সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শেখ ফয়সাল আহমেদ তিন মাসে ৫০ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি সিভিল সার্জন ও তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আবদুস সালামকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও মারমুখি আচরণ করারও অভিযোগ রয়েছে।
এ ঘটনায় সিভিল সার্জন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন।
হাসপাতালের বায়োমেট্রিক হাজিরা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর—এই তিন মাসে ডা. ফয়সাল ৫০ দিন অনুপস্থিত ছিলেন এবং ২৮ দিন উপস্থিত ছিলেন। জুলাই মাসে তিনি উপস্থিত ছিলেন মাত্র একদিন, আগস্টে ১২ দিন এবং সেপ্টেম্বরে ১৫ দিন।
ডা. শেখ ফয়সাল আওয়ামীপন্থি চিকিৎসক সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) সাতক্ষীরা জেলা কমিটির গ্রন্থাগার ও প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
জানা গেছে, ডা. শেখ ফয়সাল আহমেদ কয়েক বছর ধরে সাতক্ষীরাতে চাকরি করায় সদর হাসপাতালের সামনে ‘হার্ট ফাউন্ডেশন অ্যান্ড ইনসেনটিভ কেয়ার হাসপাতাল’ নামে একটি বেসরকারি হাসপাতাল গড়ে তুলেছেন। তার বিরুদ্ধে এর আগে তুলে নিয়ে সাংবাদিক পেটানো, গ্রাম ডাক্তার দিয়ে অপারেশন করে রোগীদের অঙ্গহানি, ভুল চিকিৎসায় অন্তঃসত্ত্বা হত্যাসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ আছে।
এদিকে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে সিভিল সার্জনের দপ্তরে সিভিল সার্জন ও তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আবদুস সালামকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও মারমুখি আচরণ করার অভিযোগ উঠেছে ফয়সাল আহম্মেদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ৫ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন সিভিল সার্জন।
সিভিল সার্জন ও তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আবদুস সালাম জানান, হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবকদের অনুপ্রবেশ বন্ধের বিষয়ে জানতে এসে ডা. ফয়সাল ক্ষিপ্ত হয়ে প্রকাশ্যে গালাগাল করেন এবং একপর্যায়ে মারমুখী আচরণ করেন। জেলা প্রশাসকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাসপাতালে তথাকথিত স্বেচ্ছাসেবক বা দালালদের অপসারণের নির্দেশ বাস্তবায়নের কারণেই তিনি ক্ষুব্ধ হন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ডা. ফয়সালের নামে হাসপাতালের সামনে ‘হার্ট ফাউন্ডেশন অ্যান্ড ইনসেনটিভ কেয়ার হাসপাতাল’ নামে একটি বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। সেখানে দালালদের মাধ্যমে রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগও আছে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়েছে। সিভিল সার্জন মহাপরিচালকের কাছে ঘটনার তদন্ত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন।
অভিযুক্ত ডা. শেখ ফয়সাল আহমেদ বলেন, আমি অনুপস্থিত হইনি। আমার সই করা ডকুমেন্টস আছে। আমি প্রতিদিন হাসপাতালে রাউন্ড দিই। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের রাউন্ড খাতায় আমার সিগনেচার রয়েছে। তবে আরএমও হিসেবে আমি ডিজিটাল হাজিরায় বায়োমেট্রিক দিতাম না।
আওয়ামীপন্থি চিকিৎসক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার পরিবারে কেউই আওয়ামীপন্থি নন। কাজেই ওই ধরনের সংগঠনের সঙ্গে থাকার প্রশ্নই ওঠে না। আমাকে অনেকবার যুক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু আমি থাকতে চাইনি।
মন্তব্য করুন