কুষ্টিয়ার এনএস রোডের দুপাশে ফিরতি রথযাত্রা উপলক্ষে গ্রামীণ মেলায় পৌরসভার ভুয়া খাজনা রশিদে চাঁদাবাজি করছিল কয়েকজন। খবর পেয়ে সংবাদ সংগ্রহে ঘটনাস্থলে গেলে কালবেলার জেলা প্রতিনিধি তুহিন আহমেদসহ সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে চাঁদাবাজরা।
শনিবার (৫ জুলাই) দুপুরে কুষ্টিয়ার বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র এনএস রোডের তোফাজ্জল হেলথ কেয়ারের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, তোফাজ্জল হেলথ কেয়ারের সামনে গেলে ৭-৮ জনের একটি চাঁদাবাজ দল রথযাত্রা উপলক্ষে গ্রামীণ মেলায় আগত প্রত্যেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫০, ১০০ কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২০০ টাকা পর্যন্ত পৌরসভার খাজনা আদায়ের ভুয়া স্লিপ দিয়ে টাকা আদায় করছিল চাঁদাবাজ দল। সে সময় কালবেলার ক্যামেরায় অবৈধভাবে টাকা আদায়ের দৃশ্য ধারণ করা হয়।
পরে পৌরসভার রশিদ দিয়ে চাঁদা আদায়কারীদের কাছে পৌরসভার অনুমতি না থাকার পরও কীভাবে চাঁদা আদায় করছে জানতে চাইলে, জাতীয় দৈনিক কালবেলার জেলা প্রতিনিধি তুহিন আহমেদসহ ঘটনাস্থলে থাকা স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর হামলা করে তারা।
এ সময় সঙ্গে থাকা ক্যামেরা ভাঙচুরের পাশাপাশি ক্যামেরা পারসন সালাউদ্দিন আহমেদের মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয় চাঁদাবাজ দল। ঘটনাস্থলে ছিলেন রোমান, শামিম, আসিফ, তারেক, শাহিন, খোকন। অন্যদের নাম জানা যায়নি।
রথে আসা অস্থায়ী দোকানদার মো. সামাদ জানান, দীর্ঘদিন রথের সময় আমি এখানে গৃহস্থালি পণ্য দা, বঁটি, কাচি বিক্রি করে আসছি। এবারে দেখছি রথে আসা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। এর আগে কখনো এমনটি দেখিনি।
রথের মেলায় ব্যবসা করতে আসা বারাদি এলাকার শাজাহান মালিথার ছেলে অস্থায়ী কাপড়ের দোকানদার মাহাবুল জানান, আগে কখনও এ ধরনের চাঁদাবাজি ছিল না। এবারে প্রথম খাজনা তোলার নামে চাঁদাবাজি চলছে। খাজনার টাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মারতে আসে তারা।
চাঁদা আদায়ের বিষয়ে অভিযুক্ত আসিফের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, আমরা পৌরসভার ইজারাদারের হয়ে কাজ করছি। গত বৈশাখে ৭ লাখ টাকায় এ ইজারা পেয়েছি। এ সময় তাকে পৌরসভার ইজারা নেই বলে জানালে, তিনি প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। অনুমতি না থাকার পরও কীভাবে খাজনা তুলছেন জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে সাংবাদিকের উপর চড়াও হন।
ভুক্তভোগী অপর সাংবাদিক শামিম হাসান খান বলেন, দীর্ঘদিন রথের এ মেলা দেখে আসছি। এবারই প্রথম দেখলাম মেলা পৌরসভার খাজনার নামে চলছে এমন চাঁদাবাজি। আজ যেভাবে আমাদের উপর হামলা হয়েছে আমি এর বিচার দাবি জানাচ্ছি। নেপথ্যে যারা জড়িত তাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাই।
কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রশাসক মো. মিজানুর রহমানের বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমরা আগেও শুনেছি। এ বিষয়ে জাল রশিদে খাজনা আদায়ের কারণে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। এ ঘটনায় জড়িত সকলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, মৌখিক অভিযোগ আমরা আগেই পেয়েছি। সেজন্য রথ মেলায় আগত ব্যবসায়ীদের চাঁদা না দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু তারা আমাদের এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযোগ জানাননি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন