সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২
জ ই আকাশ, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ)
প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২৫, ০৭:৪২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ভরা বর্ষায়ও পানিশূন্য বিল বেকায়দায় কৃষক-জেলে

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর
ভরা বর্ষায়ও পানিশূন্য বিল বেকায়দায় কৃষক-জেলে

আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণ—এই ভরা বর্ষায়ও মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের সবচেয়ে বৃহৎ বিল তিনটি—ভাতছালা, দিয়ার ও গোপীনাথপুর বিল এখনো পানিশূন্য। এতে করে বিপাকে রয়েছে এসব বিল এলাকার শত শত জেলে ও কৃষক পরিবার। বিলে পানি না আসায় মিলছে না মাছ; পানির অভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে হাজার হাজার বিঘা জমিতে বোনা আমন ধান।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভাতছালা বিল, দিয়ার বিল ও গোপীনাথপুর বিলে পানি প্রবেশ করে ইছামতী নদী দিয়ে। আর উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকায় পদ্মার সঙ্গে মিলিত হয়েছে ইছামতি। সম্প্রতি পদ্মা থেকে ইছামতি নদীতে পানি প্রবেশ করেছে। তবে পানি প্রবেশ করতে পারছে না বৃহত্তর এ তিনটি বিলসহ বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য ছোটখাটো বিল-বাঁওড়েও। এর একমাত্র কারণ গ্রামীণ জনপদ উন্নয়নে ইছামতী নদীর সঙ্গে মিলিত বেশ কয়েকটি খালের মুখে বাঁধ। এসব বাঁধের কারণে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

কয়েকজ কৃষক ও জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৫-৩০ বছর আগে পদ্মা নদী থেকে ইছামতী নদী হয়ে ভাতছালা বিল, দিয়ার বিল ও গোপীনাথপুর বিলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি প্রবেশ করত। ইছামতী নদীর দড়িকান্দি-বাহিরচর বাজার পয়েন্ট, একই নদীতে দড়িকান্দি-বাহিরচরে আরও একটি বাঁধ এবং লেছড়াগঞ্জ বাজার দিয়াপার বাঁধের কারণে ইছামতী নদী হয়ে পদ্মার পানি এখন আর বালিরটেক হয়ে কালীগঙ্গা নদীতে প্রবেশ করে না। ফলে নদীর পার থেকে ছোট খাল হয়ে আর বিলে পানি প্রবেশ করতে পারে না। এ ছাড়া গোপীনাথপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর পদ্মাপাড় থেকে ইছামতী নদীর রামকৃষ্ণপুর মোল্লাবাড়ীর খাল হয়েও ইছামতী নদীর বাহিরচরে পানি প্রবেশ করত। সে খালেও বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ফলে বাহিরচর, পিয়াজচর ও দিয়াপাড়-পিয়াজচর দিয়ে দিয়ার বিলে পানি প্রবেশ করতে পারছে না।

অন্যদিকে ইছামতী নদী পানিপ্রবাহ বন্ধ থাকায় চালা ইউনিয়নের আগ্রাইল-দড়িকান্দি, খলিলপুর দিয়ে ভাতছালা বিলে পানি প্রবেশ করতে পারছে না। আগ্রাইলের উৎপল মাঝির বাড়িসংলগ্ন ছোট সেতু বন্ধ করে পাকা সড়ক করা হয়েছে। ভাতছালা বিলে এখন কালীগঙ্গা নদীর বালিরটেক থেকে ইছামতী নদী হয়ে উল্টো দিক থেকে সরু সট্টি খাল দিয়ে পানি প্রবেশ করে। একসময় জুন মাসের শুরু বা মাঝামাঝিতে পানি এলেও জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়েও বিলে পানি প্রবেশ করতে পারেনি।

স্থানীয় আগ্রাইল গ্রামের বাসিন্দা সজল রাজবংশী বলেন, ‘৩৫ বছর ধরে মাছ ধরি, সেই মাছ বিক্রি করে সংসার চালাই। একসময় ২০-৩০টি বেড় জালের নৌকা বিলে মাছ ধরত। প্রতিটি জেলে নৌকায় ১০-১২ জন লোক থাকত। আষাঢ় মাসে ২-৪ দিনে বিভিন্ন জায়গা দিয়ে বিলে পানি ঢুকে ভরে যেত। ৫-৬ মাস বিলে আমরা মাছ ধরেছি। আর এখন আষাঢ় শেষ হয়ে শ্রাবণ মাস। কিন্তু বিলে পানি ঢোকেনি। বিলে পানি ঢোকার জায়গা সব বাঁধ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। ওইসব জায়গায় কালভার্ট দিলেও কিছু পানি ঢুকত। ইছামতী নদীতেই তো বাঁধের কারণে পানি আসে না, বিলে ঢুকব কেমনে।’

সদর উপজেলার খাবাশপুর গ্রামের নাইম শিকদার বলেন, ‘সদর উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ও হরিরামপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের কৃষক ভাতছালা বিলে ফসল ফলান। ওই সব এলাকার জেলেরাও ভাতছালা বিলে মাছ ধরেন। পানির অভাবে ফসল ফলানো, মাছ ধরা—কিছুই করতে পারছেন না তারা।’

হরিরামপুর উপজেলার রাজরা লাউতা গ্রামের পরিমল রাজবংশী বলেন, ‘আমার বাবা-দাদা ভাতছালা বিলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আমিও ভাতছালা বিলে মাছ ধরি। রাজরা, আগ্রাইল, দড়িকান্দি, লাউতা, বৈকুণ্ঠপুর, গোয়ালনগরসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের জেলেরা এই বিলে মাছ ধরেন। কয়েক বছর হলো বিলে পানি হয় না। তাই দেশীয় মাছের পাশাপাশি চাষের মাছ কিনে বিক্রি করি। বিলে পানি ঢোকার ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।’

আগ্রাইল গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মোসলেম খাঁ বলেন, ‘৫০-৬০ বছর আগে থেইকা ভাতছালা বিলে ফসল বুনি, ধান লাগাই। এহন আমরা পানির কষ্টে আছি, পাট জাগ দেওয়ার পানিও নাই। আমন ধানও বোনা যায় না।’ আগ্রাইল, দড়িকান্দি, খলিলপুর, সট্টি, ইজদিয়া, লাউতা, রাজরা, গোয়ালনগর, যাত্রাপুর, উত্তর চাঁদপুর, কল্যাণপুর, সাপাইর, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বরুনা, কৃষ্ণপুর, খাবাশপুরসহ ২০-২২টি গ্রামের বাসিন্দা ভাতছালা বিলে ফসল ফলায় বলেও দাবি করেন তিনি।

গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মোল্লা লাভলু বলেন, ‘গোপীনাথপুর একটা নামকরা বিল। এ বিলে প্রচুর পরিমাণে দেশীয় মাছ পাওয়া যায় এবং প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়। বিশেষ করে আমন ধানের জন্য বিখ্যাত এই গোপীনাথপুর বিল; কিন্তু সঠিক সময়ে পানি না আসায় আমন ধান এবং মাছ দুটো থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা। এই বিলের চারপাশের যেসব জেলে রয়েছেন তারাও মাছ না পাওয়ায় বিপদে। অনেকে আবার অন্য পেশায়ও চলে যাচ্ছেন। বিলের প্রবেশ পথগুলো অনেকটাই বন্ধ রয়েছে। এসব প্রবেশপথ না খুলে দিলে পানি আসবে না।’

মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান খান বলেন, ‘ইছামতী নদী পুনর্খননের মাধ্যমে পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি ও ভাঙন প্রতিরোধে ঘিওর ও দৌলতপুর উপজেলায় জেলা প্রশাসক এক সম্মেলন করেন। সেখানে এ বিষয়ে প্রকল্প গ্রহণের জন্য কারিগরি কমিটি গঠনের প্রস্তাবনা পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া মাঠ পর্যায়ে জরিপকাজ চলমান রয়েছে। আর বিলে পানি প্রবেশসহ হরিরামপুর উপজেলার অংশে ইছামতী নদীর পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করতে সমীক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে : মিডিয়া সেল 

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নারীর মর্যাদা সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন হবে : এসএম জাহাঙ্গীর

অ্যানফিল্ডে এক দশকের অভিশাপ ভাঙল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

রূপনগরে আগুন / ডিএনএ শনাক্তের পর ১৬ মরদেহ পেলেন স্বজনেরা

জবি শিক্ষার্থী জুবায়েদ হত্যার ঘটনায় তার ছাত্রী আটক 

সুন্দরবনের সম্পদ রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : বাসস চেয়ারম্যান

রোমাঞ্চকর জয়ে ভারতকে হারিয়ে সেমিতে ইংল্যান্ড

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক

‘আগুন লাগার ঘটনা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে’

কিডনি রোগীদের জন্য যে ১০ খাবার নিষেধ

১০

গাজায় আবারও ইসরায়েলের বিমান হামলা 

১১

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে কালবেলার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

১২

আ.লীগের কেন্দ্রীয় ১ নেতা গ্রেপ্তার

১৩

হোটেলে নাশতা খেয়ে শিশুসহ ৬ জন অজ্ঞান

১৪

তাঁতিবাজারে জবি শিক্ষার্থীদের অবরোধ

১৫

তিন ধর্মের উপাসনাস্থল নির্মিত হচ্ছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে

১৬

সীমান্তে ১২ কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ

১৭

রাজধানীতে ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৮

বিএনপি ক্ষমতায় এলে সব দুঃশাসনের কবর দেওয়া হবে : জুয়েল

১৯

সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো ষড়যন্ত্রের অংশ : সারজিস

২০
X