কলকাতায় নিরাপত্তা নিয়ে ‘গুরুতর হুমকি’ অনুভব করেন মেসি
কলকাতার জন্য যা হওয়ার কথা ছিল ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেওয়ার এক গর্বের দিন, সেটিই মুহূর্তে রূপ নেয় বিশৃঙ্খলা ও আতঙ্কের ঘটনায়। ‘গোট ইন্ডিয়া ট্যুর ২০২৫’-এর অংশ হিসেবে সল্টলেক স্টেডিয়ামে পৌঁছেই নিজের নিরাপত্তা নিয়ে ‘গুরুতর হুমকি’ অনুভব করেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা লিওনেল মেসি। নিরাপত্তা ব্যবস্থার চরম অব্যবস্থাপনা, ভিআইপি ভিড়ের লাগামছাড়া আচরণ এবং সেলফি-আসক্ত পুলিশের কারণে মাত্র ২২ মিনিটের মধ্যেই স্টেডিয়াম ছাড়তে বাধ্য হন বিশ্বকাপজয়ী এই ফুটবলার।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মেসি ও তার টিম শুরু থেকেই স্টেডিয়ামের নিরাপত্তা নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে, যখন রাজনীতিক, আয়োজক ও ভিআইপির ভিড়ে এক ব্যক্তি অটোগ্রাফ নিতে গিয়ে কলমের আঁচড়ে মেসির শরীরে আঘাত করেন। ঘটনাটি মেসির নিরাপত্তা শঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে আয়োজক শতদ্রু দত্তকে জানিয়ে দেন, তিনি আর স্টেডিয়ামে থাকতে চান না। পরে সে আয়োজকই অব্যবস্থাপনার দায়ে পুলিশ হেফাজতে যান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিপর্যয়ের সূত্রপাত ঘটে নির্বিচারে ভিআইপি পাস বিতরণের মাধ্যমে। এমনকি এক ভিআইপি পাসধারীকে দেখা যায়, দর্শকদের দিকে হাত নাড়তে থাকা মেসির হাত চেপে ধরে সেলফি তুলতে। সকাল সাড়ে ১১টায় মেসি, লুইস সুয়ারেজ ও রদ্রিগো দে পল স্টেডিয়ামে পৌঁছানোর পরপরই পুলিশ, রাজনীতিক ও ভিআইপিদের সেলফি হুড়োহুড়ি শুরু হয়।
শুরুর দিকে হাসিমুখে সাবেক ভারতীয় ফুটবলার মেহতাব হোসেন ও দীপেন্দু বিশ্বাসের অভিবাদন গ্রহণ করলেও দ্রুতই অস্বস্তিতে পড়েন মেসি। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যে, কিছু সেলফি-প্রার্থী তাকে ধাক্কাধাক্কি করতেও কুণ্ঠা করেননি। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও মেসির টিম বুঝে যায়, পরিস্থিতি আর নিয়ন্ত্রণে নেই।
ভিআইপি গ্যালারির দিকে যাওয়ার সময় এক নারী অটোগ্রাফ নিতে দৌড়ে এলে ভিড়ে চাপ তৈরি হয়। তখনই মেসির ম্যানেজারকে স্প্যানিশ ভাষায় ‘ভিদা’ বলতে শোনা যায়—যার অর্থ ‘জীবন’। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সেটিই ছিল স্পষ্ট ইঙ্গিত—মেসির টিম তার নিরাপত্তা নিয়ে চরম আশঙ্কায় পড়েছে।
মাত্র ২২ মিনিটের মাথায় স্টেডিয়াম ত্যাগ করেন মেসি। তাকে এক ঝলক দেখার আশায় বিপুল অর্থ খরচ করে আসা দর্শকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। মেসি চলে যাওয়ার পর শুরু হয় ভাঙচুর, যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ২.৫ কোটি রুপি।
কলকাতার সেই দুঃস্বপ্নের পর হায়দরাবাদ ও মুম্বাইয়ে সফরের বাকি অংশ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হলেও, সল্টলেকের এই ঘটনা ভারতের মাটিতে মেসির সফরের ইতিহাসে এক বিব্রতকর অধ্যায় হয়ে থাকবে।