লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৯ প্রার্থী নিয়ে সমঝোতা বৈঠকে বসেছেন। এর মধ্যে পাঁচজন চেয়ারম্যান ও ৪ জন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী। এসব প্রার্থীর কাগজে সই নিয়ে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছেন তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দেওয়ান বাচ্চু ৩ কোটি টাকা ব্যয় করবেন জানালে তাকে একক প্রার্থী ঘোষণা করেন সংসদ সদস্য।
এর আগে রোববার (১৪ এপ্রিল) রাতে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে এ বৈঠক করেন সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খান।
এ নিয়ে সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের বড় ভাই চেয়ারম্যান প্রার্থী আখতার হোসেন খান নির্বাচনে এমপির হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন। এ নিয়ে একাধিক প্রার্থী ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন।
সমঝোতা বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা জানিয়েছেন, একক প্রার্থী করার স্বার্থে এমপি সেখানে উপস্থিত ৯ প্রার্থীর কাছ থেকে কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন। পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলাল আহমেদসহ ছয় নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর সেখানে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বক্তব্য শোনা হয়। নির্বাচনে ৩ কোটি টাকা খরচ করবেন জানালে দেলোয়ার হোসেন দেওয়ান বাচ্চুকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত হয়। এ সময় ভাইস চেয়ারম্যান পদে সোহেল রানা ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সুরাইয়া আক্তার শিউলির নাম ঘোষণা দেয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ার খান রোববার সন্ধ্যায় ডাকবাংলোতে দলের সিনিয়র নেতা ও উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের ডাকেন। এতে বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা জড়ো হন। রাত ৮টার দিকে এমপি সেখানে আসেন। একক প্রার্থী করার জন্য এমপি সেখানে উপস্থিত ৯ প্রার্থীর কাছ থেকে অলিখিত কাগজে সই নেন।
একপর্যায়ে যারা প্রার্থী নন এমন ছয় নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে তিনি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা একে একে প্রার্থীদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা নিয়ে কথা বলেন। কে কত টাকা ব্যয় করতে পারবেন তা নিয়ে চলে আলোচনা। পরে চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দেওয়ান বাচ্চু ৩ কোটি টাকা ব্যয় করবেন জানালে তাকে একক প্রার্থী ঘোষণা করা হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন চেয়ারম্যান প্রার্থী আ ক ম রুহুল আমিন, শহিদ উল্যা, নুরুল ইসলাম, তাহসান আহমেদ রাসেল। ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রাকিবুল হাসান মাসুদ, মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া সুমন, সোহেল রানা ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুরাইয়া আক্তার শিউলি। রাত ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত চলে এ সভা। তবে সভায় চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমতিয়াজ আরাফাতকে ডাকা হয়নি।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল বলেন, এমপি অলিখিত কাগজে আমাদের পাঁচ চেয়ারম্যান প্রার্থীর সই নিয়েছেন। এটি দলীয় নির্বাচনী নির্দেশনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। নির্বাচন করলে কত টাকা খরচ করতে পারব তারা জানতে চাইলে আমি দেড় কোটি টাকা বলেছি।
আনোয়ার খান এমপির বড় ভাই মো. আখতার হোসেন খান বলেন, এমপি নির্বাচনের প্রার্থিতা নিয়ে হস্তক্ষেপ করছেন। আমিও তাকে সতর্ক করে দিয়েছি। তার লোকজনের হুমকির মুখে আমি এলাকায় যেতে পারছি না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান মাসুদ বলেন, বৈঠকে তিন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর সই নেওয়া হয়েছে। সেখানে নির্বাচন থেকে বিরত থাকার জন্য বুঝিয়ে আমাকে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য বলেছেন। আমি প্রত্যাখ্যান করেছি। সাবেক তিন ছাত্রনেতা প্রার্থী থাকার পরও তিনি পদবিহীন টাকাওয়ালা একজনকে সমর্থন দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র তিন নেতা জানান, দল নির্বাচন সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এমপি নির্বাচনে নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে তিনি টাকার বিনিময়ে একক প্রার্থী ঘোষণা করছেন। এতে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের মোবাইল ফোনে কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়। তবে এমপির স্থানীয় সমন্বয়কারী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলাল আহমেদ বলেন, নির্বাচনে কার কী অবস্থান, কার আর্থিক কী অবস্থা, প্রার্থীদের সক্ষমতাকে নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রাথমিক অলোচনা হয়েছে। এটি দলের আনুষ্ঠানিক কোনো সভা ছিল না। নিজেদের মধ্যে ঘরোয়া আলোচনা হয়েছে। কাউকে চাপিয়ে দেওয়া বা বাধ্য করা হয়নি।
লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু (এমপি) বলেন, চেয়ারম্যান পদের দাম তিন কোটি টাকা উঠেছে রামগঞ্জের কয়েকজন আমাকে জানিয়েছেন। এবার একক প্রার্থী ঘোষণা, সমর্থন দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আনোয়ার খান দলের নির্দেশনা ভঙ্গ করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের বিষয়টি জানাব।
মন্তব্য করুন