কখনও এক, কখনও তিন ম্যাচ: এমএলএস প্লে-অফের বিভ্রান্তিকর নিয়মের ব্যাখ্যা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকার (এমএলএস) আবারও আলোচনায়—তবে তা বিশ্ব ফুটবলের মহাতারকা লিওনেল মেসির খেলার জন্য নয় এবার কারণ লিগটির অদ্ভুত সব নিয়মের জন্য। মেসিদের এই লিগে প্লে-অফের নিয়ম এতটাই জটিল যে নবাগত তো দূরের কথা, বছরের পুরোনো অনুসারীরাও মাঝে মাঝে বিভ্রান্ত হন। কোথাও এক ম্যাচ, কোথাও তিন ম্যাচ, আবার ফাইনালে গিয়ে সব বদলে একক নকআউটে পরিণত হওয়া—সব মিলিয়ে এমএলএসের প্লে-অফ কাঠামো ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে অদ্ভুত নিয়মগুলোর একটি। কালবেলার পাঠকদের জন্য ব্যাখা করা হল বর্তমানে জনপ্রিয় হতে থাকা এই লিগটির প্লে-অফ নিয়ম।
প্রথম রাউন্ডেই বিভ্রান্তির শুরু: তিন ম্যাচের সিরিজ
ইউরোপ বা দক্ষিণ আমেরিকায় নকআউট মানেই এক ম্যাচে সব সিদ্ধান্ত। কিন্তু এমএলএস সেই হাঁটায় নেই। প্লে-অফ শুরুর প্রথম রাউন্ডটিতে থাকে বেস্ট-অফ-থ্রি সিরিজ— অর্থাৎ সর্বোচ্চ তিন ম্যাচ তবে সেটি আবার শর্ত সাপেক্ষে।
যদি কোন দল দুটি ম্যাচ শুরুতেই জিতে নেয়, তারাই উঠবে পরের রাউন্ডে। সেক্ষেত্রে তৃতীয় ম্যাচের দরকার নেই।
ম্যাচ ড্র হলে নেই অতিরিক্ত সময়—সরাসরি টাইব্রেকার পেনাল্টি!
হোম-অ্যাওয়ে সুবিধাও নির্দিষ্ট নয়—মূল লিগে উপরের দিকে থাকা দল পায় প্রথম এবং প্রয়োজন হলে তৃতীয় ম্যাচের মাঠ।
ফুটবলবিশ্বে এই নিয়ম সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী। কারণ নকআউটে একই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ২-৩ ম্যাচ খুব কমই দেখা যায়।
দ্বিতীয় রাউন্ডে হঠাৎ বদল: এবার এক ম্যাচেই সবকিছু
প্রথম রাউন্ড পেরোলেই আসে কনফারেন্স সেমিফাইনাল আর ফাইনাল—এবার আর সিরিজ নয়, এক ম্যাচ—জিতলেই উঠবে, হারলেই বিদায়। লিগে উপরের দিকে থাকা দলের মাঠে হয় এই ম্যাচগুলো।
এমন অদ্ভুত পরিবর্তনে অবশ্য লিগের ব্যাখ্যা বেশ পরিস্কার—
প্রথম রাউন্ডে বেশি ম্যাচ = বেশি উত্তেজনা, বাকি রাউন্ডে এক ম্যাচ = ডু অর ডাই নাটকীয়তা।
তবে সমালোচকদের যুক্তি—অপ্রয়োজনীয় জটিলতা।
শেষ ধাপ: এমএলএস কাপ—এক ম্যাচ, নিরপেক্ষ শোডাউন
শেষ পর্যন্ত আসে মৌসুমের সবচেয়ে বড় ম্যাচ—এমএলএস কাপ ফাইনাল।
এটিও এক ম্যাচের লড়াই, তবে নকআউট স্টাইলে।
এই ফাইনালও বেশ আলাদা—
নিরপেক্ষ মাঠ সবসময় দেওয়া হয় না।
বরং যে দল রেগুলার সিজনে বেশি পয়েন্ট করে, সেই দলই ফাইনাল আয়োজনের অধিকার পায়।
এই অদ্ভুত নিয়ম কেন?
এমএলএসের যুক্তি একটাই—বেশি ম্যাচ = বেশি রাজস্ব, বেশি দর্শক, বেশি সম্প্রচার আয়।
এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য স্পোর্টস (NBA, MLB, NHL) তিন বা সাত ম্যাচ সিরিজ ভিত্তিক হওয়ায় ফুটবলকেও ‘আমেরিকান স্টাইল’-এর ছোঁয়া দিতে চায় তারা।
ভক্তরা কী বলছেন?
অনেক সমর্থক মনে করেন—এই কাঠামো “জটিল”, “অনিয়মিত” এবং ফুটবলের ঐতিহ্যবিরুদ্ধ। অনেকে আবার উপভোগ করেন বাড়তি নাটকীয়তা ও লম্বা সিরিজের লড়াই।
এমএলএসের প্লে-অফ কাঠামো বোঝা সত্যিই কঠিন—প্রথম রাউন্ডে তিন ম্যাচ, পরে হঠাৎ এক ম্যাচ, আর শেষ পর্যন্ত আবার একক ফাইনাল। তবে যত বিতর্কই হোক, দর্শক টানার ক্ষেত্রে লিগটি সফল। আর মেসি, সুয়ারেজ, বুসকেটসদের মতো তারকার উপস্থিতিতে এখন বিশ্বজুড়েই এই অদ্ভুত নিয়ম নিয়ে আগ্রহ আরও বেড়েছে।