্মীরের পেহেলগাম হামলার প্রসঙ্গে ওয়াইসি বলেন, এই বর্বরোচিত হামলা গোটা জাতিকে নাড়া দিয়েছে। এ সময় যারা হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়, তারা ভারতের শত্রু। বিভাজনের এই প্রচেষ্টা পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাকে-কে খুশি করবে, দেশকে নয়।
তিনি বলেন, এখন আমাদের সংহতি ও দেশপ্রেম প্রমাণের সময়। যারা পাকিস্তানের স্বার্থে কাজ করে, তাদের মুখোশ উন্মোচন করা দরকার। এবার আমাদের উচিত শক্ত জবাব দেওয়া, যাতে এই সন্ত্রাসের বিষ চিরতরে শেষ হয়।
পাকিস্তানের পরমাণু শক্তির হুমকির প্রসঙ্গে ওয়াইসি বলেন, তোমরা বলো তোমরা পরমাণু শক্তি, কিন্তু করেছো কী? ধর্মের নামে মানুষ খুন করছো। এটা ইসলাম নয়, এটা সন্ত্রাস। তোমরা আসলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসআইএস-এর মতো আচরণ করছো।
প্রসঙ্গত, কাশ্মীর হামলার পর ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার ইস্যুতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির বলেন, সিন্ধু নদ দিয়ে হয় পানি আসবে না হয় ভারতীয়দের রক্ত প্রবাহিত হবে—এর জবাবে ওয়াইসি বলেন, তোমার মা বেনজির ভুট্টো জঙ্গিদের হাতেই প্রাণ হারিয়েছেন। আগে নিজের ঘর সামলাও, তারপর ভারতকে শিক্ষা দেওয়ার কথা বলো। পাকিস্তান শুধু সময়ের হিসেবে নয়, উন্নয়ন ও মানবিকতায় ভারতের চেয়ে অন্তত ৫০ বছর পিছিয়ে আছে।
তিনি বলেন, শোনা যাচ্ছে, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটি খালি করা হচ্ছে। যদি সত্যি হয়, তাহলে আমাদের সেখানে গিয়ে বসে উচিত—‘ঘরে বসে থাকা খতম।’ এবার আর ছাড় নয়।
হামলার জবাবে ভারত সরকারের সম্ভাব্য পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, যে কোনো পদক্ষেপে আমি সরকারের পাশে আছি। এখন আমাদের বিভক্তি নয়, একতা দরকার। দেশকে অশান্ত করতে যারা চাইছে, তাদের প্রতিরোধ করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে।
ওয়াইসির এই স্পষ্ট, কড়া এবং ইসলামসম্মত অবস্থান ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছে। কট্টর সমালোচকরাও এই মুহূর্তে তার বক্তব্যের সাহস ও বাস্তবতাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
মন্তব্য করুন