সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়িঘর, স্থাপনাসহ অন্যান্য বিভিন্ন ম্যুরাল-ভাস্কর্যে হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, চাঁদাবাজি, নাশকতা, সরকারবিরোধী নানা উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে যে বিশৃঙ্খলাময় ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে গভীর উদ্বেগের।
চলমান পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগে গত শনিবার সন্ধ্যা থেকে দেশব্যাপী একযোগে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু করেছে যৌথ বাহিনী। দেশব্যাপী বিরাজমান বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ড এবং সর্বশেষ গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর দুর্বৃত্তদের হামলার পরিপ্রেক্ষিতেই শুরু এ অভিযান। অভিযানের প্রধান লক্ষ্য সার্বিকভাবে সমাজে স্থিতিশীলতা আনয়ন। অবৈধ অস্ত্রধারী, চাঁদাবাজ, নাশকতাকারী, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। পাশাপাশি জুলাই বিপ্লবের সময় থানা ও ফাঁড়ি থেকে লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধারকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
রোববার কালবেলায় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সম্প্রতি বিতর্কিত একটি পার্টির পলাতক কিছু নেতাকর্মী পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সরকারবিরোধী নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে। তারা টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ খুলে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে তাদের নেতাকর্মীদের সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে। তাদের এসব উসকানিমূলক বক্তব্য শুনে দেশে থাকা ওই পার্টির নেতাকর্মীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত পলাতক সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। ফেসবুক উসকানিমূলক বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ভারতে পলাতক শেখ হাসিনার উসকানি ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচার হয়। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন নেতা উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এসব বক্তব্য শুনে বিতর্কিত পার্টির কিছু নেতাকর্মী বিভ্রান্ত হয়ে পরিকল্পিতভাবে নানামুখী নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে সারা দেশ থেকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটক করা হয়েছে কিছুসংখ্যক মানুষকে। তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।
এর আগে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুরসহ দেশব্যাপী অস্থিরতার প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এক বিবৃতির মাধ্যমে চলমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এসব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করে সরকারের প্রতি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানায়। উদ্বেগ জানায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সব মিলিয়ে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে যৌথ বাহিনীর এ অভিযানকে ইতিবাচক বলছে একাধিক রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন সংগঠন। তারা মনে করছে, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে এ অভিযান সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
আমরা মনে করি, যে কোনো উপায়ে দেশব্যাপী বিরাজমান অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলার অবসান অত্যন্ত জরুরি। কেননা এ অস্থিরতা দেশের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নানাভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ অবস্থার প্রভাব পড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, রাজনীতি, মানুষের ব্যক্তি-পারিবারিক জায়গায়। বহির্বিশ্বে ক্ষুণ্ন করছে দেশের ভাবমূর্তি। এক কথায় দেশ অস্থিতিশীল হলে সার্বিকভাবেই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়, যা যে কোনো দেশের জন্যই অশনিসংকেত। এমন একটি অবস্থায় স্থিতিশীলতা ফেরানোর লক্ষ্যে সরকারের নতুন এ অভিযান যেন সফল হয়, এটাই সবার প্রত্যাশা। একই সঙ্গে এটাও নিশ্চিত করতে হবে যেন নিরীহ-নিরপরাধ মানুষ এ অভিযানের শিকার না হন।