সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২
ফোকাস ডেস্ক
প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২০ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কেন শেষ হয় না সিরিয়ার লড়াই

কেন শেষ হয় না সিরিয়ার লড়াই

ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের দিক দিয়ে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গৃহযুদ্ধ হলো সিরিয়ার সংঘাত। এতে ৫ লক্ষাধিক মানুষ নিহত ও সোয়া কোটির বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ৫০ লাখ সিরীয় শরণার্থী হিসেবে বিদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। জাতিসংঘের হিসাব এমনটা হলেও বাস্তবে এ সংখ্যা আরও ব্যাপক। বাশার আল আসাদ সরকারের পতনের পর এ সংঘাত শেষ হয়েছে বলে অনেকে ধারণা করলেও বাস্তব পরিস্থিতি তা বলছে না। বর্তমানে দেশটির উপকূলীয় এলাকায় আলাইউদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর এবং দ্রুজ যোদ্ধা ও সুন্নি বেদুইন গোষ্ঠীদের মধ্যে সংঘাত চলছে।

২০০০ সালের জুলাইয়ে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন বাশার আল আসাদ। একই সময়ে তিনি বাথ পার্টির নেতা ও সামরিক বাহিনীর প্রধানের দায়িত্বও নেন। তবে তার শাসনের এক দশক পর ২০১১ সালে সিরিয়ার জনগণ গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলনে মাঠে নামলে তিনি কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেন।

২০১৩ সালে দামেস্কের কাছে বিরোধী অধ্যুষিত পূর্বাঞ্চলীয় ঘৌতায় রাসায়নিক হামলা হলে শত শত মানুষ মারা যান। পশ্চিমারা এবং সিরিয়ার বিরোধী গোষ্ঠীগুলো এ হামলার জন্য আসাদ সরকারকে দায়ী করে। তবে দামেস্ক এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে। পরে আন্তর্জাতিক চাপে তারা রাসায়নিক অস্ত্রের মজুত ধ্বংস করতে রাজি হয়। কিন্তু তাতে করে সিরিয়া যুদ্ধের নৃশংসতা কমেনি। আরও রাসায়নিক হামলা হয়েছে পরবর্তী সময়ে। জাতিসংঘের একটি কমিশন সংঘাতে জড়িত সব পক্ষের বিরুদ্ধেই হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে।

২০১৫ সালে প্রায় পতনের দ্বারপ্রান্তে চলে যায় আসাদ সরকার। দেশের বড় অংশের ওপরই তখন বাশার আল আসাদে কর্তৃত্ব ছিল না।

তবে পরে রাশিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো আবার পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন বাশার আল আসাদ।

২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক সমঝোতার আলোকে সরকারি বাহিনী সিরিয়ার বেশিরভাগ এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। যদিও ইসলামপন্থি বিরোধী গ্রুপগুলো এবং কুর্দি মিলিশিয়ারা দেশটির উত্তর এবং উত্তরপূর্ব এলাকায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পেরেছিল। ওই সমঝোতা আসাদের অবস্থানকে শক্তিশালী করে এবং তিনি আরব কূটনৈতিক অঙ্গনে ফিরে আসেন।

নিজের শাসনের তৃতীয় দশকে দেশের ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও মনে হচ্ছিল যে, প্রেসিডেন্ট তার বড় চ্যালেঞ্জগুলো উতরে গেছেন। তবে ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস-ইসরায়েলে হামলা করলে গাজা যুদ্ধের সূচনা হয়, যা লেবাননেও ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রভাব পড়ে আসাদের সহযোগী হিজবুল্লাহর ওপর। হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহও নিহত হন। লেবাননে যেদিন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, সেদিনই বিস্ময়করভাবে হামলা করে দ্রুত আলেপ্পো দখল করে নেয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শামের (এইচটিএস) নেতৃত্বাধীন বিরোধী গোষ্ঠী। তারা দ্রুতগতিতে এগিয়ে হামা ও অন্যান্য শহর দখল করে নেয়। দক্ষিণাঞ্চলে তখনো সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ছিল। কিন্তু আসাদের অবস্থান দ্রুতই নড়বড়ে হয়ে পড়ে। কারণ, গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ইরান ও রাশিয়া তার সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারছিল না। শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহীরা দামেস্কে ঢুকে পড়ে এবং বিদ্রোহীদের সশস্ত্র অভিযানের মুখে বাশার আল আসাদ ব্যক্তিগত বিমানে করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মাধ্যমেই সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের ৫৩ বছরের শাসনামলের অবসান হলো। এতে অনেকে দেশটিতে গৃহযুদ্ধের অবসান হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।

বর্তমানে দেশটির উপকূলীয় অঞ্চলে ক্ষমতাচ্যুত আসাদের গোত্র আলাইউ সম্প্রদায়ের লোকদের দমনে গেলে তাদের সঙ্গে শারার বাহিনীর সংঘাত চলছে। সেখানে সংঘাত চলছে। এর মধ্যে কয়েকদিন আগে সুয়েইদা প্রদেশে সংঘাত ছড়িয়েছে। দ্রুত গোষ্ঠী অধ্যুষিত এ প্রদেশে তাদের সঙ্গে সুন্নি বেদুইন গোষ্ঠীর সদস্যদের মুখোমুখি সংঘর্ষে শত শত মানুষ নিহত হন।

ক্ষমতার পালাবদল হলেও গৃহযুদ্ধ না থামার কারণ নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে। এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে।

কেন সংঘাত থামে না: চলমান সংঘাতের অন্যতম প্রধান কারণ বিদেশি স্বার্থ। সিরিয়া এখন এক বৈশ্বিক দাবা বোর্ডে পরিণত হয়েছে, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিগুলো তাদের কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য মিত্রদের সাহায্য করার ভান ধরে আসছে। অন্যতম প্রধান কারণ অর্থনৈতিক ধস ও মানবিক সংকট। আরেকটি কারণ হচ্ছে কর্তৃত্ববাদী শাসন। ক্ষমতা ধরে রাখতে শারার সরকার সহিংসতা ও দমনপীড়নের ওপর নির্ভর করেছে। এটি অসন্তোষ উসকে দিয়েছে এবং সংঘাতকে দীর্ঘায়িত করছে। বর্তমান সংঘাতের অন্যতম কারণ বিভক্ত সমাজ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে : মিডিয়া সেল 

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নারীর মর্যাদা সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন হবে : এসএম জাহাঙ্গীর

অ্যানফিল্ডে এক দশকের অভিশাপ ভাঙল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

রূপনগরে আগুন / ডিএনএ শনাক্তের পর ১৬ মরদেহ পেলেন স্বজনেরা

জবি শিক্ষার্থী জুবায়েদ হত্যার ঘটনায় তার ছাত্রী আটক 

সুন্দরবনের সম্পদ রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : বাসস চেয়ারম্যান

রোমাঞ্চকর জয়ে ভারতকে হারিয়ে সেমিতে ইংল্যান্ড

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক

‘আগুন লাগার ঘটনা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে’

কিডনি রোগীদের জন্য যে ১০ খাবার নিষেধ

১০

গাজায় আবারও ইসরায়েলের বিমান হামলা 

১১

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে কালবেলার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

১২

আ.লীগের কেন্দ্রীয় ১ নেতা গ্রেপ্তার

১৩

হোটেলে নাশতা খেয়ে শিশুসহ ৬ জন অজ্ঞান

১৪

তাঁতিবাজারে জবি শিক্ষার্থীদের অবরোধ

১৫

তিন ধর্মের উপাসনাস্থল নির্মিত হচ্ছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে

১৬

সীমান্তে ১২ কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ

১৭

রাজধানীতে ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৮

বিএনপি ক্ষমতায় এলে সব দুঃশাসনের কবর দেওয়া হবে : জুয়েল

১৯

সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো ষড়যন্ত্রের অংশ : সারজিস

২০
X