২০৩০ সালের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হবে বাংলাদেশ
জনঘনত্ব, তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও ভৌগোলিক ঝুঁকির কারণে দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর একটি। আর এ অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ চরম তাপমাত্রার ঝুঁকিতে পড়বে এবং বড় একটি অংশ মারাত্মক বন্যার শিকার হতে পারে। উপকূলীয় এলাকায় পানি ও মাটির লবণাক্ততা বাড়ায় বাংলাদেশের লাখো মানুষের জীবন-জীবিকা জলবায়ু সংকটে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের ‘ঝুঁকি থেকে স্থিতিস্থাপকতা দক্ষিণ এশিয়ায় মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের অভিযোজনে সহায়তা’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোকে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রভাব মোকাবিলা করতে হবে বলে সতর্ক করেছে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, জলবায়ু অভিযোজনের চাপ সবচেয়ে বেশি পড়েছে পরিবার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর। এতে বলা হয়, জলবায়ু ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা জরুরি। আগামী ১০ বছরের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার তিন-চতুর্থাংশের বেশি পরিবার ও প্রতিষ্ঠান জলবায়ুজনিত ধাক্কার শঙ্কায় রয়েছে। এরই মধ্যে ৬৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ও ৮০ শতাংশ পরিবার কিছু অভিযোজনমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে, তবে বেশিরভাগই কম খরচের সাধারণ সমাধানের ওপর নির্ভর করছে। উন্নত প্রযুক্তি বা সরকারি অবকাঠামো ব্যবহারের প্রবণতা কম।
বাংলাদেশের ২৫০টি উপকূলীয় গ্রামে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, জলবায়ু-সহনশীল অবকাঠামো পরিবর্তনশীল জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাওয়ানো সবচেয়ে জরুরি। দীর্ঘমেয়াদে ৫৭ শতাংশ পরিবার অপর্যাপ্ত দুর্যোগ-সুরক্ষা অবকাঠামোকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং ৫৬ শতাংশ পরিবার অভিযোজনের জন্য সীমিত আর্থিক সম্পদকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর প্রভাব শুধু পরিবেশগত নয়; বরং মানবিকও। কারণ দরিদ্র পরিবারগুলোর ওপর এর আঘাত সবচেয়ে বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সর্বজনীন বিনিয়োগ, যেমন বাঁধ নির্মাণ ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র বহু প্রাণ বাঁচিয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতি কমিয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের উদাহরণে দেখা যায়, লক্ষ্যভিত্তিক সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি এবং হালনাগাদ তথ্যের সমন্বয় দ্রুত সম্প্রসারণযোগ্য এবং দুর্বল জনগোষ্ঠীকে কার্যকর সহায়তা প্রদান করতে পারে। তবে সরকারের আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে যেখানে পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ সীমিত, সেখানে একটি বিস্তৃত নীতি প্যাকেজের মাধ্যমে বেসরকারি খাতকে অভিযোজন সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করা প্রয়োজন।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটান বিভাগের ডিরেক্টর জ্যঁ পেসমে বলেন, বাংলাদেশের জলবায়ু সহনশীলতা বারবার নতুনভাবে পরীক্ষিত হচ্ছে। অভিযোজন ব্যাপক হলেও ঝুঁকি দ্রুত বাড়ছে, ফলে আরও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। দেশের সহনশীলতা গড়ে তুলতে আগাম সতর্কবার্তা ব্যবস্থা, সামাজিক সুরক্ষা, জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি এবং ঝুঁকিভিত্তিক অর্থায়ন বাড়াতে হবে। শহরাঞ্চলে লক্ষ্যভিত্তিক হস্তক্ষেপও জরুরি।
বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও প্রতিবেদনের সহ-লেখক সিদ্ধার্থ শর্মা বলেন, জলবায়ু অভিযোজনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভিজ্ঞতার দিক থেকে যেমন উদাহরণ, তেমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার ক্ষেত্রও।
৯ ঘণ্টা আগে