সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা গোটা দেশকে কাঁদিয়েছে। বিশেষ করে এই ঘটনায় প্রাণ হারানো শিশুদের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শোবিজ অঙ্গনের তারকারাও গভীরভাবে মর্মাহত হন। তাদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান।
এক আবেগঘন ফেসবুক পোস্টে তিনি দুর্ঘটনায় নিহত শিশুদের জন্য তার দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তার ভাষায়, ‘বাচ্চাগুলোর জন্য বুক ফেটে যাচ্ছিল। একেকটা বাচ্চার মিসিং পোস্ট দেখেছি আর দোয়া করেছি যেন ওরা বেঁচে ফেরে।’ শিক্ষিকা হিসেবে তার পুরোনো অভিজ্ঞতা টেনে তিনি বলেন, ‘শিশুদের সরলতা, নিষ্পাপ হাসি—সব আজ নিস্তব্ধ। যারা পাখি হয়ে উড়ে গেছে, তারা আল্লাহর কাছেই ভালো থাকবে, আদরে থাকবে, যত্নে থাকবে।’
এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর দুর্বলতা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করে লেখেন, ‘এই দেশের সিস্টেম কখনো ঠিক ছিল না, হবেও না। রাজনীতির জন্য কেউ যা খুশি তা-ই করতে পারে। মানুষের জীবনের কোনো দাম নেই এখানে।’
দুর্ঘটনার দিন হাসপাতালে ভিড় করা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ‘শো ডাউন’ নিয়েও সরাসরি ক্ষোভ ঝেড়েছেন সাদিয়া। তার ভাষায়, ‘পোড়া শরীর নিয়ে রোগীরা হাসপাতালে পড়ে, পরিবারগুলো প্রিয়জনকে খুঁজে পাচ্ছে না, অথচ কেউ কেউ ২০ জন লোক নিয়ে শো ডাউন করতে এসেছে! সামনে ভোট, তাই এখনই নিজেদের দেখানোর সময় বুঝি!’
এ ছাড়াও, চিকিৎসা ও উদ্ধারকাজ চলাকালে কিছু সাধারণ মানুষের সুযোগসন্ধানী আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এই অভিনেত্রী। ‘রিকশাওয়ালা, সিএনজিচালক, দোকানদার—সবাই যেন একেকজন জল্লাদ হয়ে উঠেছে,’ মন্তব্য করেন তিনি।
সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয় ছিল নিহতের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ। তিনি লেখেন, ‘২২ জনের নিহতের খবর দেয়া হয়েছে। এটা কি কোনোভাবেই সত্যি মনে হয়? এখনো অনেক পরিবার সন্তানদের খুঁজে পাচ্ছে না। সেই হিসাব কে দেবে? কার কাছে বিচার চাইবে মানুষ?’
সরকারি সাহায্য নিয়ে প্রকাশিত পোস্ট (যা পরে মুছে ফেলা হয়) নিয়েও সরাসরি মন্তব্য করেন সাদিয়া। ‘পরিবারগুলো অর্থ চায় না, তারা তাদের সন্তান চায়। অর্থ দিয়ে যদি সন্তানদের ফিরিয়ে দিতে পারেন, তাহলে আমরা আপনাদের তহবিলে দান করতে প্রস্তুত।’
তার বক্তব্যের শেষ দিকে আসে এক গভীর হতাশা: ‘বাংলাদেশের রাজনীতি কিংবা রাজনীতিবিদ—সবই এখন হাস্যকর হয়ে গেছে।’
সামাজিক মাধ্যমে এই পোস্ট ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেকেই তার বক্তব্যকে সাহসী ও বাস্তবমুখী বলে উল্লেখ করছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, এ ধরনের ব্যক্তিগত ক্ষোভের মাধ্যমে গণসচেতনতা গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।
মন্তব্য করুন