গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে অ্যানথ্রাক্স। হুটহাট মারা যাচ্ছে গরু। এতে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা। অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গরুর মাংস কাটতে গিয়ে এরই মধ্যে উপজেলার একটি গ্রামের ১১ জনের শরীরে এ রোগের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা গুরুতর।
এ খবর আতঙ্ক ছড়িয়েছে উপজেলাজুড়ে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ৮০ পয়সার অ্যানথ্রাক্স ভ্যাক্সিনের দাম নেওয়া হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। অপরদিকে কমেছে মাংস বিক্রিও।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পাশের পীরগাছা উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে অ্যানথ্রাক্স রোগের প্রকোপ ছিল। সম্প্রতি এ রোগ সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে ঘাঘট ও তিস্তা নদীবেষ্টিত বামনডাঙ্গা, সর্বানন্দ, তারাপুর, বেলকা এবং পৌরসভা এলাকায় ছড়িয়েছে। সর্বানন্দ, বামনডাঙ্গা, তারাপুর, বেলকা ও পৌরসভায় এরই মধ্যে ২২ হাজার টিকা দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (৪ অক্টোবর) সকালে কিসামত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যে বাড়িতে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গরু জবাইয়ের পর ১১ জনের উপসর্গ ধরা পড়েছে, তার আশপাশে গত শুক্রবার সন্ধ্যা এবং শনিবার সকালে দুটি গরু মারা গেছে। আক্রান্ত হয়েছে আরও কয়েকটি গরু-বাছুর। মরা গরু গভীর গর্ত করে পুঁতে ফেলেছেন তারা।
বাবলু মিয়া নামে একজন বলেন, শুক্রবার আমার একটি গরু অসুস্থ হয়। প্রাণিসম্পদ অফিসে ফোন দিলেও কেউ আসেননি। পরে সন্ধ্যায় গোয়ালে তুলি। শনিবার সকালে গরুটি মারা যায়।
১৪ দিনের বাছুর রেখে লাখ টাকার গাভি মারা যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আরেক কৃষক। তার পুত্রবধূ বলেন, শুক্রবার সকালে প্রথমে জ্বর আসে গাভীর। সন্ধ্যায় নাক ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে শুরু হয় রক্ত পড়া। তারপর সব শেষ।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিপ্লব কুমার দে কালবেলাকে বলেন, এরই মধ্যে ২২ হাজার টিকা দেওয়া হয়েছে। চার হাজার ৪শ টিকা মজুত আছে। আরও ২ লাখ টিকার জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছে। সচেতনতার জন্য করা হচ্ছে উঠান বৈঠক ও মাইকিং।
জানা গেছে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চল কিসামত সদর গ্রামে রোগাক্রান্ত একটি বকনা গরু জবাই করেন মাহাবুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। সেই মাংস কাটায় অংশ নেন বিভিন্ন বয়সের ১১ ব্যক্তি। পরদিন তাদের জ্বর আসে। পরে সবার হাত ও আঙুলে দেখা দেয় ফোসকা। রংপুর ও গাইবান্ধায় নিয়ে গেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স হয়েছে বলে জানান চিকিৎসকরা।
বর্তমানে তারা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা গুরুতর। তারা হলেন- মোজাফফর হোসেন (৫০), অষ্টম শ্রেণির ছাত্র রাকিবুল হাসান (১৪), মোজাহার হোসেন (৬০), সফিকুল ইসলাম (৩৫) ও খতিব উদ্দিন (২৭)।
মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘গরুটির জ্বর ছিল। গা শিউরে ওঠার পর দুই থেকে তিনটি দাপান দেয়। পরে জবাই করি। মাংস কেটেছি ১১ জন। সবাইকে অ্যানথ্রাক্স ধরেছে। আমি মাংস কাটার সময় চোখে ও হাতে রক্তের ছিটা পড়ায় এ অবস্থা হয়েছে। শরীরে জ্বর ও তীব্র ব্যথা করছে।’
অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে কোনো রোগী ভর্তি নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. আতিয়ার রহমান সোহাগ। তিনি বলেন, অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ নিয়ে বেলকার ৯ জন রোগী বহির্বিভাগে এসেছিলেন। তাদের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, অ্যানথ্রাক্সের খবরে উপজেলায় গরুর মাংসের চাহিদা কমে গেছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
মন্তব্য করুন