মৌসুমের শুরুতেই খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা বাজার জাম্বুরার সয়লাব। উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকা থেকে আসা এসব জাম্বুরা আকারে বড়, তেমনি স্বাদও ভালো। তাই এর কদরও বেশ। কৃষকরা জানান, এবার ফলটির ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু দাম কম হওয়ায় তারা খুশি নন।
পাহাড়ে উৎপাদিত জাম্বুরা মানসম্মত ও সুস্বাদু হওয়ায় ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে এর কদর বাড়ছে। ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ জাম্বুরা মাটিরাঙ্গার চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রাম, ঢাকা, ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে জায়গা করে নিয়েছে। চলতি বছর জাম্বুরা চাষে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাটিরাঙ্গায় জাম্বুরার বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার মাটিরাঙ্গা, তাইন্দং, বেলছড়ি, গোমতী, আমতলী, বড়নাল, মাটিরাঙ্গা পৌর এলাকার ১০ নম্বর ইসলামপুর ও রসুলপর এলাকায় জাম্বুরার উৎপাদন ভালো হয়। প্রতিটি বড় গাছে গড়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার জাম্বুরা ধরে।
মাটিরাঙ্গায় সাধারণত বসতবাড়ির আঙ্গিনার আশপাশে ও পতিত জমিতে এর চাষ হয়ে থাকে। তবে চাহিদা বাড়তে থাকায় বাণিজ্যিকভাবে জাম্বুরা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনেকে।
এদিকে ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীরা মাটিরাঙ্গার বিভিন্ন স্থানীয় বাজার থেকে জাম্বুরা কিনে নেন। এ ছাড়া অনেকে অগ্রিম টাকা দিয়ে জাম্বুরা গাছ কিনে ফল সংগ্রহ করেন।
মাটিরাঙ্গা বাজার ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি বস্তাভর্তি জাম্বুরা বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। জাম্বুরাকে ঘিরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দরকষাকষি চলছে। এবার প্রতিটি জাম্বুরা বিক্রি হচ্ছে ৭-১০ টাকায়। তবে আকারে বড় জাম্বুরা ১০-১৫ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। মাটিরাঙ্গা বাজার থেকে প্রতি সপ্তাহে ৪-৫ ট্রাক জাম্বুরা দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। দেশে এ অঞ্চলের জাম্বুরার পরিচিতি বাড়ছে।
জাম্বুরা বিক্রেতারা জানান, গত বছর ফলের উৎপাদন কিছুটা কম হলেও দাম ভালো ছিল। গত বছর প্রতিটি জাম্বুরা আকারভেদে বিক্রি হয়েছিল ১০ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত। এ বছর উৎপাদনও বেশি, দামও কম।
পাইকারি ব্যবসায়ী জামাল হোসেন বলেন, ‘ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চাঁদপুরের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ি অঞ্চলের জাম্বুরার কদর বেশি। গতকাল এক ট্রাক জাম্বুরা কিনেছি। প্রতিটি জাম্বুরা ৭ থেকে ৮ টাকা দরে কিনতে হয়েছে। বিক্রি হবে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। তবে এবার পরিবহন ও শ্রমিক খরচ বেশি বিধায় লাভের অঙ্কটা কমে যাবে।’
আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম বলেন, ‘পাহাড়ের জাম্বুরায় ক্ষতিকর কেমিক্যাল না থাকায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় এর কদর বেশি। তবে স্থানীয় বাজারে জাম্বুরার দাম কম হলেও পরিবহন খরচ বেশি।’
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর মাটিরাঙ্গায় ৫৪ হেক্টর জমিতে জাম্বুরার চাষ হয়েছে। ফলন হয়েছে ৬৯০ টন। গত বছর একই পরিমাণ জমিতে জাম্বুরা উৎপাদন হয়েছিল ৬০০ টন।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সবুজ আলী বলেন, ‘চারা রোপণের পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে জাম্বুরার ফলন পাওয়া যায়। ফাল্গুন মাসে গাছে মুকুল আসে। ভাদ্র থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত ফলন তোলা হয়। প্রতিটি গাছের গড় আয়ু ৩০-৫০ বছর হওয়ায় ফলন পাওয়া যায় দীর্ঘদিন। পাহাড়ি অঞ্চলের ঢালু পাহাড়ে জাম্বুরার ফলন বেশ ভালো হয়। তবে মৌসুমি ফল হলেও এটি সংরক্ষণে ব্যবস্থা না থাকায় দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।’
মন্তব্য করুন