মুহাম্মদ আশরাফুল হক ভূঞা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:২৮ এএম
অনলাইন সংস্করণ

গরু দিয়ে হালচাষ তেমন দেখা যায় না আর

কেন্দুয়ার গন্ডা ইউনিয়নের একটি মাঠে গরু দিয়ে হালচাষ করছেন কৃষক কল্যাণ মিয়া। ছবি : কালবেলা
কেন্দুয়ার গন্ডা ইউনিয়নের একটি মাঠে গরু দিয়ে হালচাষ করছেন কৃষক কল্যাণ মিয়া। ছবি : কালবেলা

নেত্রকোনার অন্যতম বৃহত্তর উপজেলা কেন্দুয়ায় বিলীন হওয়ার পথে গরু দিয়ে হালচাষ। জমি চাষের ঐতিহ্যবাহী একটি চিরায়ত পদ্ধতি গরু-মহিষ, জোয়াল, লাঙল ও মই দিয়ে জমি চাষ। এটি ছিল অনেক উপকারী এক পদ্ধতি। কেননা, লাঙলের ফলা জমির অনেক গভীর অংশ পর্যন্ত আলগা করতো। গরুর পায়ের কারণে জমিতে অনেক কাদা হতো এবং গরুর গোবর জমিতে পড়ে জমির উর্বরতা শক্তি অনেক বৃদ্ধি করত।

এক সময় গ্রামবাংলার স্বাভাবিক চিত্র ছিল গরু দিয়ে হাল চাষ। আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ গরুর হাল বিলীন হওয়ার পথে। হালচাষের পরিবর্তে এখন ট্রাক্টর অথবা পাওয়ার টিলার দিয়ে অল্প সময়ে জমি চাষ করা হয়। অথচ দুই যুগ আগেও নিজের সামান্য জমির পাশাপাশি অন্যের জমিতে হালচাষ করে তাদের সংসারের ব্যয়ভার বহন করত। হালের গরু দিয়ে দরিদ্র মানুষ জমি চাষ করে ফিরে পেত তাদের পরিবারের সচ্ছলতা।

আগে দেখা যেত কাক ডাকা ভোরে কৃষক গরু, মহিষ, লাঙল, জোয়াল নিয়ে মাঠে বেরিয়ে পড়ত। এখন আর চোখে পড়ে না সে দৃশ্য। জমি চাষের প্রয়োজন হলেই অল্প সময়ের মধ্যেই পাওয়ার টিলারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চালাচ্ছে জমি চাষাবাদ। তাই গরু, মহিষ, লাঙল, জোয়াল ও মই নিয়ে জমিতে হাল চাষ করা এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।

উপজেলার গন্ডা ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া কল্যাণ মিয়া (৫০) নামের একজন কৃষক জমিতে গরু দিয়ে হালচাষ করছেন। সঙ্গে হালচাষ করছেন তার ছেলে রাহুল মিয়া (২৫)। তারা জানান, ছোটবেলা থেকে হাল চাষের কাজ করে আসছি। হালচাষের জন্য দরকার এক জোড়া গরু, কাঠ আর লোহার সমন্বয়ে তৈরি লাঙল, জোয়াল, মই, পান্টি ও গরুর মুখের লাগাম ইত্যাদি। গরু দিয়ে হাল চাষ করলে জমিতে ঘাস কম হয়, ফসল ভালো হয়, জমির উর্বরতা বাড়ে।

চিরাং ইউনিয়নের কৃষক আজহারুল ইসলাম বলেন, অনেকের জীবনের সিংহভাগ সময় কেটেছে চাষের লাঙল জোয়াল আর গরুর পালের সঙ্গে। গরু দিয়ে হালচাষ করলে জমিতে ঘাস কম হতো, হালচাষ করার সময় গরুর গোবর সেই জমিতেই পড়ত। এতে করে জমিতে অনেক জৈব সার হতো, এ জন্য ফসলও ভালো হতো।

একই এলাকার কৃষক আলী হোসেন মিয়া বলেন, জীবনের সিংহভাগ সময় কেটেছে আমার লাঙল-জোয়াল আর গরুর পালের সঙ্গে। বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা মেশিন দিয়ে হাল চাষ করি। আগে গরু দিয়ে হাল চাষ করতাম।

শিক্ষক এনামুল হক জানান, কৃষিকাজে লাঙলের ব্যবহার পরিবেশবান্ধব এবং গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যও বটে। কষ্ট হলেও গরু দিয়ে হাল চাষ করতে খুব ভালো লাগতো। বেঁচে যেত অনেক দরিদ্র কৃষকের প্রাণ। এখন মনে পড়লেই অনেক কষ্ট লাগে। ফিরে পাবনা আর সেই পুরনো দিনগুলো। এভাবেই ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য।

জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, কৃষিতে শ্রমিকের ঘাটতি নিরসনে এবং দেশের কৃষি ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করার জন্যই কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করা হয়েছে। এক সময় গরু ও লাঙ্গল দিয়ে হালচাষ করানো হলেও এখন প্রায় অধিকাংশ কার্যক্রম যন্ত্রের মাধ্যমে করা হচ্ছে। কৃষকদের জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে ধান প্যাকেটজাত করণের সকল কাজই অত্যাধুনিক কৃষি যন্ত্রের মাধ্যমে সহজ ও দ্রততার সঙ্গে হচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমাদের সিনেমা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবস্থান তৈরি করছে: মেহজাবীন

দেশে অর্থনীতির করুণ অবস্থা চলছে : রিজভী 

নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় ছুরিকাঘাতে বৃদ্ধ খুন

আসামিদের টাকা ‘লুটের’ অভিযোগ পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে

যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনার মধ্যেই মালয়েশিয়ায় রুবিও-ওয়াং ই বৈঠক

সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে দেশে দুর্ভিক্ষ হয় কি না, এটা এখন মানুষের মনে মনে : রিজভী

তারেক রহমান এ দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন : ড. ফরহাদ

নেইমার ম্যাজিক! নতুন হেয়ারস্টাইলে ফিরেই গোল আর অ্যাসিস্ট

সমুদ্রের মাঝে প্রশান্তি খুঁজে পাই: ববি

এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৪০ টাকার কাঁচামরিচ ২৪০

১০

ফরিদা পারভীনের খোঁজ নিলেন খালেদা জিয়া

১১

দুর্নীতির অভিযোগে বিচার হবে সাবেক এই প্রেসিডেন্টের

১২

মুল্ডারের সেই ইনিংস নিয়ে লারার চমকপ্রদ প্রতিক্রিয়া

১৩

দুবাইকে ম্যাচ জিতিয়ে যা বললেন সাকিব

১৪

কাঁচামরিচের কেজি ৩০০ টাকা ছুঁইছুঁই

১৫

ভারতে বাবার গুলিতে টেনিস তারকা নিহত

১৬

এখনই বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন

১৭

ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ২ কোটি ডলারের ক্ষতিপূরণ দাবি

১৮

সন্ধ্যার মধ্যে ৬ জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস

১৯

শিল্পার সৌন্দর্যের গোপন রহস্য ফাঁস করলেন সঞ্জয়

২০
X