চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৪, ০৪:১৮ এএম
অনলাইন সংস্করণ

মাদকের ২ হাজার টাকার জন্য শিশু অপহরণ, গ্রেপ্তার ৪

চট্টগ্রামে শিশু অপহরণের দায়ে চারজন গ্রেপ্তার। ছবি : কালবেলা
চট্টগ্রামে শিশু অপহরণের দায়ে চারজন গ্রেপ্তার। ছবি : কালবেলা

বাড়ির সামনে খেলছিল ছয় বছর বসয়ী মেয়েশিশু মাহি। হঠাৎ তার কাছে আসে ১৪ বছরের এক কিশোরী। মাহিকে দাদির বাড়িতে নেবে বলে একটি চিপস হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়। চিপস পেয়ে ছোট্ট মাহিও চলে যায় তার সঙ্গে।

মাহিকে তোলা হয় যাত্রীবাহী একটি লেগুনায়। কিন্তু তখনই ভয় পেয়ে যায় মাহি। চিৎকার করে কান্না করতে থাকে। কিছুতেই থামছিল না তাকে। যাত্রীরা জানতে চাইলে শিশুটির মা পরিচয় দেয় ওই কিশোরী। প্রশ্ন করায় ওই কিশোরীর চোখেমুখে বিরক্তির ছাপও ছিল স্পষ্ট। এতে সন্দেহ হয় লেগুনায় থাকা যাত্রী রিয়াজ কবিরের।

একপর্যায়ে তিনি মোবাইল ফোনে কল করে তার বন্ধু নোমানকে বায়েজিদ বোস্তামী থানার সামনে থাকতে বলেন। এতে আরও শঙ্কিত হয়ে যায় ওই কিশোরী। তখন রিয়াজ কবিরের সন্দেহ আরও দানা বাঁধে। লেগুনায় থাকা আরও কয়েকজন যাত্রীও বিষয়টি বুঝতে পারেন। পরে লেগুনাটি পার্শ্ববর্তী থানায় নিয়ে যাওয়া হলে পাল্টে যায় প্রেক্ষাপট। মূলত শিশুটিকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। শিশুটির মা পরিচয় দেওয়া সেই কিশোরী স্বীকার করেন মাদকের ২ হাজার টাকা জোগাড় করতেই অপরহণ করা হয় শিশুটিকে।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের অক্সিজেন-২ নম্বর গেট সড়কের বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। এরইমধ্যে শিশুটির বাবা সিএনজি অটোরিকশাচালক মোহাম্মদ মানিকের করা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে বায়েজিদ থানা পুলিশ।

তারা হলেন সাইফুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, ১৪ ও ১৬ বছর বয়সী দুই কিশোরী। পুলিশ বলছে, দুই কিশোরী মাদকাসক্ত। তারা মাদকের টাকার জন্য শিশুটিকে অপহরন করে। তাদের পেছনে কারা আছে, শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

জানা যায়, বুধবার (১০ জুলাই) বিকেলে জেলার হাটহাজারী থানার এগারোমাইল এলাকায় বাড়ির সামনে খেলতে থাকা ছয় বছরের শিশুটিকে দাদির বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে অপহরণ করে ১৪ বছরের ওই কিশোরী। অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে এ ঘটনায় শিশুটির বাবা বাদী হয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। হাটহাজারী থেকে এনে শিশুটিকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় ১৬ বছর বয়সী আরেক কিশোরীর বাসায় রাখে। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার বিকেলে লেগুনায় করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল অন্য স্থানে।

শিশু মাহি জানান, আমাকে সে একটা চিপস দিয়েছে। বলেছে আমার দাদির বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যাবে। এই কথা বলে আমাকে তাড়াতাড়ি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে ফেলে। পরে আমাকে চুপ করে থাকতে বলে। সে বলেছে তার কাছে টাকা নেই। ড্রাইভার আমাকে দেখলে তাকে টাকা দিতে হবে। এই কারণে সে আমকে মাথা নিচু করে গাড়ি থেকে নেমে যেতে বলেছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লেগুনাযাত্রী রিয়াজ কবির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্প্রতি অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পাস করেন। তিনি বলেন, অক্সিজেন থেকে ছেড়ে আসা লেগুনাতে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে ওঠি এক বন্ধুর বাসায় যাওয়ার জন্য। লেগুনাটি বায়েজিদ বোস্তামী মাজারে গেটে গেলে সেখান থেকে এক শিশুকে নিয়ে ওঠে আরেক যাত্রী। কিছু দূর যাওয়ার পর শিশুটি কান্না করতে থাকে। কারণ জানতে চাইলে মা পরিচয় দিয়ে কিশোরী বলে, পুতুলের জন্য। প্রশ্ন করায় বিরক্তির ছাপ চোখেমুখে ওই কিশোরীর। তখন সন্দেহ আরও বাড়তে থাকে। কারণ, শিশুটি ও মায়ের বয়সের হিসাব মেলাতে পারছিলাম না। সঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা আরেক যাত্রীও শিশুটির কান্নার কৈফিয়ত চান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে যায় মা পরিচয় দেওয়া ওই কিশোরী। একপর্যায়ে বন্ধু মো. নোমানকে বায়েজিদ বোস্তামী থানার সামনে থাকতে বলি। এতে আরও শঙ্কিত হয়ে যায় ওই কিশোরী। এরইমধ্যে লেগুনার চালককে বলা হয় গাড়ি বায়েজিদ বোস্তামী থানায় নিয়ে যেতে।

রিয়াজ কবির বলেন, বায়েজিদ বোস্তামী থানায় যাওয়ার পর ওই কিশোরী সব ঘটনা খুলে বলে। শিশুটিকে অপহরণ করার কথা স্বীকার করে। একপর্যায়ে পুলিশ শিশুটির সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়, তাকে অপহরণ করা হয়েছে। তার বাড়ি হাটহাজারী। সঙ্গে সঙ্গে হাটহাজারী থানায় ফোন করা হলে সেখান থেকে পুলিশ আসে। তারাও নিশ্চিত হয়, গত বুধবার নিখোঁজ হওয়া শিশুটি। পরে অভিযান চালিয়ে কিশোরীর সহযোগী ১৬ বছরের আরেক কিশোরী এবং সাইফুল ইসলাম (৩১) ও জাহাঙ্গীর আলম (৪০) নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে হাটহাজারীতে নিয়ে যায়।

শিশুটির বাবার করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাটহাজারী থানার এসআই জালাল উদ্দিন বলেন, গ্রেপ্তার চারজনকে শুক্রবার (১২ জুলাই) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের রিমান্ডে এনে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে শিশুটিকে কোথায় কার কাছে তুলে দিতে লেগুনায় করে নিয়ে যাচ্ছিল, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা এলোমেলো তথ্য দিচ্ছে। দুই কিশোরীই মাদকাসক্ত।

শিশুটিকে ফিরে পেয়ে খুশি বাবা মানিক। তিনি কালবেলাকে বলেন, উঠানে খেলা করার সময় বেড়ানোর কথা বলে নিয়ে যায় আমার মেয়েকে তুলে নেওয়া হয়। যাত্রী রিয়াজ কবির ও শিক্ষিকার সন্দেহ না করলে তাকে ফিরে পেতাম না। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। বুকের মানিককে হারিয়ে আমি প্রায় পাগলের মত হয়ে গিয়েছিলাম।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাসের ধাক্কায় যুবদলের ২ নেতা নিহত

ওসমান হাদির গ্রামের বাড়িতে মানুষের ঢল

জেগে ওঠা বিস্তীর্ণ বালুচরে স্বপ্ন বুননে ব্যস্ত কৃষকরা

ঢাবির বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত

প্রিয় মানুষের অভিমান ভেঙে ফেলুন সহজ কিছু উপায়ে

জানা গেল বিপিএলে কারা থাকছেন আম্পায়ারিংয়ে

হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় বাদ জুমা বিশেষ দোয়া

পুরোপুরি নিভেছে প্রথম আলো কার্যালয়ের আগুন

ফের শাহবাগে বিক্ষোভ 

এমন সাহসী কণ্ঠস্বর কি আর পাব, হাদির স্মরণে নিলয়

১০

পাঠকদের উদ্দেশে প্রথম আলোর বার্তা

১১

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর

১২

বিদ্যুৎ লাইনের জন্য ৫ শতাধিক তালগাছের মাথা কাটল নেসকো

১৩

ওসমান হাদির স্মৃতিস্তম্ভ চায় পরিবার

১৪

ছবিতে প্রথমে কী দেখতে পাচ্ছেন, উত্তরই বলে দেবে আপনার ব্যক্তিত্ব কেমন

১৫

সিঙ্গাপুরে হচ্ছে না ওসমান হাদির জানাজা

১৬

হাদির গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া, স্বজনদের আর্তনাদ

১৭

বায়ুদূষণে শীর্ষে লাহোর, ঢাকার অবস্থান কত? 

১৮

কেমন প্রেমিকের অপেক্ষায় অনন্যা?

১৯

টিকটকে ভিডিও ছাড়েন স্ত্রী, অতঃপর...

২০
X