শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র মা-দুর্গাকে কখনো নিছক মাটির প্রতিমা হিসেবে দেখেননি। তার দৃষ্টিতে, প্রতিমার মধ্যে যাকে আমরা পূজা করি, তিনি আসলে প্রতিটি ঘরের দেহধারী মা। তাই দুর্গাপূজার আসল অর্থ হলো—নিজের মায়ের প্রতি ভক্তি, ভালোবাসা ও সেবার মধ্যে দিয়ে মাতৃভাবকে জাগ্রত করা। শ্রীশ্রীঠাকুর তাই বলেছেন—
“ভগবতীপূজা করি, তার মানে—
নিজের মাকেই উপাসনা করি।”
মা-দুর্গার দশভুজা রূপের মধ্যেও আছে গভীর তাৎপর্য। ঘরের মা যদিও দ্বিভুজা, কিন্তু তিনি সংসারের ভার কাঁধে নিয়ে প্রতিদিনই যেন দশ হাতের কাজ করেন। স্বামী, সন্তান, গুরুজন, আত্মীয়-অতিথি—সবাইকে সেবা দেওয়া, আহারের ব্যবস্থা করা, ছোটদের শিক্ষা-লালন, সংসারে সাশ্রয় রাখা—এই সবকিছুর ভার তিনি সামলান অবিরাম। তাই প্রকৃত অর্থে প্রতিটি মা-ই পূর্ণ নারীত্বের প্রতীক, প্রকৃত দশভুজা।
মায়ের হাতে যে দশপ্রহরণ, সেগুলো অস্ত্র হলেও কেবল অলংকার নয়; এগুলো তার শক্তির প্রতীক। অহংকার, লোভ, ক্রোধ, অভিমান, হিংসা ইত্যাদি অসুর-স্বভাবকে দমন করার শক্তিই হলো আসল অস্ত্র। তাই মা দুর্গতিনাশিনী, অসুরদলনী। মহিষাসুর বধের অর্থও তাই—আত্মম্ভরিতা ও পাশবিক ভোগলোলুপতার দমন। মানুষের ভেতরের পশুভাব নিয়ন্ত্রণ করে দেবভাব প্রতিষ্ঠা করাই মায়ের কাজ।
শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবনের অভিজ্ঞতাও দেখায়, মায়ের প্রতি আকুল টান থাকলে সন্তানের পক্ষে প্রলোভন বা অসৎ টানে ভেসে যাওয়া সম্ভব নয়। মাতৃস্মরণই তখন হয়ে ওঠে রক্ষাকবচ। মা সবারই মা, তিনি কাউকে ত্যাগ করেন না; সবার মঙ্গলই তার কামনা। তাই তার নাম জগদ্ধাত্রী—যিনি বিভক্তিকে মিলন ঘটান, অশান্তিকে শান্তিতে রূপান্তরিত করেন।
অতএব মা-দুর্গা শুধু শরৎকালের এক উৎসব নন। তিনি ঘরের মায়ের মধ্যেই জীবন্ত। তিনি অসৎ দমন করেন শক্তি দিয়ে, আবার সন্তানের কাছে হন স্নেহময়ী আশ্রয়। তাই তিনি একই সঙ্গে দশভুজা শক্তির প্রতীক এবং দ্বিভুজা জননীর স্নেহময় রূপ। যারা তাকে ভক্তি করে, তাকে স্মরণ করে, তাদের জীবন শুভ ও নির্ভয় হয়ে ওঠে।
লেখক: সহ-সম্পাদক সৎসঙ্গ বাংলাদেশ ঢাকা
তথ্যসূত্র: শ্রীশ্রীঠাকুরের দৃষ্টিতে দেবদেবী: শ্রী দেবীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
মন্তব্য করুন