ইলিশ শিকারে সরকারের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ায় পটুয়াখালীর উপকূলজুড়ে জেলেদের নৌকা এখন ঘাটে বাঁধা। ভরা মৌসুমেও ইলিশ না পেয়ে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন এসব জেলে। অন্যদিকে ব্যাংক ও এনজিওর কিস্তির চাপ তাদের আরও কোণঠাসা করে তুলেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, লতাচাপলী, ধুলাসার, মহিপুর, আলীপুরসহ বিভিন্ন মৎস্যঘাটে শত শত নৌকা অলস পড়ে আছে। জেলেরা কেউ জাল মেরামত করছেন, কেউবা ঘাটে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন।
জেলে আবদুল জলিল বলেন, ভরা মৌসুমে সমুদ্রে ইলিশ খুব কম পড়েছে। যেটুকু পেয়েছিলাম, সেটা বিক্রি করেই সংসার চলেছে। এখন ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় ঘরে বসে আছি, কিন্তু বাজারের দাম যেভাবে বেড়েছে, ২৫ কেজি চাল দিয়ে তো কিছুই হয় না।
জেলে খবির ঘরামি বলেন, প্রতিমাসে সপ্তাহে ৪ হাজার ৫০০ টাকা কিস্তি দিতে হয়। অবরোধে সব বন্ধ ২৫ কেজি চালে আমাদের কিছু হয় না। আমাদের সঙ্গে একধরনের প্রতারণা করছে সরকার। আমরা চাই প্রণোদনা বাড়ানো হোক, পাশাপাশি নগদ টাকা।
আরেক জেলে রুহুল আমিন বলেন, আমরা এনজিও থেকে টাকা নিয়ে নৌকা চালাই। এখন মাছ ধরতে না পারলে কিস্তি দেব কী দিয়ে? একদিন সময় পেছালে তারা বাড়িতে এসে চাপে ফেলে।
আশাখালীর জেলে বেলায়েত হোসেন বলেন, প্রতিবার নিষেধাজ্ঞার সময় চাল দেওয়া হয়, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। আমরা চাই নগদ সহায়তাও দেওয়া হোক, যাতে বাজারের জিনিস কিনতে পারি।
অন্যদিকে, জেলেদের অভিযোগ নিষেধাজ্ঞা মানলেও কিছু অসাধু জেলে রাতে গোপনে নদীতে নামছে, এতে নিয়ম মেনে চলা প্রকৃত জেলেরা বঞ্চিত হচ্ছে।
মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ইলিশের প্রজনন রক্ষায় ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে ইলিশ ধরা, পরিবহন, বিক্রি ও মজুত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা কালবেলাকে বলেন, প্রতিটি নিবন্ধিত জেলেকে সরকারিভাবে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাই সবাই নিষেধাজ্ঞা মেনে চলুক, যাতে ভবিষ্যতে ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়ে। যারা নিয়ম ভঙ্গ করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, জেলেদের সহায়তা বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, ভবিষ্যতে নগদ সহায়তার বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন