চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৫, ০৭:৫৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
চট্টগ্রামে জুলাই হত্যাকাণ্ডে প্রথম অভিযোগপত্র

শহীদুলের শরীরে ১০টি গুলি লাগে

চট্টগ্রামে জুলাই হত্যাকাণ্ডে নিহত শহীদুল ইসলাম। ছবি : সংগৃহীত
চট্টগ্রামে জুলাই হত্যাকাণ্ডে নিহত শহীদুল ইসলাম। ছবি : সংগৃহীত

প্রায় এক বছর পর চট্টগ্রামে জুলাই হত্যাকাণ্ডে প্রথম অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ। এ মামলায় আসামি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ ২৩১ জন।

তাদের মধ্যে অর্থদাতা, আয়োজককারী, হুকুমদাতা ও সরাসরি অংশগ্রহণকারী আসামি রয়েছেন। অভিযোগপত্রে মোট চার ক্যাটাগরির আসামি রয়েছে। সাক্ষী ১২৮ জন। চট্টগ্রামে জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের প্রথম কোনো মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দিল পুলিশ।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় চট্টগ্রামের ১৫১টি মামলার মধ্যে ৬৯টি হয়েছে নগর ও জেলার ৯টি থানায়। বাকিগুলো আদালতে হওয়া নালিশি মামলা (সিআর)। এসব মামলায় নাম উল্লেখ থাকা আসামির সংখ্যা ১৩ হাজার ৪৫০। অজ্ঞাতপরিচয় আসামির সংখ্যা অন্তত ৩০ হাজার। আসামিদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর নাম যেমন রয়েছে, তেমনি আবার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন এমন ব্যক্তি, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশার মানুষও রয়েছেন। থানায় হওয়া ৬৯ মামলায় ১৫ জুলাই পর্যন্ত আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন ১ হাজার ২০১ জন। আসামির বিপরীতে গ্রেপ্তার ৫ শতাংশ। ৬৯টি মামলার মধ্যে ১৫টিই হত্যা-মামলা।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের ছোড়া ১০টি গুলি লেগেছে শহীদুলের শরীরে। শটগান ও বন্দুক থেকে এসব গুলি ছোড়া হয়। তবে কার কার ছোড়া গুলিতে শহীদুলের মৃত্যু হয়েছে, সেটি অভিযোগপত্রে সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। তার বুক, পেট ও পিঠে ১০টি গুলি লাগে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, প্রসিকিউশন শাখা থেকে অভিযোগপত্রটি বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে দাখিল করা হয়। আদালত ২৫ আগস্ট বাদীর উপস্থিতিতে অভিযোগপত্রের ওপর শুনানির সময় নির্ধারণ করেছেন। এর আগে বুধবার (৩০ জুলাই) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগরীর চান্দগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফয়সাল আদালতের প্রসিকিশন শাখায় অভিযোগপত্র জমা দেন।

২০২৪ সালের ৩ আগস্ট নগরের জুবিলি রোড এলাকায় জুতার দোকানের কাজ শেষে বাজারসদাই নিয়ে চান্দগাঁওয়ের বাসায় ফিরছিলেন শহীদুল ইসলাম। বাসার পাশে বহদ্দারবাড়ি এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিসোঁটা, হকিস্টিক ও অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা হয়। সেদিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে আন্দোলনকারীদের ওপর ছোড়া গুলি এসে লাগে শহীদুল ইসলামের বুক, পেট ও পিটে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহত শহীদুলের ভাই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে গত বছরের ১৯ আগস্ট চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন। এতে আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়।

অভিযোগপত্রে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় হত্যার অভিযোগে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ছাড়াও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও রেজাউল করিম চৌধুরী; সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নদভী, এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, এম এ লতিফ, এস এম আল মামুন, মহিউদ্দিন বাচ্চু, আবদুচ সালাম, দিদারুল আলম, নোমান আল মাহমুদ; চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলম; চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর এসরারুল হক, শৈবাল দাশ, জহুরুল আলম প্রমুখ। তাদের মধ্যে আবু রেজা মুহাম্মদ নদভী, এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এবং এম এ লতিফ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ঘটনার দিন পিস্তল হাতে ছিলেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক উপ-অর্থ সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী। তিনি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। কাটা বন্দুক হাতে ছিলেন যুবলীগের নেতা পরিচয় দেওয়া তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী মো. ফিরোজ। তিনি নিজেকে আ জ ম নাছিরের অনুসারী পরিচয় দেন। তবে তিনি কোনো পদে নেই। শটগান হাতে ছিলেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সংগঠক মো. দেলোয়ার। তিনি হেলাল আকবরের অনুসারী। পিস্তল হাতে ছিলেন যুবলীগের কর্মী এন এইচ মিঠু ও ঋভু মজুমদার। তারা দুজন নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। নুরুল আজিম শিক্ষামন্ত্রীর অনুসারী।

পিস্তল হাতে চান্দগাঁও থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মহিউদ্দিন ফরহাদ, যুবলীগের কর্মী মো. জালাল ওরফে ড্রিল জালাল ও মো. মিজানকেও দেখা গেছে। শটগান হাতে ছিলেন যুবলীগের কর্মী মো. তৌহিদ। তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের সাবেক কাউন্সিলর মো. এসরালের অনুসারী। এসরাল আ জ ম নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অস্ত্র হাতে থাকা ফিরোজ, জালাল, তৌহিদ ও ঋভু মজুমদার এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফয়সাল কালবেলাকে বলেন, অভিযোগপত্রে আসামিরা চারটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত। আমি তিন নম্বর তদন্ত কর্মকর্তা। আমার আগে উপপিরিদর্শক নুরুল হাকীম উক্ত মামলার তদন্ত করেছিলেন।

চান্দগাঁও থানার ওসি আফতাব উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, নিহত ব্যক্তির শরীরে ১০টি গুলি লেগেছে। যারা ঘটনাস্থলে ছিলেন আর যাদের নির্দেশে গুলি করা হয়েছে, তাদের অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে।

দেশে ছিলেন না এমন কাউকে আসামি করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, এখানে চারটি ক্যাটাগরি রয়েছে। কেউ আছেন অর্থযোগানদাতা, কেউ আয়োজককারী, কেউ হুকুমদাতা আবার অনেকে সরাসরি জড়িত। ঘটনার সময় দেশে ছিলেন না তবে অর্থযোগানদাতা, হুকুমদাতা কিংবা আয়োজককারী হিসেবে আসামি করতে পারে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় চট্টগ্রামে হওয়া ১৫১টি মামলার মধ্যে এটিই প্রথম অভিযোগপত্র। ২৫ আগস্ট অভিযোগপত্র গ্রহণের বিষয়ে আদালতে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘পথ হারিয়ে ফেলেছেন’ নেতানিয়াহু

ভয়ংকর ক্ষেপণাস্ত্র ওরেশনিক নিয়ে নামছে বেলারুশ-রাশিয়া

ফুটবল খেলা কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে স্কুলছাত্র নিহত

সর্বপ্রথম কী সৃষ্টি করেছিলেন আল্লাহ তায়ালা

চার বিভাগে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস 

সারা দেশে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ আজ

ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনে চাকরি, আবেদন করবেন যেভাবে

ছেলে মাদকাসক্ত, অতিষ্ঠ হয়ে পুলিশে দিলেন মা

ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অফিসের নতুন বার্তা

নেতানিয়াহুর ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ ভাবনায় ক্ষুব্ধ জর্ডান

১০

১৪ আগস্ট : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১১

৩ দিনব্যাপী হজ ও ওমরাহ মেলা শুরু আজ

১২

আমাদের ৩ জন শেখ মুজিব রয়েছে : মির্জা গালিব

১৩

আরও গভীর হচ্ছে রাশিয়া-ইরান-চীন-উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক

১৪

আজ ১১ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায় 

১৫

দুই শিক্ষার্থীসহ ৪ জনের প্রাণহানি, দুই গাড়িতে ছিল না ফিটনেস

১৬

১৪ আগস্ট : টিভিতে আজকের খেলা

১৭

১৪ আগস্ট : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৮

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১৯

ক্ষমতায় থাকাকালীন আ.লীগ দেশকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে বানিয়েছিল : নীরব

২০
X