বগুড়া ব্যুরো ও ধুনট প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:১৭ পিএম
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৫২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

চিকিৎসার অভাবে মারা যাওয়া বাবার তিন সন্তানের মেডিকেলে চান্স

(বা থেকে) রাফিউল হাসান, সাফিউল হাসান ও মাফিউল হাসান। ছবি : কালবেলা
(বা থেকে) রাফিউল হাসান, সাফিউল হাসান ও মাফিউল হাসান। ছবি : কালবেলা

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় প্রত্যন্ত গ্রামের তিন জমজ ভাই মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এদের মধ্যে এক ভাই গত বছর, অপর দুই ভাই এবার চান্স পান। অথচ একটা সময় তাদের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভালো চিকিৎসার অভাবে মারা যান।

তারা ধুনট নবির উদ্দিন পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও পরে বগুড়া সরকারি কলেজ শাহ সুলতান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন।

তিন জমজ ভাইয়ের মধ্যে মাফিউল হাসান ২০২৩ সালে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে এবং এবার সাফিউল হাসান দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে, রাফিউল হাসান নোয়াখালী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

ধুনট নবির উদ্দিন পাইলট হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন জানান, সোমবার তিন ভাই একসঙ্গে স্কুলে আসে। শিক্ষকদের কাছ থেকে দোয়া চায়। আমরা তাদের জন্য দোয়া করি। তারা মিষ্টি নিয়ে এসেছিল। ওদের মেডিকেলে সুযোগ পাওয়া আমাদের স্কুলের গৌরব ও সুনামের।

সরকারি শাহ সুলতান কলেজের অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম বলেন, শুনেছি তিন জমজ ভাইয়ের মধ্যে গতবার একজন এবং এবার দুজন মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। ওদের জন্য দোয়া ও শুভকামনা রইল।

তাদের মা আর্জিনা বেগম বলেন, ২০০৯ সালে ওদের বাবা গোলাম মোস্তফা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তখন ওদের বয়স ৫ মাস। বাবার স্নেহ মমতা কিছুই পাইনি ওরা। একপর্যায়ে তিন সন্তানকে পড়ালেখা করানো নিয়ে অনেক বিপাকে পড়ি।

তিনি বলেন, নিজে কষ্ট করে জমি বিক্রি করে ওদের পড়ালেখা করিয়েছি। প্রায় ৫ বিঘা জমি ছিল। বাবার বাড়ির জমিও বিক্রি করে ওদের পিছে লাগিয়েছি। বাকি যা আছে তাও প্রয়োজনে বিক্রি করব। তবুও ওদের ডাক্তার বানাব। যাতে আমাদের মতো গরিব মানুষদের সেবা করতে পারে। আমি কত খুশি হয়েছি প্রকাশ করতে পারব না। গ্রামের লোকজন ওদের যখন দেখতে আসে তখন বুক ভরে যায়।

গত শিক্ষাবর্ষে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া মাফিউল হাসান বলেন, ‘আমরা তিন জমজ ভাই বগুড়ায় মেসে একই সঙ্গে থেকে সরকারি শাহ সুলতান কলেজে পড়েছি। মা, কষ্ট করে এবং জমি বিক্রি করে পড়ালেখা করিয়েছেন। কখনোই আমাদের কষ্ট করতে দেয়নি।’

তিনি বলেন, ‘বথুয়াবাড়ি গ্রামের মধ্যে আমরাই প্রথম মেডিকেলে চান্স পেয়েছি। এর আগে আর কেউ সুযোগ পায়নি। খুবই ভালো লাগছে আমরা তিন ভাই ডাক্তার হব।’

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়া শাফিউল বলেন, আজ বাবা থাকলে কত খুশি হতো। বাবাকে হারিয়েছি শিশুকালে। এখন মা আমাদের বাবার অভাব পূরণ করেছেন। মানুষের সেবা করার জন্য যাতে চিকিৎসক হতে পারি সবার কাছে এ দোয়া চাই।

নোয়াখালী মেডিকেল কলেজে সুযোগ পাওয়া রাফিউল ইসলাম জানান, অসুস্থ অবস্থায় বাবা মারা যায়। যখন বিষয়টি জানতে পারলাম তখন থেকেই তিন ভাই ডাক্তারি পড়ার প্রতিজ্ঞা করি। গরিব মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা করব। বাবার মতো যেন কাউকে অকালে ঝরে পড়তে না হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ছুটি পেয়ে বাড়ি ফেরার ট্রেনেই সন্তান প্রসব নারীর 

ব্লকেড নিয়ে নতুন বার্তা হাসনাতের

পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে ভারতের কর্মকর্তা নিহত

১৬ কারিগরি প্রতিষ্ঠানে নাম বদল, বাদ পড়লেন শেখ হাসিনা ও স্বজনরা

ঢাকার বাতাসও আজও ‘অস্বাস্থ্যকর’ 

নবীনগরে অটোরিকশা-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ৩

ভারতে হামলা করা ড্রোন তুরস্কের তৈরি, এরদোয়ানের দিকে অভিযোগের তীর

আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এক্সপ্রেসওয়ে ৫ ঘণ্টা ব্লকেড, চরম ভোগান্তি 

ভারতে শক্তিশালী ফাতাহ-১ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে পাকিস্তান

পাকিস্তানি হামলার পরপরই সংবাদ সম্মেলন স্থগিত ভারতীয় বাহিনীর

১০

ভারত-পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র : কার জোর কতটুকু

১১

পরিত্যক্ত বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ, গ্রেপ্তার ৩

১২

জুলাই যোদ্ধাদের তালিকায় আ.লীগ নেত্রীর মেয়ে, প্রতিবাদ করায় কুপিয়ে জখম

১৩

কেঁপে উঠল পাকিস্তান / তিন বিমানঘাঁটিতে বিস্ফোরণ, বন্ধ আকাশপথ

১৪

আজ যেমন থাকবে ঢাকার আবহাওয়া

১৫

ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশায় থাকা মা-মেয়ে নিহত

১৬

১০ মে : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৭

ভারতে পাল্টা হামলা শুরু করেছে পাকিস্তান

১৮

শনিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১৯

১০ মে : আজকের নামাজের সময়সূচি

২০
X