কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বেরুবাড়ী ইউনিয়নের মিরারভিটা গ্রামে বেরুবাড়ির ছড়া ‘ছোট নদীতে’ নির্মিত সেতুটি ভেঙে গেছে। এতে উপজেলা শহরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সেতুটি ভেঙে পড়ায় সেতুর পূর্ব পাশ্বের আকন্দপাড়া, চর শালমারা, চর বেরুবাড়ি, হাজিপাড়া, সরকারপাড়া, মণ্ডলপাড়া গ্রামের প্রায় সাত হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের যাতায়াত, জরুরি প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও চিকিৎসাসেবার জন্য অ্যাম্বুলেন্স চলাচলের সুযোগ না থাকায় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাধীনতার আগে বেরুবাড়ির ছড়ার ওপর প্রায় ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মিত হওয়ার পর থেকে আর মেরামত করা হয়নি। ২০১৬ সালে শুষ্ক মৌসুমে সেতুর নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় ট্রাক্টরের ধাক্কায় নিচের সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে সে বছর ভূমিকম্প হলে সেতুর পশ্চিম দিকে ২০ মিটার অংশ এবং পূর্ব দিকে ১০ মিটার অংশ ডেবে গিয়ে ভেঙে যায়। ফলে উপজেলা শহর ও বেরুবাড়ি ইউনিয়নের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরে ২০১৭ সালে বেরুবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স্থানীয়দের নিয়ে ওই সেতুর ওপর একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ওই কাঠের সাঁকোটিও সংস্কার না করায় সেটিও ভেঙে যায় এবং চলতি বছরের বন্যায় সেতুর একটি অংশ ডেবে গিয়ে মরণফাঁদে পরিণত হয়। এতে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে প্রায় ৬টি গ্রামের সাত হাজার মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যাতায়াত করছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বাঁশের খুঁটির ওপরে জোরাতালি দেওয়া ভাঙা কাঠের তক্তা দিয়ে যাতায়াতের জন্য সেতুটি নির্মাণ করা। কেউ সাহস নিয়ে সেতুর ওপর দিয়ে পারাপার হচ্ছে আবার দুর্ঘটনার ভয়ে কেউ কেউ প্রায় ৫ কিলোমিটার ঘুরে বিকল্প রাস্তায় চলাফেরা করছেন। এতে অর্থ ও সময় অপচয় হচ্ছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করছেন।
উপজেলার মিরারভিটা, চর বেরুবাড়ি, চর শালমারা, হাজিপাড়া, সরকারপাড়া, মণ্ডলপাড়া, আকন্দপাড়া ও বেরুবাড়ি ইউনিয়নের প্রায় সাত হাজারের বেশি মানুষ প্রতিদিন ওই সেতু ব্যবহার করে থাকে। এ ছাড়া স্কুল-কলেজ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বেরুবাড়ি বাজার হয়ে উপজেলা শহরে অফিস-আদালতে যেতে এই সেতু দিয়ে পারাপার হতে হয়। স্থানীয় মিরারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর বেরুবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাগেশ্বরী মহিলা সরকারি কলেজ, নাগেশ্বরী সরকারি কলেজ এবং ওই ইউনিয়নের প্রায় ৫টি ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা এই সেতু দিয়ে যাতায়াত করে।
নাগেশ্বরী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন, এই সেতুটি ভেঙে পড়ার পর থেকে স্কুল-কলেজে যেতে ভোগান্তি বেড়েছে। প্রতিদিন প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ ঘুরে কলেজে যেতে হচ্ছে। এতে সময় বেশি ব্যয় হয়। অনেকেই ঝুঁকি নিয়েই ভাঙা কাঠের সেতু দিয়ে পারাপার হয়। যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেতুটি দ্রুত মেরামত করা হলে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের অনেক উপকার হবে।
বেরুবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সোলায়মান আলী জানান, ২০১৬ সালে সেতুটির দুই পাশে ডেবে গিয়ে ভেঙে যায় এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে বেরুবাড়ি ইউনিয়নের প্রায় সাত হাজার মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি দেখা দেয়। সেতুটি নির্মাণের জন্য উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ে এবং নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে।
এলজিইডি নাগেশ্বরী উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলী মো. ওয়াসিম আতাহার বলেন, সেতুটি ২০১৬ সালে ভেঙে যায় বলে শুনেছি এবং ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের কাছ থেকে সেতুটি মেরামতের প্রস্তাব পেয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। কিন্তু সেতুটি যে রাস্তার ওপর অবস্থিত সেই রাস্তাটি এলজিইডির আইডিভুক্ত নয়, তাই সেতু মেরামত করা সম্ভব হয়নি। ওই সেতুসহ উপজেলার ২৩৬টি রাস্তাকে আইডিভুক্ত করার জন্য তালিকা করে ওপরে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। ওই কাঁচা রাস্তাটি আইডিভুক্ত হলেই রাস্তা ও সেতুর কাজ করে দেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন