ফরহাদ সুমন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৪, ১০:৪০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

চট্টগ্রামে আন্দোলনকারীদের ওপর মেয়াদোত্তীর্ণ টিয়ারশেল নিক্ষেপ

টিয়ারশেল। ছবি : কালবেলা
টিয়ারশেল। ছবি : কালবেলা

চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে পুঁজি করে সংঘাত-সংঘর্ষ শুরু হয় গত ১৬ জুলাই। দুদিন পর গত ১৮ জুলাই; ফের দাঙা, হামলা, সংঘাত-সংঘর্ষে রূপ নেয় নগরীর বহদ্দারহাট মোড়। দফায় দফায় সাউন্ডগ্রেনেড, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপে করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। একইভাবে গত ১৯ ও ২৯ জুলাই আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে দফায় দফায় এসব ছোড়া হয়। রাস্তা থেকে সংগ্রহ করা টিয়ারশেলের খোল পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে তা মেয়াদোত্তীর্ণ। এসব নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। উত্তর মিলছে না, শিক্ষার্থীদের ওপর মেয়াদোত্তীর্ণ টিয়ারশেল ছোড়া হচ্ছে কেন? যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, লটে দুই একটি থাকতে পারে। তাছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও এক বছর কিংবা ছয় মাস এটি ব্যবহার করা যায়।

আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে মেয়াদোত্তীর্ণ টিয়ারশেল ব্যবহার করা হচ্ছে কেন জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (সিএমপি) মো.সাইফুল ইসলাম বিপিএম (বার) কালবেলাকে বলেন, সব মেয়াদোত্তীর্ণ তা সঠিক নয়। প্রতি বছর সেগুলো রিপলেসম্যান্ট করা হয়। মেয়দোত্তীর্ণঘলো নষ্ট করে ফেলা হয়। হয়তো বা লটে দুই একটি থাকতে পারে। মনে করেন রেজিস্ট্রারে লিখা আছে ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত। মেয়াদোত্তীর্ণের পরও এগুলো এক বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। বিষয়টি এমন না যে ২০২২ সাল লিখা আছে কিন্তু ২০২৩ সালে ব্যবহার করা যাবে না তা না।

মেয়াদোত্তীর্ণ টিয়ারশেল মানব দেহে ক্ষতিকর। কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে জানতে চাইলে সিএমপির এই মুখপাত্র কালবেলাকে বলেন, আসলে মেয়াদোত্তীর্ণ টিয়ারশেলে কোনো ধরনের ইফেক্টিভ নেই। এটি নিক্ষেপ করলে এর ধোঁয়ায় চোখ জ্বলা এবং চোখ থেকে পানি পড়বে। তিনি কিছুক্ষণ চোখে দেখবেন না। এর বাইরে বড় কোনো প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই। আর মেয়াদোত্তীর্ণ মানে তাতে কিছুই নেই। মানে এর ইফেক্টিভ একেবারে নাই বললে চলে।

ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, যদি মেয়াদোত্তীর্ণ টিয়ারশেল ব্যবহৃত হয়ে থাকে তাহলে মালখানায় তা রাখা সমীচিন নয় বলে আমি মনে করি। অন্যদিকে পুলিশের তদারকি বা মনিটরিং সিস্টেম দূর্বল হলে সেখানে মেয়াদোত্তীর্ণ জিনিস রাখা অস্বাভাবিক নয়। পুলিশের যে অস্ত্র, টিয়ারশেলসহ অন্যান্য জিনিস পর্যাপ্ত পরিমাণে পর্যবেক্ষণে রাখা দরকার। কোনগুলোর মেয়াদ আছে, কোনোগুলোর নেই সেগুলো সঠিকভাবে নির্ধারণ করে ব্যবহারে উপযোগী কি না বা ব্যবহারে যোগ্য নয় কি না এর দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তায়। সেখানে অবশ্যই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তদন্ত হওয়া দরকার।

টিয়ারশেলে আহত সাংবাদিকরা ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হলে তারা জানিয়েছেন, এর আঘাতে শরীরের নানা অসুবিধা দেখা দিচ্ছে। চোখ ব্যাথা, চোখ জ্বালা-পোড়া এবং চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে। এক চোখে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, আরেকটিতে ঝাপসা। তাছাড়া শ্বাসপ্রশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। বুকে ব্যাথাসহ শরীর ব্যথা বেড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টিয়ারশেলের আঘাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ১০ জন চিকিৎসা নিতে আসেন। তারা ক্যাজুয়েলিটি বিভাগে ভর্তি ছিলেন। কিন্তু তাদের মধ্যে চারজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে পালিয়ে যায়। তিন জনকে রেফার করা হয় এবং বাকি তিনজন ছাড়পত্র পেয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। চমেক হাসপাতাল ছাড়াও প্রাইভেট হাসপাতালেও চিকিৎসা নিয়েছেন অনেকে।

টিয়ারশেলের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে পাঁচলাইশে বেসরকারি হাসপাতাল পার্কভিউ হসপিটালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন ডা. মোহাম্মদ জয়নাল আবেদিন কালবেলাকে বলেন, খুব কাছ থেকে টিয়ারশেলে আহত হলে চোখের পর্দা ছিড়ে যেতে পারে। এর ধোঁয়ায় চোখ দিয়ে পানি পড়বে, চোখে জ্বালাপোড়া হবে, ব্যাথা করবে এবং কিছুক্ষণের জন্য চোখে দেখবেন না আহতরা।

আমার কাছেও অনেকে চিকিৎসা নিতে এসেছেন জানিয়ে এই চক্ষু বিশেষজ্ঞ বলেন, টিয়ারশেলে আহতদের আই ড্রপ ও অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছে। যারা মাঠ পর্যায়ে থাকেন তাদের কাছে আমার পরামর্শ থাকবে যে, আহত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগুনের ভাপ দিতে হবে। এতে চোখের দৃষ্টিশক্তি দ্রুত ফিরবে। তবে টিয়ারশেলে তেমন ক্ষতি না হলেও পরবর্তীতে এর প্রভাব দেখা দিতে পারে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ধবলধোলাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অধিনায়ক গিলের প্রথম সিরিজ জয়

হিন্দি ওটিটিতে দ্বৈত হানা

হৃদরোগের ঝুঁকি বুঝতে সাহায্য করে এই টেস্ট

হোয়াইটওয়াশ এড়াতে যে একাদশ নিয়ে মাঠে নামতে পারে টাইগাররা

বিএনপিতে যোগ দিলেন ৪০ সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবার

সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের

তৃতীয় দিনের মতো চলছে টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দল ঘোষণা নিউজিল্যান্ডের

বাসে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ, চালক আটক

ফ্রেঞ্চ ফ্রাই নিয়মিত খেলেই কি বাড়তে পারে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি?

১০

যেসব বিভাগ থেকে বিদায় নিয়েছে মৌসুমি বায়ু

১১

ভারতের কাশির সিরাপে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবার্তা

১২

এক ক্লিকেই জামিন আদেশ যাবে কারাগারে: আইন উপদেষ্টা

১৩

ভাইয়ের চাপাতির কোপে ছোট ভাই নিহত

১৪

রুক্মিণীকে নিয়ে যা বললেন চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী

১৫

বিকাশ-নগদ-রকেটে লেনদেনের নতুন মাধ্যম, চার্জ কত

১৬

ফুটবল খেলা নিয়ে সংঘর্ষ, বেরোবির ৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার 

১৭

সাবেক রাষ্ট্রপতির বাড়ি এখন কিন্ডারগার্টেন স্কুল

১৮

রাজধানীতে বাসের ধাক্কায় ক্রিকেটার নিহত

১৯

সর্বকালের সব রেকর্ড ভেঙে আবার বাড়ল স্বর্ণের দাম

২০
X