দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ দৃশ্যপট। মিয়ানমারের স্বাধীনতার পর থেকে সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে অভ্যন্তরে সংঘাত চলমান থাকলেও দেশটির জান্তা বা সামরিক শাসকরা এবারের সংকট সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
বিশেষ করে অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সমর্থন নিয়ে সরকারের বিরোধিতা করা শান রাজ্যের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর একজোট হয়ে চালানো একের পর এক হামলা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে ক্ষমতায় থাকা দেশটির সামরিক বাহিনী। প্রতিদিনই গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে আসছে বিদ্রোহী বাহিনীর কাছে প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ হারানো ও প্রতিবেশী দেশে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আশ্রয় নেওয়ার খবর। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের ৭৫ বছরের দীর্ঘ ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন। সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়েছে। এ অবস্থায় নতুন সদস্য সংগ্রহের কাজটি বেশ কঠিন। বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যাওয়া সেনাসদস্যরা বলছে, সেনাবাহিনী সদস্যরা এত বেশি মানবতাবিরোধী কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত যে, এই বাহিনীতে নতুন করে আর কেউ যুক্ত হতে চায় না।
সোমবার কালবেলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে ভয়াবহ লড়াই চলছে। বুচিডংয়ে একটি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামে বিমান থেকে বোমাবর্ষণ শুরু করেছে জান্তার সেনারা। এতে সেখানকার একটি বাজার ভস্মীভূত হয়েছে। চলমান এ সংঘাতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বহু সদস্য হতাহত হয়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ফের সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে সীমান্ত জুড়ে চলছে উদ্বেগ। অবশ্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সীমান্ত এলাকায় কড়া নজরদারি শুরু করেছে। যে কোনো ধরনের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। এরই মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়া মিয়ানমারের এক নাগরিককে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘বিজিবির তৎপরতায় সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। রোহিঙ্গারা যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য বিজিবি অ্যালার্ট আছে।’ আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন, আমাদের জনগণও তাদের দুয়ার উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। কিন্তু এখন স্থানীয়রাই সংখ্যালঘু, রোহিঙ্গা বেশি এবং নিরাপত্তা, মাদকসহ নানা সমস্যা সেখানে সৃষ্টি হচ্ছে।’
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, মানবিক সহায়তায় সাড়াদানের ক্ষেত্রে নিজেদের সমর্থন আরও বৃদ্ধির মাধ্যমে বিদেশি সরকারগুলো আশ্রিত রোহিঙ্গাদের আশু স্বস্তির ব্যবস্থা করতে পারে। একই সঙ্গে, দীর্ঘস্থায়ী সংকটের সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে দাতাদের সহযোগিতায় ত্রাণ সহায়তা দক্ষতা ও আশ্রিত রোহিঙ্গাদের স্বনির্ভরতা বাড়াতে ঢাকার উচিত নিজেদের নীতি-কৌশলে সমন্বয় সাধন করা। শরণার্থীশিবিরগুলোতে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানোর বিষয়টিও খতিয়ে দেখা উচিত।
তবে আমরা মনে করি, রোহিঙ্গাদের বিষয়টি অত্যন্ত জটিল। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এটা আরও জটিল হচ্ছে। এমনকি অভ্যন্তরীণ এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি ক্রমেই বাড়ছে। তাই আমাদের উচিত হবে সবদিক বিবেচনায় নিয়ে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া। বিশেষ করে এ সংকট যাতে আরও বিস্তৃত না হয় সেদিকে বাড়তি নজর দেওয়া। অর্থাৎ আমাদের সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে, যাতে সেখান থেকে আমাদের দেশে কেউ অবৈধভাবে ঢুকতে না পারে।