বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর যুগে হেডফোন, ইয়ারফোন বা এয়ারপডস আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। গান শোনা, কল রিসিভ, মিটিং বা ক্লাসে অংশগ্রহণ—সবকিছুতেই এই ডিভাইসগুলোর ব্যবহার বেড়েই চলেছে। তবে সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে এগুলো কানে ও মানসিক স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই জেনে নেওয়া জরুরি—হেডফোন ব্যবহারের সঠিক নিয়ম, সময়সীমা, কেনার আগে করণীয় এবং এর সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব।
হেডফোন ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি
মাঝারি শব্দে শুনুন: শব্দের মাত্রা সর্বোচ্চ ৬০% এর মধ্যে রাখুন। উচ্চ শব্দে দীর্ঘ সময় শুনলে শ্রবণশক্তি কমে যেতে পারে।
সীমিত সময় ব্যবহার করুন: প্রতিদিন ৬০ মিনিটের বেশি না শুনাই ভালো। প্রয়োজনে বিরতি দিন।
নয়েজ ক্যানসেলিং ব্যবহার করুন: বাইরের আওয়াজ কমাতে নয়েজ ক্যানসেলিং হেডফোন ব্যবহার করলে শব্দ বাড়িয়ে শুনতে হয় না।
কান পরিস্কার রাখুন: কানে ময়লা থাকলে হেডফোনে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।
শেয়ার না করা ভালো: অন্যের সঙ্গে ইয়ারফোন শেয়ার করলে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
কতক্ষণ ব্যবহার করা উচিত?
প্রতি দিন সর্বোচ্চ ৬০ মিনিট ব্যবহার করুন। শব্দের মাত্রা ৬০ শতাংশের বেশি নয়। একটানা বেশি সময় ব্যবহার না করে প্রতি ৩০ মিনিট পর পর ৫-১০ মিনিট বিরতি নিন।
হেডফোন বা এয়ারপডস কেনার আগে যেসব বিষয় যাচাই করা উচিত
সাউন্ড কোয়ালিটি: কানের ক্ষতি না করেও পরিষ্কার ও ভারসাম্যপূর্ণ সাউন্ড দিতে পারে কিনা যাচাই করুন।
নয়েজ ক্যানসেলিং সুবিধা: বাহ্যিক শব্দ থেকে সুরক্ষা পেতে এই ফিচারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ফিটিং ও কমফোর্ট: দীর্ঘ সময় ব্যবহারে কানে অস্বস্তি বা ব্যথা হয় কিনা যাচাই করুন।
ব্যাটারি লাইফ (ওয়্যারলেস হলে): চার্জ ধরে রাখার সময় ও চার্জিং টাইম দেখে নিন।
ব্র্যান্ড ও রিভিউ: অজানা ব্র্যান্ডের সস্তা পণ্য না কিনে রিভিউ দেখে বিশ্বাসযোগ্য ব্র্যান্ড থেকে কিনুন।
আইপি রেটিং ওয়াটার (পানি)/Sweat (ঘাম) প্রতিরোধ: বিশেষ করে যারা ব্যায়াম বা বাইরে ব্যবহারের জন্য নেন, তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
হেডফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো
শ্রবণশক্তি হ্রাস: দীর্ঘদিন উচ্চ শব্দে ব্যবহারে শ্রবণশক্তি স্থায়ীভাবে কমে যেতে পারে।
কানের ইনফেকশন: ইন-ইয়ার হেডফোন বেশি ব্যবহার করলে কানে ঘাম জমে ফাঙ্গাল বা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হতে পারে।
টিনিটাস (Tinnitus): কানে অনবরত গান বাজানো বা হুইসেল জাতীয় শব্দ শোনা এক ধরনের মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
মাথাব্যথা ও ঘাড়ের সমস্যা: ওভার-দ্য-হেড হেডফোন ভারী হলে অনেকক্ষণ ব্যবহারে মাথা ও ঘাড়ে চাপ সৃষ্টি করে।
মনোযোগের ঘাটতি: সবসময় হেডফোন কানে রাখলে বাইরের পরিবেশের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
প্রযুক্তির সুবিধা ভোগ করতে গিয়ে যদি আমরা নিজেদের শরীরের ক্ষতি করি, তবে সেটি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। হেডফোন, ইয়ারফোন বা এয়ারপডস—যে ধরনের ডিভাইসই হোক না কেন, ব্যবহারে সচেতনতা জরুরি।
মন্তব্য করুন