আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আবারও ‘জীবন্ত’ করে তোলা হয়েছে আড়াই হাজার বছর আগের দুটি পুরুষের খুলির মুখাবয়ব। ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের কোন্ডাগাই নামে একটি প্রাচীন কবরস্থান থেকে উদ্ধার হওয়া খুলি দুটির এ ডিজিটাল পুনর্গঠনের উদ্দেশ্য ছিল, তামিলনাড়ুর প্রাচীন বাসিন্দারা দেখতে কেমন ছিলেন, তার ধারণা নেওয়া। কিন্তু এ পরীক্ষাটি যেমন ধারণা দিচ্ছে, তাতে বংশগতি ও পূর্বপুরুষের ইতিহাস সম্পর্কেও তুলে ধরে দুর্লভ তথ্য।
রাজ্যটি মধুরাই কামরাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, কৌতূহল থেকেই তারা একটি ক্ষুদ্র ড্রিল ব্যবহার করে একটি খুলির দাঁতের ওপরে থাকা এনামেল সরিয়ে নেন। সেখান থেকে তারা প্রাচীন দক্ষিণ ভারতের মানুষের মুখচ্ছবি ডিজিটালি পুনর্গঠন করেছেন।
কোন্ডাগাই নামে একটি প্রাচীন কবরস্থান থেকে এ দুই পুরুষের খুলি উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানটি কিলাড়ি থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, যেখানে সাম্প্রতিক খননকার্য দক্ষিণ ভারতের ইতিহাসকে নতুন দৃষ্টিকোণ দিয়েছে এবং যা ভারতের রাজনীতিতেও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
তামিলনাড়ু রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের গবেষকদের দাবি, খ্রিষ্টপূর্ব ৫৮০ সালে কিলাড়িতে এক নগরসভ্যতা গড়ে উঠেছিল। এ দাবি ভারতের উপমহাদেশের ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা যোগ করছে। এত দিন পর্যন্ত ভারতের প্রাচীন সভ্যতার ধারণা মূলত উত্তর ও মধ্য ভারতের সিন্ধু সভ্যতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি ছিল।
তবে কিলাড়ির আবিষ্কার বলছে, দক্ষিণ ভারতেও একটি স্বতন্ত্র ও উন্নত প্রাচীন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে, কিলাড়ির মানুষ ছিল শিক্ষিত, দক্ষ এবং তারা উপমহাদেশ ও বাইরের দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য করত। তারা ইটের বাড়িতে বাস করত এবং মৃতদের কবর দেওয়ার সময় বিশাল কবরে মাটির হাঁড়িতে চাল, শস্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য রাখত।
এখন পর্যন্ত কোন্ডাগাই সমাধি থেকে প্রায় ৫০টি পাত্র উদ্ধার করা হয়েছে, যাতে পাওয়া গেছে মানুষের দেহাবশেষ এবং জীবনের নানা নিদর্শন। মধুরাই কামরাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এখন এসব হাড় ও দ্রব্য থেকে ডিএনএ বিশ্লেষণ করছেন, যাতে বোঝা যায় কিলাড়ির মানুষ আসলে কারা ছিল এবং কীভাবে জীবনযাপন করত।
গবেষণার প্রধান অধ্যাপক জি. কুমারেসান বলেন, ‘আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের অভিবাসনের পথ ও উৎস সম্পর্কে জানতে চাই। এ গবেষণা আমাদের অস্তিত্বের মূল প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার একটি প্রয়াস।’
মন্তব্য করুন