সিলেট প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৪০ এএম
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০১:১৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ভিটেমাটি বেদখল, মন্দিরের জমিতে থাকেন এমপি মনোনয়ন পাওয়া রুমা

সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনীত সিলেটের রুমা চক্রবর্তী। ছবি : কালবেলা
সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনীত সিলেটের রুমা চক্রবর্তী। ছবি : কালবেলা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসনে সিলেট বিভাগ থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন সিলেটের রুমা চক্রবর্তী।

দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চূড়ান্ত হওয়া ৪৮ জন নারীর নাম ঘোষণা করেন। সব জল্পনা কল্পনার পর সিলেট থেকে দলটির মনোনয়ন পেয়েছেন বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রুমা রায় চৌধুরী (রুমা চক্রবর্তী)।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংরক্ষিত আসনে মনোনয়নপত্র বিক্রি করে আ.লীগ। তিন দিনে মোট ১৫৪৯ ফরম বিক্রি করেছে দলটি, যা থেকে আয় হয়েছে ৭ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। মূলত জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ৫০টি। একেকটি রাজনৈতিক দল ছয়টি আসনের বিপরীতে একটি করে সংরক্ষিত নারী আসন পান। এ হিসেবে নিজেদের এবং স্বতন্ত্রদের সমর্থন পাওয়ায় আ.লীগ পাবে মোট ৪৮ আসন।

একনজরে রুমা চক্রবর্তী

সিলেট জেলার বিশ্বনাথ থানার কালিগঞ্জের মৌজপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন রুমা চক্রবর্তী। বাবা রবীন্দ্র রায় চৌধুরী ও মাতা সরুজু বালা রায় চৌধুরীর পাঁচ কন্যার মধ্যে চতুর্থ। বাবা বরীন্দ্র রায় চৌধুরী সিলেট পৌরসভায় ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত (আমৃত্যু) এমবি ডাক্তার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অবিভক্ত ভারতে কাকা (চাচা) গিরিন্দ্র রায় চৌধুরী নেতাজী সুভাস চন্দ্র বসুর ফরওয়ার্ড ব্লকে যোগদান করেন। গোপন বিপ্লবী আন্দলনের সাথে যুক্ত থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি নিখোঁজ হন।

রুমা চক্রবর্তী একাত্তরে স্কুল ছাত্রী ছিলেন। দেশের টানে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেন তিনি। এ ছাড়া আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য আগে থেকেই নিজেকে তৈরি করেন এই সাহসী নারী।

বিয়ের পর থেকে তিনি রুমা চক্রবর্তী হিসেবে পরিচিত। বাবা রবীন্দ্র রায় চৌধুরী এবং মা সরজ বালা চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন রুমা রায়। তিনি ঢাকায় বড় বোনের বাসায় থেকে পড়াশোনা করার কারণে তৎকালীন আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

রুমা মিরপুর হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার প্রশিক্ষণ নেন। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে ঢাকা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়েও নার্সিং প্রশিক্ষণ নিয়ে সহকারী সেবিকা হিসেবে কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে এবং বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কাঠের বন্দুক নিয়ে প্রশিক্ষণ নেন কিশোরী রুমা রায়।

স্বামীর ভিটামাটি বেদখল, থাকেন পতিত জমিতে

রুমা চক্রবর্তী সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনে অপরিচিত মুখ। রুমা চক্রবর্তী তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন। তিনি ১৯৯৭ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৯ নম্বর মুল্লাপুর ইউনিয়ন থেকে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর পর্যায়ক্রমে পৌরসভার কমিশনার, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সংসদ সদস্যের এ মনোনয়ন জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার সর্বোচ্চ প্রাপ্তি।

রুমার একটি বড় অপ্রাপ্তি নিজের স্বামীর ভিটাবাড়ি বেদখল হওয়া। তিনি বলেন, ভিটাবাড়ি বেদখল থাকায় মন্দিরের পতিত জমিতে ঘর বানিয়ে অনেকটা আশ্রিত জীবনযাপন করছি।

তিনি বলেন, অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার মতো তৃণমূলের একজন কর্মীকে জাতীয় সংসদে স্থান দিয়েছেন, এটাই আমার কাছে জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।

ঘর হারানোর প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় আমাদের সম্পত্তি একজন দখল করে নিয়ে যান। ভুয়া দলিল করে দখলদার ওই ব্যক্তি বলছেন, আমার শ্বশুর বিক্রি করেছেন। কিন্তু আমার শ্বশুর বলেছেন বিক্রি করেননি। এটা নিয়ে সমস্যা চলছে। আমরা এখন একটি মন্দিরের পতিত জায়গায় ঘর বানিয়ে থাকছি। আমার নিজস্ব কোনো সম্পত্তি নেই। মুক্তিযুদ্ধের ভাতা পাই ২০ হাজার টাকা।

রুমা তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, এখন আমার পরিকল্পনা হলো স্থানীয় যারা গরিব আছেন, তাদের স্বাবলম্বী করা। পাশাপাশি এখন যেহেতু পুরো বিভাগ নিয়ে কাজ করতে হবে, তাই আমার পরিকল্পনা হচ্ছে অবহেলিত নারী যারা আছেন তাদের নিয়ে কাজ করা। নারীরা যেন শিক্ষিত হয়ে চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায়, সে বিষয়ে কাজ করব।

রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক কাজেও রুমার সরব বিচরণ রয়েছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক কাজের জন্য রুমা চৌধুরী বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন। উপজেলা পর্যায়ে জয়িতা, নারী উদ্যোগ কেন্দ্র (নউক) কর্তৃক ‘স্থানীয় সরকারে নারী অধিকার ও প্রতিনিধিত্ব শক্তিশালীকরণ প্রকল্প’ পদক পেয়েছেন। এ ছাড়াও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ থেকে সম্মাননাপত্রসহ স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পটকা ফুটানো নিয়ে রাতে সংঘর্ষে জড়াল দুই মহল্লার বাসিন্দারা

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ যা জানা গেল

কনটেন্ট ক্রিয়েটর আল-আমিনের সর্বশেষ অবস্থা

বিজয়ের মাস উদযাপনে ঢাবি প্রশাসনের উদাসীনতার অভিযোগ জাতীয় ছাত্রশক্তির

গুজবে কান না দিয়ে খালেদা জিয়ার সুস্থতায় দোয়া করুন : ইশরাক

শেরপুর জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মনি গ্রেপ্তার

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় ফরিদপুরে কর্মসূচি

এখনো ‘ট্রাভেল পাস’ চাননি তারেক রহমান : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রাবির তিন শিক্ষক বরখাস্ত, ছাত্রত্ব বাতিল দুই শিক্ষার্থীর

‘চশমা’ প্রতীকে নির্বাচন করবে আট দলের শরিক জাগপা

১০

মানুষের অধিকারের প্রশ্নে খালেদা জিয়া সব সময় আপসহীন : মাসুদুজ্জামান

১১

খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় সৌদি আরব পশ্চিমাঞ্চল বিএনপির ওমরাহ পালন

১২

সেঞ্চুরিও বাঁচাতে পারল না ভারতকে, সমতায় সিরিজ

১৩

মাদকাসক্ত ছেলের আগুনে পুড়ল বসতঘর

১৪

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় হাসপাতালে চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল

১৫

মাদ্রাসাছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু

১৬

শরীয়তপুরে খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় মিলাদ ও দোয়া

১৭

পে-স্কেল নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের যে দাবি

১৮

সন্তানহারা মা কুকুরটিকে দেওয়া হলো দুটি নতুন ছানা

১৯

সালাউদ্দিনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি বিসিবি, থাকছেন জাতীয় দলের সাথেই

২০
X