নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির পরিচিতি সভায় দফায় দফায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এ সময় ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। সম্মেলনের প্রায় দুই বছর পর গঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির পরিচিতি সভা চলাকালে মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) বড়াইগ্রাম পৌরসভা মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে।
সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী গোপনে কমিটি গঠন করেছে বলে অভিযোগ উঠলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় এমপি ও অতিথিদের সামনেই নেতাকর্মীরা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে।
পরে সভাকক্ষে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরবর্তীতে মিলনায়তন থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বের করে দিয়ে সভা সম্পন্ন করা হয়।
এর আগে দুপুরে পৌর মিলনায়তনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস মিয়াজীর সভাপতিত্বে সভা শুরু হয়। শুরুতেই সভাপতির বক্তৃতাকালে সম্প্রতি উপনির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি তোলেন।
তিনি বলেন, ‘কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া চিহ্নিত জামায়াত-বিএনপির লোকজনকে এ কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে।
এ সময় নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে উঠে এবং সংসদ সদস্যের দাবির পক্ষে ও বিপক্ষে তারা হৈচৈ করতে থাকে। এক পর্যায়ে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এরপর পুনরায় সভা শুরু হলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম।
প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার ও শাহজাহান কবীর, যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ মুর্ত্তজা আলী বাবলু, বনপাড়া ও বড়াইগ্রাম পৌর মেয়র যথাক্রমে কেএম জাকির হোসেন ও মাজেদুল বারী নয়ন, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা ও মোয়াজ্জেম হোসেন বাবলু বক্তব্য রাখেন।
পরে প্রধান অতিথি ৭১ সদস্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও ২১ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন এবং ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।
এ ব্যাপারে ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে কমিটির মাত্র পাঁচজন সদস্যের নাম ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের সঙ্গে আলোচনা করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কথা বলেছিলেন। কিন্তু তা না করে সভাপতি-সম্পাদক গোপনে কমিটি করেছেন। তা ছাড়া কমিটিতে জামায়াত-বিএনপির লোককে জায়গা দেওয়া হয়েছে। তাদের এ কমিটি পকেট কমিটি।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস মিয়াজী বলেন, ‘সংসদ সদস্যের দাবি সঠিক নয়। নিয়মতান্ত্রিকভাবে আলোচনার মাধ্যমেই কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া জামায়াত-বিএনপির লোকজন নিয়ে কমিটি করার একটি প্রমাণও তিনি দিতে পারবেন না।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, ‘যদি কমিটি নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে জেলা আওয়ামী লীগকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু সেই অজুহাতে দলের ভেতরে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে সেটা সহ্য করা হবে না।’
মন্তব্য করুন