বর্ষা মৌসুম এলেই পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের সরানোর তোড়জোড় বাড়ে। চলে জেলা প্রশাসনের অভিযান। এতে অবৈধভাবে নেওয়া বিদ্যুৎ, ওয়াসা ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ধসের শঙ্কায় পাহাড় থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হলেও এখন পর্যন্ত এক চুলও সরেনি বসতকারীরা।
চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার, টাঙ্কির পাহাড়, মতিঝর্ণা, বাটালি হিল ও পোড়া কলোনির পাহাড়, ষোলশহর স্টেশন সংলগ্ন পাহাড়, বিজয় নগর, আকবর শাহ থানার ফয়’স লেক সংলগ্ন ১ নম্বর ঝিল, ২ নম্বর ঝিল, ৩ নম্বর ঝিল এলাকা ও শান্তিনগর এলাকা, ফিরোজ শাহ কলোনি, বেলতলি ঘোনা, চান্দগাঁ থানার আমিন জুট মিলস পাহাড়, ভেড়া ফকিরের পাহাড়, বার্মা কলোনি, বায়েজিদ লিংক রোড এবং সলিমপুরের পাহাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে।
অভিযোগ আছে, বিরূপ আবহাওয়া কিংবা বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধসের শঙ্কা দেখা দিলেই চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি সরিয়ে নেওয়ার তোড়জোড় শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন। তৎক্ষণাৎ ঝুঁকি এড়াতে নগরীর লালখান বাজারের মতিঝর্ণা, নাছিয়াঘোনা, বাটালি হিল, ফিরোজ শাহ হাউজিং এস্টেট সংলগ্ন এলাকা, আকবর শাহ ও পাহাড়তলী এলাকার পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণদের সরিয়ে নিরাপদে আনা হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও তারা পাহাড়ে ফিরে যান। কিন্তু এর কোনো স্থায়ী সমাধান হয় না। বিগত কয়েক বছরে চট্টগ্রামে পাহাড় ও ভূমিধসে বহু হতাহত হলেও কোনো স্থায়ী ও টেকসই ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন।
চট্টগ্রামে মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত রাতভর অব্যাহত ছিল। গতকাল বুধবার সকালেও কখনো টিপটিপ, কখনো অঝোর ধারায় বৃষ্টি হয় নগরী ও এর আশপাশের এলাকায়। এতে নগরীর বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সড়ক ডুবে যাওয়ায় কর্মজীবী মানুষ ও শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল ৩টা থেকে গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৬০ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল সকাল ৬টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত ৯ ঘণ্টায় ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা ইসমাইল ভূঁইয়া বলেন, ‘মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সপ্তাহজুড়ে বৃষ্টিপাত থাকবে। টানা বৃষ্টি হওয়ায় পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে আছে। আর সামান্য বৃষ্টি হলেও পাহাড় ধসে যেতে পারে।
এদিকে পাহাড় ধসের শঙ্কা থাকায় মঙ্গলবার লালখান বাজার, মতি ঝর্ণা, বাটালি হিল, বিশ্ব কলোনি, টাইগার পাস, বায়েজিদ ও আকবর শাহ এলাকার পাহাড়ের ঢালে মাইকিং করা হয়েছে। দুপুর থেকে মাইকিং করে সম্ভাব্য বিপদ এড়াতে বাসিন্দাদের দ্রুত পাহাড়ের পাদদেশ থেকে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রাম মহানগরীতে পাহাড় ধসে ১২৭ জনের প্রাণহানি হয়েছিল। মর্মান্তিক এ ঘটনার পর নগরীসহ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে একটি শক্তিশালী পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটি এরই মধ্যে ১৮ বছর পার করলেও কার্যকর ও ফলপ্রসূ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অথচ এ ১৮ বছরে নগরীসহ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধসে প্রায় সাড়ে ৩০০ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এর পরও ২৬টি
পাহাড়ে ৬ হাজার ৫৫৮টি পরিবার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে যাচ্ছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও এডিসি (রাজস্ব) মো. সাদি উর রহিম জাদিদ কালবেলাকে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বসতি আগে হয়েছে, বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি হচ্ছে না। ঝুঁকিপূর্ণ বসতির একটি তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মূলত তাদের সরাতে হলে পুনর্বাসনের প্রয়োজন। সে জন্য আমরা সরাসরি উচ্ছেদে যাচ্ছি না। আমরা একটি ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে কাজ করছি। মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা এলে কাজ শুরু করব। তিনি আরও বলেন, বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকে আমাদের জোনওয়াইজ যে পাঁচটি কমিটি আছে, তারা পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। আমাদের সাতটি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। ভলান্টিয়ারের মাধ্যমে মাইকিং করা হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ বসতিদের পাহাড় থেকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন